আরব বিশ্বের নিষিদ্ধ বই
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ বা অশ্লীলতার অভিযোগেই যুগে যুগে বই নিষিদ্ধ হয়ে আসছে সারা বিশ্বে। আরব দুনিয়াও এর বাইরে নয়। তবু আরব বিশ্বের দিকে সবার মনোযোগ একটুই বেশিই থাকে। সীমাহীন সম্পদ, প্রধান সব ধর্মের উৎপত্তিস্থল, বিস্ময়কর আরবিভাষা ও সাহিত্য আর বৈচিত্রময় জীবনযাত্রা নিয়ে আরব বিশ্ব যেন আরব্য রজনীর সেই রূপকথার রাজ্য। তাই এখানে কোনো বই নিষিদ্ধ হওয়ার সাথে সম্পর্কিত হয়ে পড়ে অনেক কিছুই।
আরব বিশ্ব যতটা তথ্য সন্ত্রাসের স্বীকার হয় তেমন আর কোথাও হয় না। সেখানে প্রকৃত যা ঘটে আর যা প্রচারিত হয় তা অনেকটাই ভিন্ন। বহু শতকজুড়ে আরববিশ্ব ছিল পৃথিবীর নেতৃত্বে তাই এখানে অবাধ যাতায়াত ছিল নানা ধরনের মানুষের। বিভিন্ন ধর্ম আর সংস্কৃতির সংস্পর্শে সমৃদ্ধ হয়েছে আরব সমাজ।
অষ্টম থেকে ত্রয়োদশ শতক ছিল আরব তথা মুসলিম দুনিয়ার স্বর্ণযুগ। তৎকালীন শাসকরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছিলেন জ্ঞানচর্চাকে। অনুবাদ হয়েছে প্রাচীন রোম, গ্রীস, চীন, ভারত, মিশর এবং পারস্যসহ সব উন্নত সভ্যতার গ্রন্থসমূহ। ইসলাম যদি অসিহষ্ণু হতো তাহলে এত ভিন্ন মতবাদ তখন আরবিতে অনূদিত হতো না। এই সময় অশ্লীল কবিতা এবং ধর্মবিরোধী লেখার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন কবি বাশশাব আল বুরদ বা আনাল হক খ্যাত মনসুর হাল্লাজের মতো কেউ কেউ।
মিশরের রাজধানী কায়রো বহু শত বছর ধরেই বিভিন্ন দিক থেকে উন্নত ছিল। স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য নিরাপদ শহর ছিল কায়রো। নেপোলিয়নের মিশর অভিযানের মাধ্যমে কায়রোতে পশ্চিমা দুনিয়ার অবাধ চিন্তা ও ভিন্ন এক সংস্কৃতির আগমন ঘটে। ইউরোপীয় সাহিত্য ও মতবাদের প্রভাবে প্রভাবিত হয় আরবীয় যুবসমাজ। যে ইউরোপ একসময় আরবের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে উন্নত হয়েছে পরবর্তীতে সেই ইউরাপের প্রভাবে পিছিয়ে পড়া আরবরা এগিয়ে যেতে চায়। এ সময় ওসমানীয় খিলাফতের দুর্বল অবস্থায় আরব অঞ্চলগুলো বিভিন্ন ইউরোপের উপনিবেশে পরিণত হয়। তবু বিভিন্ন আরব অঞ্চলের কবি, সাহিত্যিক বা সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের জন্য কায়রোতেই আশ্রয় নিতেন। এজন্য কায়রো হয়ে ওঠে আধুনিক আরবি ভাষা সাহিত্যের কেন্দ্রস্থল।
ঔপনিবেশিক শাসকরা চলে যাবার সময় এমন শক্তির হাতেই ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে যায় যারা তাদের মতোই, জনগনের প্রতি নিষ্পেষণের পথই বেছে নেয়। কায়রোর মুক্তচিন্তার মানুষগুলো বন্দী হয়ে পড়ে স্থানীয়স্বৈরশাসকের হাতে। নিষিদ্ধ হয় অনেক বই।
