ইবনে বতুতার ভারত ও বাংলা সফর
মুসলমানদের ইতিহাসচর্চা খুবই কম তাই ইসলামের ইতিহাস নিয়ে নির্ভরযোগ্য গ্রন্থের সংখ্যাও কম। মুসলিম পর্যটক, ইতিহাসবিদ ইবনে বতুতার দীর্ঘ বিশ্ব ভ্রমণের কাহিনী ইসলামের ইতিহাসে এজন্যই গুরুত্বপূর্ণ অবদান। তার সফরকৃত অঞ্চলগুলো বেশীরভাগই মুসলিম অধ্যুষিত ছিল। বিশ্বভ্রমণ নিয়ে তার রিহলা নামক বিখ্যাত গ্রন্থ ১৪শ শতকের পূর্ব, মধ্য এবং দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম সাম্রাজ্যের ইতিহাসের অন্যতম দলিল হিসেবে বিবেচিত হয়।
বতুতার ভ্রমণকাহিনী 'আর রিহলা' নামে সমধিক প্রসিদ্ধ। রিহলা অর্থ সফর। এ গ্রন্থের পুরো নাম তুহফাতুন-নাজ্জার ফি গারাইবিল আমসার ওয়া আজাইবিল আসফার, (আশ্চর্য সব শহর এবংবিচিত্র সফরের অভিজ্ঞতা, চিন্তাশীল সফরকারীদের জন্য উপহার)। ইবনে বতুতার ভ্রমণ কাহিনী সুলতান আবু ইনান আল মারিনির আদেশে মরক্কোর ফেজ নগরীতে ইবনু জুযাঈ আল কালবির হাতে রচিত হয়। গ্রন্থটি বিশ্বের বহু ভাষায় অনূদিত হয়েছে। পশ্চিমা বিশ্বের অনেক লেখক, চিন্তক ও গবেষক প্রাচ্যের ধর্মীয়, ভৌগলিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসের ক্ষেত্রে অন্যতম একটি উৎস হিসেবে বইটি থেকে উপকৃত হন।
আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ ইবনে বতুতার জন্ম ঈসায়ী ১৩০৪ সালে মরক্কোর তানজাহ নগরে। লাওয়াতা গোত্রের এক আলেম পরিবারে তার জন্ম। বাবার নাম আবদুল্লাহ বিন মুহাম্মদ। বতুতা নামটি তার মায়ের নাম ফাতুমা থেকে উদ্ভুত। মায়ের নামেই বিশ্বখ্যাত হন এই পর্যটক। ইবনে বতুতার বাবা আবদুল্লাহ ছিলেন কাজী বা বিচারক। শরীয়া আইনে স্থানীয় বিচার-কার্য পরিচালনা ছিল তার দায়িত্ব।
নিজ শহরে ধর্মীয়, ইতিহাস, ভূগোলে জ্ঞানার্জনের পর ২২ বছর বয়সে ১৩২৫ সালে তিনি হজের উদ্দেশে বের হন। মক্কা থেকেই তিনি বিশ্ব ভ্রমণে বের হন এবং দীর্ঘ তিন দশক সময়ে মরক্কো, আল জাজিরা, তিউনিসিয়া, তারাবলুস, মিসর অতপর ফিলিস্তিন, লেবানন, সিরিয়া, হিজায, তারপর ইরাক, ইরান, ইয়েমেন, আফ্রিকা, ওমান, বাহরাইন, হিন্দুস্তান, খুরাসান, তুরস্কসহ দুনিয়ার বহু অংশ ভ্রমণ করেন।
ভারত সফর
মুসলিম বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ অনেক শহর সফর করে ইবনে বতুতা হিন্দুকুশ পর্বতমালা পার হয়ে তিনি গজনি পৌছান।