পানি নিয়ে মিথ
আম্মা গো পানি দাও ফেটে গেল ছাতি মা
যারা বিষাদ সিন্ধু পড়েছেন ফোরাত নদীর তীরে পিপাসার্ত ইমাম হাসান ও ইমাম হোসেনের পরিবার পিপাসার্ত অবস্থায় কেমন করে কাতরাছিলেন সে দৃশ্য তারা কল্পচোখে দেখতে পাচ্ছিলেন। একমাত্র সীমারই পারে পানিবঞ্চিত করে নারী ও শিশুকে হত্যা করতে। নিত্যদিনের কথায় চলে এসেছে এমনই সীমার যে মরার সময় মুখে একটু পানি তুলে দিল না।
সেই দৃশ্য ধারণ করেছেন কাজী নজরুল ইসলাম:
গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদে কচি মেয়ে ফাতিমা
আম্মাগো পানি দাও ফেটে গেল ছাতি মা!
নিয়ে তৃষ্ণা সাহারার দুনিয়ার হাহাকার
কারবালা প্রান্তরে কাদে বাছা আহা কার!
দাউ দাউ জ্বলে শিরে কারবালা ভাস্কর
কাদে বানু 'পানি দা, মরে যাদু আসগর
পেলো না তো পানি শিশু পিয়ে গেল কাঁচা খুন
ডাকে মাতা 'পানি দেবো ফিরে আয় বাছা শুন।
পৃথিবীর তিন ভাগই তো পানি, তারপরও স্যামুয়েল টেয়লর কোলরিজের 'দ্য রাইমস অব অ্যানশিয়েন্ট ম্যারিনার'-এ শোনা যায় পানিরই হাহাকার : 'ওয়াটার ওয়াটার এভরিহোয়ার ওয়াটার/ নট অ্যা সিঙ্গল ড্রপ টু ড্রিঙ্ক।
পান করার মতো একফোঁটা পানিও নেই। পানির অপর নাম জীবন, এটা শিখেই আমরা বেড়ে উঠেছি। কিন্তু কতোটুকু পানি?
মিথ
১. প্রতিদিন ৮ গ্লাস পানি খাবেন।
এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি কথা প্রাপ্তবয়স্ক প্রায় সকলেই দেশ, মহাদেশ নির্বিশেষে শুনেছেন। কিন্তু এর উৎস কি? কোন বৈজ্ঞানিক বা মনিষী এ কথা বলেছেন। পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কিডনি বিশেষজ্ঞ স্ট্যানলি গোল্ডফিশ বলেছেন, এ কথা কে বলেছেন কেউ জানেন না। তবে এই পরামর্শটি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। পানি পানকারীর হৃৎপিন্ড বা কিডনি যদি স্বাভাবিকভাবে কাজ না করে এতে কেজেসটিভ হার্ট ফেইলিওর, পালমোনারি ইডিমা বা ওয়াটার ইনটক্সিকেশন হতে পারে। ডাক্তার রজার অ্যাডামস বলেছেন, কারো কারো বেলায় ৮ গ্লাস অনেক বেশি, আবার কারো বেলায় অনেক কম। বিশেষ করে বিশালদেহী ও ঘামপ্রবণ মানুষের শরীরে পানির ভারসাম্য ধরে রাখতে আরো বেশি পানি পান করার প্রয়োজন হতে পারে।
২. ঘুম থেকে উঠে প্রথম কাজ পানি খাওয়া।
তৃষ্ণার্ত থাকলে পানি খেতেই পারেন। তৃষ্ণার্ত না থাকলে, না খেলে কোনো সমস্যা নেই। ডাক্তার হুয়াং বলছেন, মানুষের ধারণা ঘুমিয়ে যাবার সাত আট ঘন্টা সময় পানি গ্রহণ ছাড়া কাটিয়ে দেওয়া হয় শরীরে নিশ্চয়ই পানির অভাব ঘটে। ব্যাপারটা তা নয়। মূত্র একটা ধারনা দিতে পারে। যখন তা পরিষ্কার তার মানে হালকা, সমস্যা নেই, যখন ঘন তার মানে কিডনি তার প্রয়োজনীয় পানি সংরক্ষণ করে রেখেছে।