কায়রোর নোবেলজয়ী নাগীব মাহফুজ বা ইসলামপন্থী ব্রাদারহুডসহ সব ভিন্ন মতের কণ্ঠই রোধ করা হয় মিসরে। হাসানুল বান্না, সাইয়্যেদ কুতুব, ইউসুফ কারযাভী প্রমূখ ইসলামি চিন্তাবিদ, যারা মিসরের ইখওয়ানুল মুসলিমুন বা ব্রাদারহুডের এর সাথে সম্পৃক্ত তাদের বইসমূহও নিষিদ্ধ সৌদি আরব এবং মিসরে। জিহাদের পক্ষে কথা বলার জন্য তাদের বিরুদ্ধে বিশ্বে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের পক্ষাবলম্বন করার অভিযোগ আসে। তাদের বইসমূহের উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করে সৌদি শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
নাগীব মাহফুযের 'আওলাদু হারিতিনা' বা আমাদের গলির শিশুরা উপন্যাসটি একই সাথে বিখ্যাত এবং বিতর্কিত। উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশিত হয় ধারাবাহিক ভাবে ১৯৫৯ সালে আল আহরাম পত্রিকায়।
মূলত ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার কারণে এটি নিষিদ্ধ হয়। বলা হয় এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৪ সালে নাগিব মাহফুয ছুরিকাঘাতের শিকার হন। ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে বইটি মিসরে নিষিদ্ধ। নিজ দেশ মিসরে বইটি গ্রন্থাকারে প্রকাশ হয়নি। ১৯৬৭ সালে লেবানন থেকে এটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। প্রকাশিত হবার পর থেকেই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর জোর সমালোচনার মুখে পড়ে উপন্যাসটি। ১৯৮৮ সালে নোবেল পান নাগীব।
এই উপন্যাসে আল জাবালাবী বা গাবালাবীনামক এক ধনাঢ্য ও ক্ষমতাশালী ব্যক্তি যে অন্যায় পথে বিশাল সম্পদের মালিক হয়। পাঁচপুত্র আর অধীনস্তদের উপর সবসময় নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতো সে। তবে এসবই রূপক বলে অভিযোগ। নাগীব এখানে সৃষ্টিকর্তা আর নবীদেরকে তার পুত্র হিসেবে কল্পনা করে কটাক্ষ করে উপন্যাস লিখেছেন এমনই অভিযোগে অভিযুক্ত হন তিনি। তবে প্যারিস রিভিউ-এর এক সাক্ষাতকারে নাগীব বলেছিলেন, "আমি এই বইটাতে দেখাতে চেয়েছি সমাজে বিজ্ঞানের একটা স্থান আছে ঠিক নতুন ধর্মের মতো। বলতে চেয়েছি বিজ্ঞান আবশ্যিকভাবে ধর্মীয় মূল্যবোধের বিরোধী নয়। দুর্ভাগ্যক্রমে এটাকে ভুল বোঝা হয়েছে কারণ এই মানুষগুলো জানেনা কিভাবে একটা গল্পকে পড়তে হয়। রূপককে কখনোই আক্ষরিক অর্থে নেয়া ঠিক নয়।"
ধর্ম আর বিজ্ঞানের অবস্থান নাকি স্বৈরশাসক আর জনগনের দ্বন্দ্ব কোনটি এই উপন্যাসের মূল উদ্দেশ্য তা সুস্পষ্ট নয়। তৎকালিন শাসক নাসেরের সরকার এই উপন্যাসকে যেমন রাজনৈতিক মনে করেছেন তেমনি আল আযহারের আলেমরা একে ধর্মবিরোধী ভেবেছেন। তাই সরকার এবং আলেম একমত হয়েই এই উপন্যাসকে নিষিদ্ধ করেছেন। নাগীবের বেশকিছু উপন্যাসে প্রাচীন মিসরের স্বৈরশাসকদের কাহিনী বিবৃত হয়েছে।