এরপর সমরখন্দ এবং খুরাসান সফর করে ১৩৩৩ সালে পাঞ্জাব নগরে পৌছান। পাঞ্জাব শহরে পৌছার সাথে সাথে ইবনে বতুতার আগমন বার্তা সিন্ধের রাজধানী মুলতানের গভর্নরের কাছে এবং দিল্লির বাদশা সুলতান মোহাম্মদ শাহ এর কাছে পাঠানো হয়। সিন্ধ থেকে দিল্লি ডাক পৌঁছাতে পাঁয়ে হেঁটে প্রায় পঞ্চাশ দিনের পথ, কিন্তু বাদশাহর গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ডাক দিল্লিতে মাত্র পাঁচ দিনেই পৌছে যেত সেসময়। বহিরাগত যে-ই হোক, সুলতানের তরফ থেকে তাকে ভারতে ঢুকতে দেওয়া হবে কি না, হলেও কোন শ্রেনীর মর্যাদা দেওয়া হবে সে ব্যাপারে দিল্লি থেকে সরকারি নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত তাকে সিন্ধের রাজধানী মুলতানে অপেক্ষা করতে হয়। সুলতান মুহাম্মাদ বিন তুঘলকের শাসনামলে বহিরাগতদের যোগ্যতা ও মর্যাদা অনুসারে বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেয়া হতো। এই বিদেশীদের সম্মানজনক উপাধি ছিল "আজিজ''। ইবনে বতুতাও এই সম্মান পান।
সিন্ধু থেকে দিল্লী আসার দীর্ঘ সফরে ভারতের তৎকালীন সমাজ প্রত্যক্ষ করেন বতুতা। যেমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বা সম্পদে বারবার মুগ্ধ হয়েছেন তেমনি কষ্ট পেয়েছেন সতীদাহের মতো অমানবিক প্রথায়। নারীদের এই আত্মাহুতি অবলোকন করেছেন খুব কাছে থেকে। বিদ্রোহী হিন্দু দস্যুদের সাথেও জড়িয়েছেন সংঘংর্ষে।
ইবনে বতুতার ভারত সফরের সময়ে দিল্লীর সুলতান ছিলেন মুহাম্মদ বিন তুঘলক। কুরআন, ফিকহ, কবিতা ও অন্যান্য ক্ষেত্রের বিস্তৃত জ্ঞানসম্পন্ন একজন বুদ্ধিজীবী। একই সাথে অত্যন্ত নিষ্ঠুর আবার ভীষণ উদার একজন সুলতান ছিলেন এই তুঘলক। বাংলায় "তুগলকি কান্ড" নামে যে বাগধারাটি প্রচলিত তার উৎপত্তি মূলত মুহাম্মদ বিন তুগলকের আজব কান্ড কারখানা থেকে। দিল্লির এ শাসক সম্ভবত মধ্যযুগের সবচেয়ে শিক্ষিত, যোগ্য ও দক্ষ সুলতান ছিলেন, তবে তার পাগলাটে এবং পাশবিক আচরনের কারনেও তার কূখ্যাতি রয়েছে। তিনি অধিকাংশ সময়ই লঘু পাপে গুরু শাস্তি দিতেন এবং এর থেকে ধনী, গরীব, মুক্ত কিংবা কৃতদাস কেউই রেহাই পেতো না। এছাড়াও তার আচর়ন ছিল রহস্যময়। দিল্লী থেকে দৌলতাবাদে রাজধানী সরানোর হঠকারি সিদ্ধান্তের কারণে অবশ্য ভারতের দক্ষিণে মুসলমান জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। কারণ তার নির্দেশে যারা দক্ষিণে স্থানান্তরিত হয়েছিল তারা পরে আর দিল্লী ফিরে আসেনি। ইবনে বতুতা দিল্লীর বর্ণনায়, দিল্লী সমগ্র মুসলিম প্রাচ্যের বৃহত্তম নগরী ছিলো যা ১১৮৮ সালে মুসলিম শাসকদের দখলে আসে। সুরক্ষিত প্রাচীর ঘেরা দিল্লী শহরের সৌন্দর্য এবং দাপট তাকে মুগ্ধ করে। দিল্লীর জামে মসজিদও ছিল মুসলিম সাম্রাজ্যের শ্রেষ্ঠ স্থাপনা।
