অর্থনীতি নিয়ে কেন উচ্চ-আয়ের আমেরিকানরা নার্ভাস বোধ করছে
মহামারির পর বিকাশমান অর্থনীতির সুসময়ে ফিরেছে আমেরিকা। বাড়ছে পুঁজিবাজার, আর তাতে উচ্চ আয়ের মানুষের সম্পদেও আসছে উন্নতি। কিন্তু, বিত্ত যার যতো, দুর্ভাবনা তারই ততো বেশি। এক্ষেত্রেও হয়নি ব্যতিক্রম, আমেরিকান বিত্তশালীরা এখন সামগ্রিক অর্থনীতি নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন, তাদের প্রধান চিন্তার কারণ রেকর্ড মূল্যস্ফীতি।
জ্বালানি, খাদ্য ও আবাসনের খরচ বৃদ্ধির সাথে সাথে ইউক্রেন যুদ্ধের মতো ভূরাজনীতিক অস্থিতিশীলতার কারণে আমেরিকায় মূল্যস্ফীতি গেল ফেব্রুয়ারিতে ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ হয়।
জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতির বার্ষিক হার ৭.৫ শতাংশে উন্নীত হয়। এরপর তা পরের মাসেই ৭.৯ শতাংশে উন্নীত হয় বলে জানায় মার্কিন শ্রম মন্ত্রণালয়ের তথ্য।
উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো যা ঘটছে
ক্রমে বেড়ে চলা মূল্যস্ফীতি ভোক্তাদের খরচ প্রবণতা কমায়। সাধারণ মানুষের ব্যয়ের তুলনায় আয় না বাড়লে তার ফলাফল সার্বিক অর্থনীতির জন্য শুভ হয় না। এই দুষ্টচক্রে কমে যায় পণ্য ভোগ, আর কর্মসংস্থান বাজার।
মার্চে যেসব মার্কিন ভোক্তার আয় বছরে ১ লাখ ডলারের বেশি- অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে তাদের আস্থা যাদের আয় ৫০ হাজার ডলার বা তার চেয়ে কম- তাদের তুলনায় ৭.২ শতাংশ কমেছে। গত বুধবার (২৩ মার্চ) মার্কিন অর্থনৈতিক গণমাধ্যম ও বাণিজ্যিক তথ্য পরিবেশক এক্সিউস এর অসমতা সূচক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়, সেখানেই জানানো হয় এ তথ্য।
এই মনোভাব কেন গুরুত্বপূর্ণ
গড় হিসাবে উচ্চ আয়কারীদের অধিকাংশ সার্বিক অর্থনীতির ব্যাপারে এখনও পুরোপুরি নিরাশ নন, বরং এতে তারা খুশি। কিন্তু, মূল্যস্ফীতি ভোক্তা ব্যয় কমাবে তার প্রভাবে কমবে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের আয় প্রবৃদ্ধি। যার সরাসরি প্রভাব পড়বে পুঁজিবাজারে কোম্পানির শেয়ার দরে। আর এতে আর্থিক বাজারে বিনিয়োগ থাকায় উচ্চবিত্তরাই সবচেয়ে বেশি হারাতে পারেন।
একারণেই পুঁজিবাজারের অস্থিতিশীলতা, ফেডারেল রিজার্ভ বা মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদহার বৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতির নাটকীয় গতি- তাদের আস্থায় চিড় ধরাচ্ছে।
আরও উল্লেখযোগ্য বিষয় কম মজুরির কর্মীদের বেতন ভাতাই এপর্যন্ত সবচেয়ে বেড়েছে। মূল্যস্ফীতির সাথে তাল মিলিয়ে সে তুলনায় বাড়েনি উচ্চ বেতনের চাকুরেদের। দক্ষ পেশাজীবী শ্রেণির জন্য নিঃসন্দেহে তা সুখবর নয়। মূল্যস্ফীতি তাদের আয়ের মাধ্যমে পাওয়া পণ্য ও সেবাকে সংকুচিত করছে। অর্থাৎ, তারা একই টাকায় আগের চেয়ে কম সুবিধা কিনতে পারছেন।
তবে দিনশেষের বাস্তবতা হলো, ধনীরা এই চাপে যতোটা রয়েছেন বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ায় তার চেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হবেন নিম্ন-আয়ের মার্কিন জনতাই। তাছাড়া, সম্পন্নদের হাতে খাদ্য, জ্বালানি ও অন্যান্য নিত্যপণ্যের বাড়তি খরচ মোকাবিলার মতো যথেষ্ট সঞ্চয়ও রয়েছে। কপাল পুড়বে কেবল আর্থ-সামাজিক স্তরের আরও নিচের সারির খেটে খাওয়া মানুষেরই।
- সূত্র: এক্সিউস ডটকম