তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সাবেক প্রধান বিচারপতি গুলজার আহমেদকে চান ইমরান
পাকিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশটির সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি গুলজার আহমেদের নাম সুপারিশ করেছেন বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। সোমবার (৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভির কাছে তিনি গুলজারের নাম পাঠান।
পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)-এর নেতা ফাওয়াদ চৌধুরী এ খবর জানিয়েছেন। পিটিআই-এর কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদনের পরই ইমরান খান গুলজারের নাম প্রস্তাব করেছেন বলে জানিয়েছেন ফাওয়াদ।
২০১৯ সালের ২১ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন গুলজার। গত বছর জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-ই-তালিবান-এর সঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তানের সরকার।
তখন প্রধানমন্ত্রী ইমরানকে সুপ্রিম কোর্টে তলব করে ভর্ৎসনা করেছিলেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি গুলজার। নির্দেশ দিয়েছিলেন, ২০১৪ সালে পেশোয়ারের স্কুলে হামলা চালানো জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে সমঝোতার পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না।
এর আগে সোমবার দুপুরে তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নাম সুপারিশ করার জন্য বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী ইমরান এবং ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির বিদায়ী বিরোধী দলনেতা শাহবাজ শরিফের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিলেন আলভি।
রবিবার রাতে পাকিস্তানের ক্যাবিনেট সচিবালয় বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছিল, ইমরান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নন। তার আগে ইমরানের পরামর্শ মেনে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি ভেঙে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন প্রেসিডেন্ট আলভি।
ফলে অধিবেশন ডেকে আর নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের সুযোগ নেই। এই পরিস্থিতিতে আগামী আট দিন অর্থাৎ ১১ এপ্রিলের মধ্যে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করতে হবে। তারই তত্ত্বাবধানে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে করতে হবে নতুন সাধারণ নির্বাচন।
২০২১ সালে পাকিস্তানের সংবিধানের কুড়িতম সংশোধনী আনা হয়। এ সংশোধনী অনুযায়ী কোনো প্রেসিডেন্ট তার পছন্দ অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা মুখ্যমন্ত্রী নিয়োগের ক্ষমতা রাখেন না।
তার বদলে ওই সংশোধনীতে দেশের প্রধানমন্ত্রী ও ভেঙে যাওয়া সংসদের বিরোধী দলের নেতা, এবং প্রতিটি প্রাদেশিক অ্যাসেম্বলির মুখ্যমন্ত্রী ও বিরোধী দলনেতাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার তৈরির ক্ষমতা দেওয়া হয়।
২০তম সংশোধনীতে আর্টিকেল ২২৪এ নামের নতুন একটি ধারা যুক্ত করা হয়। ওই ধারা অনুযায়ী যদি প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেতা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনে যদি কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিতে না পারেন, তখন ব্যাপারটি একটি সংসদীয় কমিটিতে হস্তান্তর করা হবে। সরকারি দল ও বিরোধী দল থেকে সমান সংখ্যক সদস্য নিয়ে ওই সংসদীয় কমিটি গঠন করা হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের ক্ষেত্রে এ কমিটিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে।
প্রাদেশিক অ্যাসেম্বলিগুলোতেও একই ভাবে দুই প্রধান দল থেকে সৃষ্ট ছয় সদস্যের পার্লামেন্টারি কমিটি প্রতি প্রদেশে অন্তর্বর্তীকালীন মুখ্যমন্ত্রী নিয়োগ দেবে।
যদি ও কমিটিও তিন দিনের মধ্যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে না পারে, তাহলে পুরো প্রক্রিয়াটি ইলেকশন কমিশন অব পাকিস্তান (ইসিপি)-এর কাছে হস্তান্তর করা হবে। এ কমিশন দুই দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে আইন অনুযায়ী বাধ্য থাকবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কর্মকর্তাদের নির্বাচন করার পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও বিভিন্ন প্রদেশের তত্ত্বাবধায়ক মুখ্যমন্ত্রীদের পরামর্শে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক অন্তর্বর্তীকালীন মন্ত্রীসভা গঠন করা হবে।
সূত্র: ডন ডটকম