ভারতে ইবনে বতুতা প্রায় সাত বছর অবস্থান করেন। সুলতান তাকে দুটি ছোট গ্রামের কর্তৃত্ব দেন যাতে করে এর থেকে সংগৃহীত রাজস্ব উত্তোলন করে তিনি তার খরচ চালাতে পারেন এবং কাজী হিসেবেও সুলতান কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হন। কাজীর দায়িত্ব পালনকালীন ইবনে বতুতা কুতুবউদ্দিন মুবারক এর মাজারের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু দুর্ভিক্ষ ও তার অতিরিক্ত ব্যয়ের জন্য অনটনে পড়েন। আস্তে আস্তে সুলতানের সাথে তার তিক্ত সম্পর্ক হয়। উদার মনোভাবাপন্ন সুলতান তাকে সম্মানের সাথেই দূরে পাঠানোর পরিকল্পনা থেকে চীনে দূত হিসেবে প্রেরণ করেন। চীন যাওয়ার উদ্দেশ্যে সমুদ্র তীরের দিকে যাওয়ার সময় রাস্তায় তিনি একদল ডাকাত দ্বারা আক্রান্ত হন। এই আক্রমণে তিনি সবকিছু হারান, কিন্তু কোনরকমে প্রাণে বেঁচে যান। কিন্তু দিল্লী ফিরে না এসে এরপর মালদ্বীপ ও শ্রীলংকায় অবস্থান করেন। এরপরে তিনি বর্তমান বাংলাদেশের সাদকাওয়ান বা চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌছান।
১৩৪৬ সালে বাংলায় এসে ইবনে বতুতা প্রথমে চট্টগ্রামের স্থানীয় রাজার মেহমান হন। ইবনে বতুতার ভাষায়, "দীর্ঘ তেতাল্লিশ রাত্রি সমুদ্রের বুকে কাটিয়ে আমরা বাঙ্গালা দেশে পৌঁছলাম। এ বিশাল দেশে প্রচুর চাল উৎপন্ন হয়। সারা পৃথিবীতে আমি এমন কোন দেশ দেখিনি যেখানে জিনিসপত্রের মুল্য বাংলার চেয়ে কম। পক্ষান্তরে এ একটি অন্ধকার দেশ। খোরাসানের লোকেরা বলে বাংলা ভালো জিনিসে পরিপূর্ণ একটি নরক। এক দেরহামে আটটি মোটা তাজা মুরগী, দু দেরহামে একটি মোটা তাজা ভেড়া এখানে বিক্রি হতে দেখেছি। এক স্বর্ণ দিনারে এখানে একজন সুন্দরী ক্রীতদাসী বালিকা বিক্রি হয়।"
এতকিছুর পরেও খোরাসানের লোকেরা বাংলাকে নরক কেন বলে তা তিনি বলে যাননি। অন্ধকারদেশও কেন তা বোধগম্য নয়। হয়ত শুষ্ক আবহাওয়ার খোরাসানিরা বাংলার বৃষ্টিপাতকে সহ্য করতে পারতো না, তাই নরক আর জলা জঙ্গলাকীর্ণ দেশ বলে অন্ধকারের দেশ বলতো। অথবা এর কারন হল অনেক পরিব্রাজকদের লেখা থেকে পাওয়া যায় যে বাংলায় ম্যালেরিয়া, কলেরা, বসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু মুখে পতিত হবার সম্ভাবনা বেশী ছিল৷ বিদেশীদের এইসব রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কম ছিল৷ তাই তারা মূল বাংলাকে এড়িয়ে চলতেন এবং যেহেতু এখানে আসলে মৃত্যুভয় কাজ করত তাই তারা এই অঞ্চলকে জাহান্নাম বা নরক হিসাবে ভাবতেন। ইবনে বতুতার বর্ণনায় পাওয়া যায় মাত্র এক দিরহাম দিয়ে তখন বাংলাদেশ আটটি স্বাস্থবান মুরগী পাওয়া যেত, এছাড়াও এক দিরহামে পনেরোটা কবুতর, দুই দিরহামে একটি ভেড়া এবং এক স্বর্নমূদ্রারও কম মূল্যে দাসদাসী কিনতে পাওয়া যেত।