৩. নারিকেলের পানি পানিশূন্যতা কাটাতে সর্বোত্তম।
ভালো কিন্তু সবসময়ই ভালো নয়। সাধারণ পানিই সবচেয়ে ভালো। নারিকেলের পানি পটাশিয়াম সমৃদ্ধ। কাজেই কিডনি রোগীর জন্য অতিরিক্ত পটাশিয়াম বিপদজনক হতে পারে। পানি শরীরের জন্য অত্যাবশ্যকীয়, কিন্তু পানিকে ধারণ করার শক্তি শরীরের তো থাকতে হবে। একই ভাবে বাড়তি পটাশিয়াম সামাল দেবার ক্ষমতা জরুরী, নতুবা নারিকেলের পানি নয়। কিছুতেই নয়।
৪. বেশি বেশি পানি শরীরে জমিয়ে রাখা সম্ভব নয়।
বিশেষ করে তরুণ দৌড়বিদদের জন্য এটা ভালো পরামর্শ। বেশি পানি শরীরের সোডিয়ামের ঘনত্বকে কমিয়ে দেয়। হাইপোনেট্রিসিয়া নামের যে শারীরিক পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটবে তা মারাত্মক; তারপর খিঁচুনি এবং এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। বেশি পানি খেয়ে জমিয়ে রাখার উপায় নেই এটা সত্য, কিন্তু তা যে বিপদজনক এটাও কম সত্য নয়।
৫. পানি খেলেই সমস্যা কেটে যাবে।
কিছু সমস্যা অবশ্যই মিটবে। পানিই শরীরের অপসৃত তরলের ক্ষতি সবচেয়ে ভালো পুরণ করতে পারে। কিন্তু যখন উচ্চমাত্রার ইলেক্ট্রোলাইট শরীর থেকে বেরিয়ে যায়, পানিই যথেষ্ট প্রতিস্থাপক নয়।
৬. বাড়তি পানি পান ওজন কমায়।
পুরো সত্য নয়। বরং এভাবে বলা যায় যারা ডায়েটিং করেন তাদের জন্য পানি একটি ভালো অবলম্বন। পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাডেলিন ফার্নস্ট্রম বলেন, ভালো দিক হচ্ছে পানিতে ক্যালোরি যোগ হবে না; মাঝে মাঝে পানি খেলে মুখ ব্যস্ত থাকবে, খাওয়ার অনুভূতি লাভ করবে। তবে পানি ম্যাজিক কিছু দেখাতে পারবে না। পানির বদলে জিরো ক্যালরি সোডাও চলতে পারে।
৭. প্রচুর পানি শরীরের ভেতর দূষিত বিষাক্ত সব বের করে দেয়।
কিডনি বিষাক্ত সব ছেঁকে রেখে রক্ত সংবহনকে বিষমুক্ত রাখে। বিষাক্ত সব মূত্রের সাথে বেরিয়ে আসে। প্রতিদিন কিছু বাড়তি পানি পান কি কিডনির সক্ষমতা বাড়ায়? ডাক্তার গোল্ডফ্র্যাব বলেন, না আসলে বেশি মাত্রার পানি কিডনির ছাঁকনি হিসেবে কাজ করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এটাই ঘটে, কাজেই প্রস্তাবটি ঝুঁকিপূর্ণ।
৮. বাড়তি পানি ত্বককে সুরক্ষা দেয়
২০০ পাউন্ড ওজনের একটি মানুষের শরীরের ১২০ পাউন্ডই তো পানি। এর সাথে দুই এক গ্রাম যোগ করলে তার সামান্যই প্রভাব পড়বে। দেখা গেছে ৫০০ এমএল পানি বাড়লেই ত্বকের ক্যাপিলারি রক্ত প্রবাহ বেড়ে যায়- কিন্তু তা মঙ্গলজনক কিনা এখনো পরিষ্কার প্রমাণিত নয়।
৯. ক্যাফেইন শরীরের পানি কমিয়ে দেয়।
মোটেও সঠিক নয়, কফি খাবার সময় যে পরিমাণ পানি খাওয়া হয় তাতে ক্যাফেইনের ডিহাইড্রেশন পূরন করে আরো বেশি পানি রয়ে যায়। প্রচুর পরিমান ক্যাফেইন খাবার কী দরকার?