অতীতের ইতিহাস টেনে তিনি বর্তমান শাসকের বিরোধিতা করেছেন এমন অভিযোগেও তার বেশ কিছু লেখা তোপের মুখে পড়ে। এর মধ্যে 'মিসর আল কাদীমা' 'আল কাহিরা আল জাদিদা' এবং 'রাদুবীস' উল্লেখযোগ্য। মিসরের বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ ড. ত্বহা হুসাইনের আত্মজীবনী আল আইয়াম এবং সাহিত্য সমালোচনার বই 'ফিশ শি'র আল জাহিলি' নিষিদ্ধ হয়েছিল ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেবার অভিযোগে।
আরব বংশোদ্ভুত প্রাচ্যবিদ এডওয়ার্ড সাঈদ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ইয়াসির আরাফাতের ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধা হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনে। কিন্তু ১৯৯১ সালের অসলো চুক্তি নিয়ে রাজনৈতিক মতান্তর ঘটে ইয়াসির আরাফাতের সাথে তাই নীরবে সরে আসেন রাজনীতি থেকে। এর পরে নিজের অবস্থান জানান দেন 'অসলো এন্ড আফটার' এবং 'পিস এন্ড ইটস ডিসকন্টেন্টস' শীর্ষক গ্রন্থে।
পিএলও এবং ইজরাইলের মধ্যে সম্পাদিন অসলো শান্তিচুক্তিকে সাঈদ মনে করেছেন ফিলিস্তিনিদের আত্মসমর্পণের দলিল হিসেবে। এই চুক্তিতে লাভবান হয় শুধুমাত্র ইজরাইলি দখলদাররা। শরণার্থী হিসেবে আমেরিকায় থেকেও তিনি ইজরাইল-ইঙ্গো-মার্কিন নীতির কঠোর সমালোচক ছিলেন আজীবন। পিস এন্ড ইটস ডিসকন্টেন্টস বইটি নিষিদ্ধ করে আরাফাত সরকার।
ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী বজ্রকণ্ঠস্বর কবি মাহমুদ দারবীশ, নিজার কাব্বানী এবং এডোনিসের কবিতাও নিষিদ্ধ হয়েছে বারবার। সাংবাদিক, ঔপন্যাসিক গাসসান কানাফানির 'আইদা ইলা হাইফা' তার মৃত্যুর বহু বছর পরেও মঞ্চস্থ হবার অনুমতি পায় না।
সৌদি বংশোদ্ভুত লেখক আব্দুর রহমান মুনীফের বিখ্যাত উপন্যাস "মুদুনুল মিলহি" বা লবনের শহর সহ আরো অনেক বই নিষিদ্ধ সৌদি আরবে। তেল অর্থনীতির উপর ডক্টরেট করা মুনীফ আরব শাসকদের সমালোচনা করেন তাদের বৈদেশিক নীতির জন্য। ভুল নীতির জন্য লবনের তৈরি শহরের মতোই খুবই অস্থায়ী হবে আরব শহরগুলো যা সামান্য আঘাতেই ধ্বংস হবে। সৌদি শাসকদের বিরুদ্ধাচারণ করার অভিযোগে মুনীফের বই নিষিদ্ধের সাথে সাথে তার নাগরিকত্বও বাতিল করা হয়। তেলকে এখানে রূপকভাবে লবন বলে উল্লেখ করেছেন লেখক।
২০১৬ কায়রো আন্তর্জাতিক বইমেলায় নিষিদ্ধ হয়েছে বেশ কয়েকজন লেখকের বই। নারীবাদী ও সমকামিতার বিষয়কে উপজীব্য করে লেখার জন্য বেশকিছু বই নিষিদ্ধ করা হয় এই মেলায়।
মোহাম্মদ শুকরির বই "আল খুবজুল হাফী" বইয়ে আরব যুবসমাজের মধ্যে নেশাবস্তর ব্যপকতা এবং সমকামিতার মতো নিষিদ্ধ বিষয়গুলোর প্রসঙ্গ আছে। মরক্কোর লেখক শুকরির আল খুবজুল হাফী বা শুধুই রুটি লেখকের আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস। শুকরি অত্যন্ত দারিদ্রতার মধ্যে বেড়ে ওঠেন তানজিয়ার নগরে। অভাবের কারণে যাবতীয় অপরাধে জড়াতে বাধ্য হন। কোনোরকম অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন এই লেখক জীবন বাঁচানোর জন্য নিকৃষ্টতম কাজ করেছেন কৈশোরে আর এসবের সাহসী বর্ণনা দিয়েছেন তার বইয়ে। ১৯৭৩ সালে এই বইয়ের ফরাসী অনুবাদ প্রথম প্রকাশিত হয় পরে বের হয় মূলভাষা আরবিতে। মরোক্ক সরকার ১৯৮৩ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত এই বই নিষিদ্ধ করে রেখেছিল।