যখন ইবনে বতুতা বর্তমান বাংলাদেশে এসে পৌঁছান তখন এখানকার সুলতান ছিলেন ফখর-উদ-দিন। ফখরউদ্দিন দিল্লীর সুলতানের আনুগত্য করতেন না। তিনি সুফীব্যক্তিত্ব এবং মুসাফিরদের প্রতি বিশেষ সম্মান দিতেন। ইবনে বতুতার বাংলাদেশে আসার গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য ছিল মহান দরবেশ শেখ জালাল-উদ-দিনের সাথে সাক্ষাৎ করা। সিলেটের পর্বতশ্রেণির মধ্যে যেখানে শেখ জালাল-উদ-দিন থাকতেন সেখান থেকে প্রায় দুই দিনের দূরত্বেই তার দুজন শিষ্যের সাথে দেখা হয় ইবনে বতুতার। তাদের কাছ থেকে তিনি জানতে পারেন যে শেখ জালাল-উদ-দিন আদেশ দিয়েছেন, মাগরেব বা মরোক্কো থেকে যে পর্যটক তার সাথে সাক্ষাৎ করতে আসছেন তাকে যেন স্বাগত জানিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। অথচ ইবনে বতুতার সাথে শেখ জালাল-উদ-দিনের আগে থেকে কোন পরিচয় ছিল না কিংবা ইবনে বতুতা তার আগমনের কোন খবরও শেখ জালাল-উদ-দিনকে দেন নি। এখান থেকেই ইবন বতুতা শেখ জালাল-উদ-দিনের আধ্যাত্বিক ক্ষমতার ব্যাপারে ইঙ্গিত পান।
হযরত শাহজালালের সাথে সাক্ষাৎ করে ফেরার পথে ইবনে বতুতা একটি ছাগলের পশমের কোট উপহার পান। ইবনে বতুতার বর্ণনা মতে শেখ জালাল উদ-দিন একটি পাহাড়ের গুহায় বসবাস করতেন যেখানে তারা ছাগল পূষতেন দুধ এবং মাখনের জন্য। হযরত শাহ জালাল রহ.কে তিনি কেমন দেখলেন- সেটার বৃত্তান্তও 'আর রিহলা' গ্রন্থে পেশ করেছেন। তিনি বলেন, 'শাহজালাল একজন বড় মাপের আলেম এবং অনুপম ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তাঁর অনেক প্রসিদ্ধ কারামাত এবং বড় বড় কীর্তি রয়েছে। তা ছাড়া তিনি অনেক দীর্ঘ হায়াত পেয়েছেন। শাহ জালাল নিজে আমাকে বলেছেন, বাগদাদে আব্বাসীয় খলিফা মুসতাসিম বিল্লাহকে তিনি দেখেছেন এবং তার হত্যার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে শাহ জালালের শিষ্যগণ আমাকে অবহিত করেছেন, শায়খ একশত পঞ্চাশ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। প্রায় চল্লিশ বছরের মতো তিনি একাধারে রোজা রেখেছেন। আশ্চর্যের বিষয় হলো, তিনি প্রতি দশ দিন পরপর ইফতার করতেন; তাও আবার নিজের পোষা একটি গাভীর দুধ দিয়ে। সারারাত নফল নামাজ পড়তেন। হালকা-পাতলা শরীর আর দীর্ঘকায় লোক ছিলেন তিনি। এতদঞ্চলের লোকেরা তাঁর হাতে ইসলাম গ্রহণ করেছে। এ জন্যে তিনি এখানেই অবস্থান করেন।'