১০. মূত্রের রঙই ডিহাইড্রেশনের কথা বলে দেবে।
অনেকাংশেরই ভুল ধারনা। যদি মাল্টিভিটামিন খান, যদি হাইপ্রোটিন খাবার খান মূত্র ঘন ও গাঢ় হবে। রঙের দিকে তাকিয়ে না থেকে বরং পরিমাণের দিকে লক্ষ্য করুণ। স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে কম হলে রিহাইড্রেশনের দরকার হবে।
১১. বোতলজাত পানি বিশুদ্ধ ও নিরাপদ।
ধারণাটি পুরোপুরি ভুল। বোতল নিজেই পানিকে দূষিত করার জন্য যথেষ্ট, সেই সাথে কত কেমিক্যাল আর প্রিজাভেটিভ।
পানি খাওয়া নিয়ে যে সব মিথ আছে তা সিরিয়াসলি নেবার দরকার নেই, কী করতে হবে শরীর তার নিজস্ব ভাষায় বলে দেবে, সেই ভাষাটা বুঝতে হবে।
কিচ্ছু ভাল্লাগে না?
এক গ্লাস পানি
কিছু ভালো না লাগার একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে শরীরে পানির ঘাটতি হয়েছে। এক গ্লাস পানি গলায় ঢেলে দিন। কিছুক্ষণ পর আরও এক গ্লাস। দেখবেন কিছুটা হলেও ভলো লগছে। তারপর ভালো লাগাটা বাড়ছে।
এফ ব্যাটম্যাঙ্গেলিজের লেখাটির প্রশংসা না করলেই নয়-'ইউ আর নট সিক, ইউ আর থার্স্টি।' আপনি অসুস্থ নন, পিপাসার্ত। পানি খেতেই হবে-এক ডজন একটি উপসর্গ থেকে তাহলে মুক্তি।
ক্লান্তি ধরেছে? কিন্তু কারণটা কি?
এমন কোনও পরিশ্রমও করেননি, রোদ ছোটাছুটিও না? তাহলে ক্লান্তি কেন?-শরীরে পানির ঘাটতি পড়েছে। এটাই আসল কারণ। ক্লান্তি মানে এনার্জির ঘাটতি। এনার্জি মানে শক্তি। এনার্জির প্রধান উৎস পানি। প্রচুর এনার্জিযুক্ত খাবার খেলেন-কাজ হলো না। না হওয়ারই কথা। খাবারের শক্তিটাকে বের করে শরীরে ঢুকিয়ে দেবে কে? পানি। সুতরাং এক গ্লাস পানি খান। পানিই স্নায়ু সচল করবে। মস্তিষ্কের ইচ্ছা অনুযায়ী শরীর কাজ করবে।
নিওরোট্র্যান্সমিশন ও হাইড্রোইলেক্ট্রিসিটির জন্য পানির বিকল্প নেই।
হট ফ্লাশ হচ্ছে?
হঠাৎ গরম লাগছে? শরীরের ভেতর লু হাওয়া বইতে শুরু করছে? কারণ শরীর থেকে পানি বেরিয়ে গেছে। মস্তিস্ক তার প্রয়োজন মেটাতে প্রয়োজনীয় পানি টেনে নিতে পারছে না। প্রয়োজনীয় পানি পেতে রক্তনালীকে ডায়ালেটেড হওয়ার নির্দেশ দিচ্ছে- চলাচলের সুযোগ বেড়ে যাওয়ায় বেশি পরিমান রক্ত মুখমন্ডল ও মস্তিস্কে প্রবাহিত হচ্ছে। চোখ-মুখ, নাক বা কান সাধারণ অঙ্গের মতো নয়। এটা একটি গ্রাহক ডিশের মতো যেখানে অসংখ্য স্নায়ু। সংবেদনশীলতার বিচারে মুখমণ্ডল মস্তিস্কের একটা এক্সটেনশন। যখন মস্তিস্কে পানির প্রয়োজন বেড়ে যায়- বেশি রক্ত মুখমণ্ডল ও মস্তিস্কে সঞ্চালিত হয়। অ্যালকোহলিকদের লাল নাক ও লালচে মুখ দেখে থাকবেন- কারণ অ্যালকোহল পানি কমিয়ে দেয় (ডিহাইড্রেশন) মাথা ধরিয়ে দেয়। রক্তের সরবরাহ বাড়ায় হট ফ্লাশের কারণ। পানির জন্যই বাড়াতে হলো রক্ত সরবরাহ।
বিরক্তি লাগছে? মেজাজ খারাপ হচ্ছে?
