কতজন ইউক্রেনীয় ঘর ছেড়েছে? কোথায় গেছে তারা?
যুদ্ধের ক্ষয়-ক্ষতি থেকে নিজেদের বাঁচাতে ইউক্রেনের জনতাকে ঘর ছাড়তে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যমতে, যুদ্ধ শুরু হবার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১১ মিলিয়নেরও বেশি ইউক্রেনীয় বাসিন্দা ঘর ছেড়েছে। এদের মধ্যে ৫ মিলিয়ন মানুষ পার্শ্ববর্তী দেশে আশ্রয় নিলেও প্রায় ৬.৫ মিলিয়ন মানুষ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের মধ্যেই রয়েছে।
ইউক্রেনের ভেতর কোথায় আছেন তারা?
ইউক্রেনের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ইরিনা ভেরেসচুক দেশের পূর্বাংশের বাসিন্দাদের তাদের এলাকা ছাড়ার জন্য সতর্ক করে দিয়েছেন। এদের মধ্যে কতজন এলাকা ত্যাগ করেছেন তার সংখ্যা জানা যায়নি। মারিওপোলের মেয়র ভ্যাডম বোইচেনকো ন্যাশনাল টিভিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রায় এক লক্ষ মানুষের আটকে পড়ার কথা জানান। তিনি বলেন, 'প্রায় ৬০০০ মানুষের জন্য গত বুধবার সরকারের ৯০টি বাস পাঠানোর কথা রয়েছে'।
আন্তর্জাতিক শরনার্থী সংস্থার (আইওএম) প্রতিবেদন অনুযায়ী জাতিসংঘ ৬.৫ মিলিয়ন মানুষের কথা জানায়। তবে প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়েও বেশি।
৩০ শতাংশ মানুষ এসেছে কিয়েভ থেকে, ৩৬ শতাংশের বেশি এসছে পূর্ব-ইউক্রেন থেকে এবং ২০ শতাংশ এসেছে উত্তর ইউক্রেন থেকে। মাত্র ৫ শতাংশ মানুষ আক্রমণ হবার পরিকল্পনা থেকে বাড়িঘর ছেড়েছিলেন, যেখানে বেশিরভাগ মানুষই যুদ্ধ শুরু হবার পরবর্তী সময়ে এলাকা ত্যাগ করেছে। আইওএম-এর তথ্যানুযায়ী, দেশের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়া মানুষের মধ্যে অর্ধেক সংখ্যক নারী। তাদের কেউ গর্ভবতী অথবা সহিংসতার শিকার হয়েছেন বলে ধরা হচ্ছে।
ইউক্রেনের অভ্যন্তরে থাকা উদ্বাস্তুদের জন্য কী করা হয়েছে?
জাতিসংঘ বলছে তারা যতটা সম্ভব মানবিক সাহায্য দিয়ে যাচ্ছে। এগুলোর মধ্যে আছে:
১. মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য জনসাধারণকে নগদ অর্থ প্রদান।
২. পশ্চিম থেকে পূর্বে খাদ্য, বাসস্থানের সামগ্রী ইত্যাদি সরবারাহ করা।
৩. ইউক্রেনের অভ্যন্তরে থাকাদের জন্য রিসিপশন ও ট্রানজিট পয়েন্ট স্থাপন
ধারণা করা হচ্ছে প্রায় ১২ মিলিয়ন মানুষ যুদ্ধে আহত হবার কারণে বিধ্বস্ত এলাকা ত্যাগ করতে পারছে না।
ইউক্রেনের শরণার্থীরা কোথায় যাচ্ছে?
অধিকাংশ ইউক্রেনীয় নাগরিক পোল্যান্ডে শরণার্থী হিসাবে আশ্রয় নিয়েছে।
- পোল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছে ২,৮২৫,৪৬৩ জন
- রোমানিয়াতে ৭৫৭,০৪৭ জন
- রাশিয়াতে ৫৪৯,৮০৫ জন
- হাঙ্গেরীতে ৪৭১,০৮০ জন
- মলডোভাতে ৪২৬,৯৬৪ জন
- স্লোভাকিয়াতে ৩৪২,৮১৩ জন
- বেলারুশে ২৩,৭৫৯ জন
কিছু মানুষ মলডোভা থেকে রোমানিয়াতে যাওয়ায় তারা উভয় দেশেই তালিকাভুক্ত হয়েছে। পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়া শেনজেন অঞ্চলের অংশ হওয়াতে এদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নেই।
যেভাবে ইউক্রেন ছাড়ছে শরণার্থীরা
ইউক্রেনের সীমান্তের দিকে যাওয়া ট্রেনগুলোতে তিল ধারণের জায়গা নেই। দেশ থেকে বের হওয়ার রাস্তাগুলোতে গাড়ির লম্বা সারি। শরণার্থীদের সবধরনের দাপ্তরিক নথিপত্র দেখানোর প্রয়োজন হচ্ছে না, তবে তারা তাদের আইডি কার্ড, পাসপোর্ট, শিশুদের জন্ম নিবন্ধন কার্ড ও চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখাতে পারলে তাতে লাভ ছাড়া ক্ষতি নেই।
শরণার্থী হিসেবে বিবেচিত হওয়ার জন্য তাদেরকে ইউক্রেনের নাগরিক হতে হবে বা দেশটির ভেতর বৈধভাবে বাস করা মানুষ (যেমন, বিদেশি শিক্ষার্থী) হতে হবে। তবে বিভিন্ন প্রতিবেদনের খবর অনুযায়ী, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের মানুষকে ইউক্রেন ছাড়তে দেওয়া হচ্ছে না।
অন্য দেশগুলো শরণার্থীদের কী ধরনের সহায়তা দিচ্ছে
ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী দেশগুলোতে শরণার্থীরা কোনো বন্ধু বা আত্মীয়ের বাসায় না থাকতে পারলে অভ্যর্থনা কেন্দ্রগুলোতে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। তাদেরকে এসব কেন্দ্রে খাবার ও চিকিৎসা সেবা এবং পরবর্তী গন্তব্য সম্পর্কে তথ্য দেওয়া হচ্ছে।
যুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসা ইউক্রেনীয়দের ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ২৭টি দেশে তিন বছর ধরে অবস্থান ও কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ শরণার্থীরা সামাজিক নিরাপত্তা কল্যাণ ও গৃহ, চিকিৎসা, শিক্ষা ইত্যাদির সুযোগ পাবেন।
- সূত্র: বিবিসি