লিবিয়ায় জন্মগ্রহণকারী মিশরীয় কার্টুনিস্ট এবং লেখক মাজদি আল শাফীর 'মেট্রো' নিষিদ্ধ করা হয় আপত্তিকর প্রসঙ্গ ও অশ্লীলতার দায়ে ২০০৮ সালে। এই ব্ইয়ের মূল বিষয় মিশরীয় সমাজের নিদারুণ দারিদ্র যা শুরু হয়েছে ক্ষমতাবানদের সীমাহীন দুর্নীতির জন্য। এই বইয়ের দুটি প্রধান চরিত্র শিহাব আর মুস্তফার আলাপে মিশরের অধঃপতিত রাজনৈতিক আর অর্থনৈতিক অবস্থার চিত্র ফুটে উঠেছে। মিশর যেন একটি কারাগার আর এই কারাগার ভেঙ্গে ফেলতে চায় তারা। যদিও এই উপন্যাস নিষিদ্ধ করার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে শিহাব ও সাংবাদিক দিনার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের খোলামেলা বর্ণনাকে। কারণ লেখার পাশাপাশি যৌনতার চিত্রও আঁকা হয়েছে এই উপন্যাসে। মিশরের ভয়াবহ রাজনৈতিক অবস্থাকে আড়াল করার জন্যই যৌনতার বিষয়কে মূখ্য করে এই উপন্যাসটিকে নিষিদ্ধ করেছে স্বৈরশাসক। কমিক বা ক্যারিকেচার শিল্পী শাফেয়ীর মেট্রো আরবি ভাষায় প্রথম সচিত্র উপন্যাস। মিসরের সাবেক স্বৈরশাসক হোসনি মোবারকের সময়ের সীমাহীন দুর্নীতির চিত্র ফুটে উঠেছে তার উপন্যাস জুড়ে। এই বইয়ের লেখক এবং প্রকাশককে গ্রেফতার করে শাস্তি দেয়াও হয়।
শৈবালের জন্য ভোজ বা 'ওয়ালিমা লি আ'শাবুল বাহার' নামক নিষিদ্ধ উপন্যাসটি সিরিয়ান লেখক হায়দার হায়দারের। প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৮৩ সালে। ইরাক ও আলজেরিয়ার রাজনৈতিক পটভূমিতে লেখা এই উপন্যাস মূলত কম্যুনিস্ট আদর্শের। শ্রেনী বৈষম্য বিলোপ, স্বাধীনতা সংগ্রাম, স্বৈরচারবিরোধিতা এসবই উঠে এসেছে এখানে অন্যান্য কম্যুনিস্ট ভাবধারার উপন্যাসের মতো। মিশরে এই উপন্যাসটি নিষিদ্ধ হয় ১৯৮৩ সালে। কম্যুনিস্ট মতবাদের চেয়ে ধর্মীয় কারণেই এই গ্রন্থটি নিষিদ্ধ হয়। লেখক এবং তার বইকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয় সিরিয়াতেও। আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও বিক্ষোভ করে এই বইকে নিষিদ্ধ করার দাবীতে।
আলজেরিয়ার অন্ধকার দশক বলে খ্যাত ৯০ এর দশকে গৃহযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী আলজেরিয়ান সাবেক সেনা সদস্য হাবিব সুওয়াইদিয়ার লেখা 'আল হারব আল কাযেরা' বা নোংরা যুদ্ধ বইটি নিষিদ্ধ আলজেরিয়ায়। যুদ্ধের নির্মম বর্ণনা এবং ক্ষমতাসীনদের নিষ্ঠুর নীতির কথা প্রকাশ করেছেন হাবীব। দীর্ঘদিন দেশটি ফ্রান্সের অধীনস্ত থাকার পর সেনাবাহিনীর সাহায্যে স্বাধীনতা অর্জন করে ১৯৬০ সালে, কিন্তু এরপর থেকেই চলতে থাকে সীমাহীন দুর্নীতি আর অনিয়ম। সম্পদশালী দেশ হলেও স্বৈরশাসকের শাসনাধীনে থাকা দেশটি সবদিক থেকেই পিছিয়ে আছে।