অকারণেই মেজাজ খারাপ লাগছে। অসহ্য লাগছে সবকিছু। এমনকি মোনালিসার হাসিটাকেও মনে হচ্ছে ফাজলামো। চায়ের কাপটা ছুড়ে মারতে ইচ্ছে হচ্ছে। নিতান্ত আপজনদেরও মনে হচ্ছে কোথাকার কোন আপদ। এটাও পানির ঘাটতির লক্ষ্য। মস্তিস্ক তার দায়িত্ব নিতে চাচ্ছে না- এমনিতেই যথেষ্ট টায়ার্ড!
এ ধরণের হঠাৎ বিরক্ত, হঠাৎ বদমেজাজি হয়ে ওঠা কাউকে এক গ্লাস পানি দিন। এটা নিশ্চিত, পানি খাওয়ার পর দেখবেন তার বিরক্তি হ্রাস পাচ্ছে। এবং মেজাজ স্বাভাবিক হয়ে আসছে।
উদ্বিগ্ন হয়ে আছেন?
পানি ঘাটতি হয়েছে। মাস্তিষ্কের সামনের ভাগ এই খারাপ খবরটা দিতে চাচ্ছে। উদ্বেগের আরও কারণ থাকতে পারে- কিন্তু পানির অভাবটাই চোখে-মুখে ফুটে উঠছে। উদ্বেগের সময় কোক, পেপসি, স্প্রাইট ও সেভেনআপ অনেক কিছু খাওয়ালেন। কিন্তু উদ্বেগ তেমন কমল না-আসলে প্রকৃত প্রয়োজন মেটেনি। মস্তিষ্ক চেয়েছে স্রেফ পানি। তাই দিন।
বিমর্ষ বোধ করছেন?
শরীরের অনত্যম মূলধন সম্পদ হচ্ছে এমিনো অ্যাসিডের রিজার্ভ। এই সঞ্চয় শরীরের বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। তার মধ্যে রয়েছে নিউরোট্রান্সমিশনের উপাদান। নিউরোট্রান্সমিটার কমে যাওয়া মানে শরীরের সম্পদ কমে যাওয়া। সম্পদ কমে গেলে নিজেকে অসম্পূর্ণ মনে হবেই। শরীর থেকে পানি বেরিয়ে গেলে (ডিহাইড্রেশন) এমিনো অ্যাসিড কমবেই। আর এই অভাবই আপনাকে বিমর্ষ করে তুলবে।
বিষণ্নতায় ভুগছেন?
বিষণ্নতা শরীরে পানির অভাবের একটি জটিল পর্যায়। পানি এতটাই কমে গেছে যে, বিপাক ক্রিয়ার পর সৃষ্ট বিষাক্ত উপাদানগুলো কিডনিতে পরিবহন করে পর্যাপ্ত প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দেওয়া সম্ভব হয়নি। আর এই সঙ্কট থেকে উত্তরনের জন্য শরীর নিজস্ব গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ব্যবহার করে ফেলেছে। যার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের এমিনো অ্যাসিড-ট্রিপটোফ্যান, টাইরোসিন যা বিষাক্ত উপাদানকে প্রশমন করে।
সেরোটোনিন, মেলাটোনিন, ট্রিপটামাইন ও ইন্ডোলেমাইন তৈরিতে মস্তিষ্ক ট্রিপটোফ্যান ব্যবহার করে- এর সবই গুরুত্বপূর্ণ নিউরোট্রান্সমিটার যা শরীরের ভারসাম্য রক্ষা এবং কাজের সমন্বয় সাধন করে। এ সবের পরিমাণ কমে গেলেই শুরু হয় বিষণ্নতা।
এড্রোন্যালিন, নরঅ্যাড্রেন্যালিন এবং ডোপামিন তৈরিতে মস্তিষ্ক টাইরোসিন ব্যবহার করে থাকে। এগুলো হচ্ছে সঞ্চালক নিওরোট্রান্সমিটার। সুতরাং পানির অভাবে শেষ পর্যন্ত এমিনো অ্যাসিড ঘাটতি হলে সক্রিয়তা কমবে, মনের ভেতর কষ্টকর অবস্থা সৃষ্টি হবে-যার নাম বিষণ্নতা।
মাথা ভারী ভারী লাগছে?