বাংলা ভ্রমণের বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও নদীর নাম উল্লেখ করেন। সাদকাঁও বা চাটগাওকে তিনি বলেছেন বিশাল সমুদ্র উপকূলবর্তী বড় শহর বলে। এর কাছাকাছিই গঙ্গা ও যুন নদী মিলিত হয়ে সমুদ্রে পতিত হয়েছে। ইবনে বতুতা কামারু নামে যে স্থানটি পরিদর্শন করেন সম্ভবত তা ছিল খাসিয়া, জৈন্তিয়া ও ত্রিপুরা পাহাড় বেষ্টিত আসামের অন্তর্গত শ্রীহট্ট বা সিলেট অঞ্চল। এখানেই তিনি হযরত শাহজালাল (র.) এর সাথে সাক্ষাৎ করেন। ইবনে বতুতা হবঙ্ককে বর্ণনা করেছেন আন-নহর উল-আজরাক (নীল রঙের নদী যা সুরমা নদী বলে ধারণা করা হয়) তীরবর্তী একটি অতি সমৃদ্ধ ও সুদৃশ্য ঐতিহাসিক নগরী সোনারগাঁকে সুতিরকাওয়ান বলেছেন।
ইবনে বতুতা তাঁর ভ্রমণ কাহিনীতে তখনকার বাংলার জলবায়ু ও প্রাকৃতিক দৃশ্যের বর্ণনা দিয়েছেন। বাংলার সুদৃশ্য শ্যামল সবুজ প্রান্তর, পল্লীর ছায়াসুনিবিড় সবুজের সমারোহ তাঁকে এতটাই মুগ্ধ করেছে যে, তিনি উচ্ছ্বসিত হয়ে মন্তব্য করেছেন,'আমরা পনের দিন নদীর দুপাশে সবুজ গ্রাম ও ফলফলাদির বাগানের মধ্য দিয়ে নৌকায় পাল তুলে চলেছি, মনে হয়েছে যেন আমরা কোনো পণ্যসমৃদ্ধ বাজারের মধ্য দিয়ে চলছি। নদীর দুই কূলে জমিতে জলসেচের পানি কল, সুদৃশ্য গ্রাম ও ফলের বাগান, যেমনটি রয়েছে মিশরের নীলনদের দুই তীরে।'
ইবনে বতুতার বিবরণ থেকে আমরা তৎকালীন বাংলার রাজনৈতিক অবস্থার কথা জানতে পারি। তিনি তখনকার বাংলার সুলতান ফখরুদ্দিন মুবারক শাহকে একজন খ্যাতিমান শাসক হিসেবে প্রশংসা করেছেন। ইবনে বতুতা সোনারগাঁয়ের সুলতান ফখরুদ্দিন মুবারক শাহ ও লক্ষ্ণৌর সুলতান আলাউদ্দিন আলী শাহের মধ্যকার তীব্র সংঘর্ষের স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরেছেন। বতুতা সুলতান নাসিরউদ্দিন মাহমুদের সময় থেকে ফখরুদ্দিন মুবারক শাহ ও আলাউদ্দিন আলী শাহের ক্ষমতা লাভের সময় পর্যন্ত বাংলার রাজনৈতিক ঘটনাপটের বিবরণ দিয়েছেন।
ইবনে বতুতা তার বিবরনীতে বাংলার কতিপয় সামাজিক বিষয়ের উপর দৃষ্টিপাত করেন। বতুতা নিজে ছিলেন সুফী ঘরানার মানুষ, তাই সুফী দরবেশদের প্রতি বাংলার শাসক শ্রেণী এবং স্থানীয় সব ধর্মের মানুষের লোকের উপর সুফি-দরবেশদের প্রভাব ও মর্যাদা তাকে মুগ্ধ করে। ইবনে বতুতার বিবরণ থেকে তখন বাংলায় দাসপ্রথার প্রচলনের সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। তাঁর মতে, এখনকার খোলা বাজারে পণ্য বিক্রির মত তখন খোলাবাজারে দাসদাসী বেচাকেনা হতো। তিনি আশুরা নামীয় এক যুবতী দাসী ক্রয় করেছিলেন।
[আরবী মূল ইবনে বতুতার 'আর রিহলা' অবলম্বনে]