আরব দুনিয়ার সিমন দা বোভোয়ার খ্যাত মিশরীয় চিকিৎসক এবং লেখক নাওয়াল সা'দাবী সোচ্চার ছিলেন নারীদের খাতনা করার মতো অমানিক প্রথার বিরুদ্ধে। তার প্রথম প্রকাশিত বই "আল মারআত ওয়াল জিনসু' বা নারী এবং যৌনতা শীর্ষক বইটি দীর্ঘদিন নিষিদ্ধ ছিল মিশরে। নারীদের খাতনা করার বিষয় নিয়ে বইটি লেখার কারণে স্বাস্থ্যমন্ত্রনালয়ের পরিচালকের পদ থেকে অপসারিত হন তিনি। নারীবাদী আখ্যা পাওয়া এই লেখকের 'সুকুতুল ইমাম' বা 'পিতৃতন্ত্রের পতন' বইটিও নিষিদ্ধ ছিল মিশরে। ১৯৮১ সালে তিনি আল মুওাজাহা নামে একটি নারীবাদী পত্রিকা বের করেন। এর পরেই গ্রেফতার হন প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতের নির্দেশে।
সুসান আবুল হাওয়ারের বই 'আসসাবাহ ফি জেনিন' বা জেনিনের সকাল, মূলত এক ফিলিস্তিন পরিবারের গল্প। এ পরিবার শরণার্থী শিবিরে বসবাস করে। অনেক চরিত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দুই শিশু যারা বিচ্ছিন্ন হয়ে একজন ফিলিস্তিন পরিবারে, আরেকজন ইসরাইলি পরিবারে বেড়ে ওঠে। রাজনৈতিক কারণে এই বইটি নিষিদ্ধ হয় জর্ডানে। জর্ডানের বাদশাহ আব্দুল্লাহ এবং ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী গোল্ডা মেয়ারের মিটিংয়ের প্রসঙ্গ আসার কারণে বইটি নিষিদ্ধ হয়।
আব্দুল্লাহ বুসাইসের বই "যিকরায়াত দাল্লা" বা হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি উপন্যাসে কুয়েতের জীবনচিত্র চিত্রিত হয়েছে বিশেষ করে ইরাক হামলার পর অনেক কিছুই পরিবর্তিত হয় সেখানে। রাজনৈতিক কারণে এই বইটিও সেদেশে নিষিদ্ধ হয়।
গত বছর মিশরের তরুণ ফটোগ্রাফার শাদীর নির্মম মৃত্যু বিশ্ববাসীর সামনে মিশরের রাজনৈতিক দুরাবস্থার কথা স্মরণ করিয়ে দিলো আবার। মিশরের ইতিহাসে প্রথম জনগনের ভোটে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুরসির মৃত্যুর পর বর্তমান প্রেসিডেন্ট জেনারেল সিসি কঠোর হাতে দমন করছেন সব বিরোধীতাকে।
হাজার হাজার রাজনৈতিক কর্মী, সাংবাদিক এবং লেখক কারাগারে বন্দী। মুরসির যোগ্য নেতৃত্বের অভাব, প্রগতিশীলদের বিরোধীতা, নারীবাদীদের সমালোচনা এবং বিরোধী দলগুলোর একপেষে নীতির কারণে আরব বসন্তের পরে আবারো মিশরে গণতন্ত্রের পতন হয়েছে। স্বৈরশাসন চেপে বসেছে বাম ডান সব মতের উপরেই। শাদীকে গ্রেফতার করা হয় কবি জালাল বুহাইরিকে গ্রেফতারের পর ২০১৮ সালে।
জালালের লেখা কবিতা 'বালাহা'কে গানে রূপ দেন সামী এসাম। এই মিউজিক ভিডিওতে কটাক্ষ করা হয় প্রেসিডেন্ট সিসিকে। মিউজিক ভিডিওটি নির্মাণে ছিলেন শাদী হাবাশ। এরই শাস্তিস্বরূপ গুজব ছড়ানো ও নিষিদ্ধ দলের সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া শাদী কারা অভ্যন্তরে মৃত্যুবরণ করেন ২০২০ এর মে মাসে। আর এ গানের গায়ক সামী এসাম বিদেশে নির্বাসিত জীবন যাপন করছেন।