তার মানে মস্তিষ্ক আরও বেশি পরিমাণ রক্ত সঞ্চালনের বার্তা পাঠাচ্ছে। কারণ পানিরও ঘাটতি হয়েছে। বাড়তি রক্তপ্রবাহের পরও যদি মস্তিষ্ক পানি না পায় তা হলেও তা মাইগ্রেনের ব্যথার মতো হয়ে উঠতে পারে। মস্তিষ্কের নিত্য কাজের পর যে বিষাক্ত বর্জ্য উৎপাদন করে পানির সরবরাহ কম থাকায় তা পরিস্কার হয়নি। সব মিলিয়ে মাথা ভার হয়ে আছে।
ঘুম ভেঙ্গে যাচ্ছে?
বিশেষ করে বয়স্কদের বেলায় ঘুমের ছন্দ ভেঙে যাওয়ার প্রধান কারণ শরীরে পানির সরবরাহ কমে যাওয়া। ঘুমের সময় শ্বসন ও ঘাম শরীরের অনেক পানি বের করে দেয়। পুরো চাদর-বালিশও ঘামে ভিজে যায়। শরীর পানির ভারসাম্য তো নষ্ট হবেই। এ অবস্থায় শরীর যদি পানি ও খানিকটা লবণ পায় তাহলে ঘুমের মূল ছন্দটি আবার ফিরে আসবে।
অধৈর্য হয়ে উঠছেন?
ধৈর্য ধরে রাখা মুশকিল হয়ে পড়ছে। ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। অথচ তা হওয়ার যুক্তিসঙ্গত কোনও কারণও খুঁজে পাচ্ছেন না। আপনার বন্ধু আসার কথা রাত ৮টায়, আপনি সাড়ে ৭টার সময়ই অধৈর্য হয়ে পড়লেন এখনও আসেনি কেন?
ধৈর্য ধরার ব্যাপারটাতে মস্তিষ্কের বাড়তি শক্তি ব্যবহার করতে হচ্ছে। যদি গুদামে পর্যাপ্ত এনার্জি না থাকে তাহেলে দ্রুত ধৈর্যহারা হবেন। মনে রাখতেই হবে একমাত্র পানিই তৈরি করে 'হাইড্রোইলেক্ট্রিক এনার্জি-যা ব্যয় হওয়া মাত্র পূরণ করা সম্ভব। খাবার থেকে যে শক্তি উৎপন্ন হয়, বিভিন্ন স্তর অতিক্রম করে একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে কোষে সঞ্চিত হয়। আর এই প্রক্রিয়াটি ঠিকমতো চালাতে হাইড্রোলাইসিসের মাধ্যমে খাদ্যকে শক্তিতে রূপান্তরিত করতে পানিরই প্রয়োজন হয়। সুতরাং অধৈর্য হওয়ার আগে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিন।
মনোযোগে ঘাটতি হচ্ছে?
পড়াতে মন দিতে পারছেন না? কাজে মন বসছে না? একটু পরপরই মনোযোগ বিচ্যুতি ঘটছে? বড় কারণ একটা-মস্তিষ্কে পানির উপস্থিতি কমে গেছে। সরবরাহ লাইন ঠিকমতো কাজ করছে না। পানির সরবরাহ বাড়িয়ে দিন। মনোযোগ সময়সীমা ক্রমেই বেড়ে যাবে। শিশুদের 'অ্যাটেনশন ডিজঅর্ডারের, একটি উল্লেখযোগ্য কারণ সোডা জাতীয় পানীয় গ্রহণ। এ ধরনের পানীয় ডিহাইড্রেশন বাড়িয়ে দেয়।
ঘন ঘন শ্বাস নিতে হচ্ছে?
