প্রতারণার দায়ে দোষী সাব্যস্ত ‘নারী স্টিভ জবস’ হোমস
যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত গত সোমবারে প্রতারণার দায়ে থেরানোসের প্রতিষ্ঠাতা এলিজাবেথ হোমসকে (৩৭) দোষী সাব্যস্ত করেছেন। হোমসের বিরুদ্ধে করা ১১টি মামলার মধ্যে ৪টিতে অপরাধের প্রমাণ পেয়েছেন আদালত।
বিনিয়োগকারীদের সাথে প্রতারণা এবং ষড়যন্ত্রের দায়ে হোমসের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। থেরানোসে পরীক্ষা করতে আসা রোগীদের সাথে প্রতারণা এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মামলায় তিনি খালাস পেয়েছেন। তবে, আদালত অন্যান্য বিনিয়োগকারীদের করা তিনটি মামলার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেননি।
বিচারক বলেন, হোমস প্রাইভেট বিনিয়োগকারীদের সাথে প্রতারণা করেছেন। হোমসের দাবি ছিল থেরানোসের একটি যন্ত্র দিয়ে মাত্র এক ফোঁটা রক্তের মাধ্যমে রক্তের নানা পরীক্ষা করা সম্ভব। বিনিয়োগকারীদের প্রলুব্ধ করতে হোমস এই প্রচারণা চালিয়েছিলেন।
২০০৩ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সেই থেরানোস প্রতিষ্ঠা করে সিলিকন ভ্যালিতে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যান হোমস। তিনি স্টিভ জবসের আইকনিক পোশাক 'কালো রঙের টার্টেলনেক গেঞ্জি' নিয়মিত পরিধান করতেন। এজন্য ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে তাকে 'নারী স্টিভ জবস' নামে অভিহিত করা হয়। তবে, আদালতের রায় শুনানির দিনে তিনি সেদিন ধুসর রঙের একটি স্যুট পড়ে এসেছিলেন।
তিনি বিভিন্ন সময়ে ধনী বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হন। রুপার্ট মারডক, ল্যারি এলিসনের মতো ব্যক্তিগণ থেরানোসে বিনিয়োগ করেছিলেন। ২০১৫ সালের ফোর্বসের করা তালিকা অনুযায়ী হোমসের মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ৪.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্রের জেলা জজ এডওয়ার্ড ডাভিলা ৮০ বছরের কারাদণ্ড দেন তাকে। তবে, উচ্চ আদালতে এই কারাদণ্ডের মেয়াদ কমে আসতে পারে। হোমসের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ ছিল, বিশেষত রোগীদের সাথে প্রতারণার বিষয়ে। কিন্তু সেসব মামলাতেই তাকে খালাস দেয়া হয়েছে।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত নিবন্ধের মাধ্যমে থেরানোস কোম্পানির ক্রুটিগুলো জনসম্মুখে আসে। ২০১৮ সালে হোমস এবং তার প্রেমিক ও থেরানোসের প্রধান অপারেটিং অফিসার রমেশ সানি বালওয়ানির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। বালওয়ানী তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ স্বীকার করে নেন।
গত সোমবারে হোমসের আইনজীবী এবং প্রসিকিউটরের মুখপাত্র কোনো বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। সাত দিনের শুনানি শেষে আদালত হোমসের বিরুদ্ধে এই রায় দেন। বিচারকালে থেরানোসের ল্যাব টেস্টিং-এর ত্রুটিগুলো নিয়ে আলোকপাত করা হয়। প্রসিকিউটরের মতে, কোম্পানিটি রোগীদের পরীক্ষার জন্য সিমেন্স কোম্পানির তৈরি গতানুগতিক যন্ত্রপাতির উপর নির্ভরশীল ছিল।
হোমসের আইনজীবীর মতে, 'প্রতিষ্ঠানের এত বড় ত্রুটি হোমস জানতেন না। তাছাড়া, যন্ত্রগুলোর ত্রুটিগুলো সম্পর্কে কোনো পরিসংখ্যানিক প্রমাণাদি নেই'। আত্মপক্ষ সমর্থনে হোমস বলেন, 'তিনি কারো সাথে প্রতারণা করতে চাননি। থেরানোস ল্যাবের ডিরেক্টর টেস্টের মান নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন'।
তবে, থেরানোসের যন্ত্রগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর ব্যবহার বিষয়ে হোমসের আইনজীবী যথেষ্ট প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি। ডিফেন্স এটর্নি কেভিন ডাওনির মতে, 'আদালতের সাক্ষ্যগুলো এটা প্রমাণ করে না যে, হোমস আর্থিক প্রতারণার সাথে যুক্ত নন, তিনি কেবল বিশ্ব পরিবর্তনকারী একটি প্রযুক্তি বানাতে চেয়েছিলেন। থেরানোস কোম্পানি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছালেও হোমস তার জায়গা থেকে সরে দাঁড়ান নি'।
সহকারী এটর্নি জেফ শেঙ্ক বলেন, 'হোমস ব্যবসায় ক্ষতির সম্মুখীন না হতে চেয়ে প্রতারণার পথে হেঁটেছেন। এই সিদ্ধান্ত শুধু নির্মমই নয়, একইসাথে গুরুতর অপরাধ'।