ফুসফুসের কোনও রোগ বা ইনফেকশন নেই। তবুও শ্বাসের দৈর্ঘ্য কমে গেছে। ঘন ঘন শ্বাস নিতে হচ্ছে-কারণ পানির ঘাটতি পড়েছে।
সোডা, অ্যালকোহল, চা ও কফি পানের ইচ্ছা প্রবল হয়ে উঠছে?
তার মানে মস্তিষ্ক সিগন্যাল পাঠাচ্ছে তার পানির ঘাটতি পড়েছে। সোডা, অ্যালকোহল, চা, কফি সবই কমবেশি নেশা ধরায় আর সবই পানি বিয়োগ প্রক্রিয়াকে আরও বাড়িয়ে দেয়। সুতরাং আরও খেতে ইচ্ছা করে। কাজেই সিগন্যাল পাওয়ার আগেই প্রস্তুতি নিন। হাতের কাছে রাখুন এক গ্লাস পানি। শেষ হওয়া মাত্রই রিফিল করুন। পানির চেয়ে ভালো কোনও ড্রিঙ্ক আবিষ্কৃত হয়নি।
মানুষের শরীর হচ্ছে মন্দির, সেখানে স্রষ্টার আসন রয়েছে। কিন্তু অপবিত্রতা স্রষ্টাকে দূরে রাখে। তিনদিনের উপবাস শয়তান ক্লান্ত হয়ে সরে যায় এবং শরীরের ময়লা-আবর্জনাও দূরীভূত হয়।
গ্রিক দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক, চিকিৎসক ও জ্ঞানীজনের কাছে উপবাস ছিল একটি কাঙ্খিত জীবন প্রক্রিয়া-সক্রেটিস, প্লেটো, এরিস্টটল, হিপোক্রেটিস প্রমুখ উপবাস-থেরাপিতে বিশ্বাস করতেন এবং নিয়মিত উপবাস করতেন।
ডাক্তার কৌসেনের উপবাস ব্যাখ্যা অনেকটা ধর্মীয় ব্যাখ্যার কাছাকাছি উপবাস কেবল স্বেচ্ছায় খাদ্যগ্রহণ থেকে বিরত থাকা নয়, যা কিছু শরীর, মন ও আত্মাকে বিচলিত করে, উত্তেজিত করে সবকিছু থেকে নির্দিষ্ট সময় দূরে থাকা।
পাশ্চাত্যের লোকজন অধিক পরিমাণ টক্সিক দ্রব্য গ্রহণ করে বলে তাদেরই অধিকতর উপবাসী হওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
ডাক্তার হাস দেখিয়েছেন আধুনিকতার ফলে খাবারের বৈচিত্র্য শরীরকে আগের চেয়ে অনেক বেশি বিষাক্ত করে তুলেছে। শরীর 'বায়োকেমিক্যাল সাফোকেশনে' ভুগছে। কোষ প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পাচ্ছে না আগে ক্রমাগত সক্রিয়তার কারণে সঠিকভাবে কোষের বর্জ্য নিষ্কাশনও হচ্ছে না। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে উপবাসের কোনও বিকল্প নেই।
আধ্যাত্মিকতার প্রশ্ন এড়িয়েও পূর্বে সাধারণভাবে বলা যায় উপবাস শরীরের মঙ্গল সাধন করে বলেই সক্রেটিস, প্লেটো, এরিস্টটল প্রমুখ সানন্দে উপবাসকে গ্রহণ করেছেন। ধ্যানমগ্ন মুসা নবী পর্বতের গুহায় চল্লিশ দিন উপবাসে কাটিয়েছেন। যিশুখ্রিস্ট চল্লিশ দিন উপবাস করেছেন মুরুভূমিতে। প্রাচ্যের ঋষিদের জীবনাচরণের অংশই উপবাস। উপবাসের ধর্মীয় নির্দেশনা কল্যাণের লক্ষ্যেই।