‘লকডাউন শেষে আমাদের জীবন কেমন দাঁড়াবে’: ব্রিটিশদের ব্যঙ্গ
চলতি কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার পর একটা পর্যায়ে তা নিয়ে ট্রলিং বা হাস্যরসে অংশ নেওয়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের জন্য সাধারণ বিষয়। ব্রিটিশদের কাছেও লকডাউন এখন এমন এক দশায় পৌঁছেছে, যে, এর গুরুত্বের চেয়ে এটি নিয়ে অনীহা বেশি প্রকাশ পাচ্ছে তাদের আচরণে।
করোনাভাইরাসের নতুন ধরন বিস্তার লাভ করায় ইংল্যান্ডে তৃতীয় দফায় লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। এই অবস্থায় ব্রিটিশরা তাদের ক্ষোভ উগরে দিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সাহায্য নিচ্ছেন। বিভিন্ন ছবি বিকৃত করে তা নিয়ে মিম বানানো হচ্ছে, ট্রল করা হচ্ছে।
স্কুল-কলেজ আগে থেকেই বন্ধ, নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া বাইরে বেরোবার জো নেই, ফলে ছেলে-বুড়ো নির্বিশেষে ইংল্যান্ডবাসী ঘরে বসেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পর্দায় হাস্যরস ঢেলে দিচ্ছেন।
একদিন যখন সত্যিই ভাইরাস নির্মূল করা হবে এবং লকডাউন উঠে যাবে, সেদিন তাদের দেখতে কেমন হবে, সেসব নিয়েই বেশিরভাগ ব্যবহারকারী মিম তৈরি করে নিজেদের অ্যাকাউন্টে ছেড়ে দিচ্ছেন। অনেকের ধারণা, যুক্তরাজ্যের ভাইরাস মুক্ত হতে বছর দশেক লেগে যাবে।
টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশ্যে সম্বোধনে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, বিজ্ঞান কর্মকর্তাদের দেখানো পরিসংখ্যানের পর নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।
লকডাউন নিয়ে ক্লান্ত টুইটারে নিজের ভাবনা প্রকাশ করে লিখেছেন, 'নিজেকে আরেকটি লকডাউনের জন্য প্রস্তুত করছি। এ নিয়ে তিনবার... মানুষ বুঝে চলুক, ভাইরাস দূর হয়ে যাক।'
'কেউ জানে না আর কত এভাবে সইতে হবে! আমি সত্যিই ক্লান্ত। আলিঙ্গন মিস করছি।'
আরেকজন নিচে মন্তব্য লিখেছেন, 'হ্যাঁ, কিন্তু...না.. .কিন্তু… #লকডাউন নাম্বার থ্রি'।
আরেকজন লিখেছেন, 'আমার এক বছর আগে ব্রেস (দাঁতের এক প্রকার চিকিৎসা পদ্ধতি) তুলে ফেলার কথা ছিল; কিন্তু লকডাউনের জন্য তা বাতিল ঘোষণা করা হয়। আবারও যখন সপ্তাহখানেকের মাঝে আরেকবার তা তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হলো, তখন আবারও সামনে লকডাউন! কী এক যন্ত্রণা।'
টুইটারে আরও লেখা হয়েছে, 'প্রথম লকডাউনে রোগী নির্ণয়, শনাক্ত এবং আইসোলেশনে রাখা নিয়ে তাদের কোনো কার্যকর পরিকল্পনা ছিল না। এবারও তারা মাসের পর মাস নষ্ট করবে; অথচ ভ্যাকসিন বিতরণ নিয়ে কোনো কার্যকর পরিকল্পনার সুফল আমরা চোখে দেখতে পাব না!'
মাত্রই একদিন আগে ছেলেমেয়েদের যখন প্রধানমন্ত্রী স্কুলে ফেরত পাঠানোর জন্য বললেন, তার পরদিনই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো আবারও ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হলো।
সাধারণ মানুষ শুধুই পাঁচটি কারণে বাসা থেকে বের হবার সুযোগ পাবে- জরুরি স্বাস্থ্যবিষয়ক কাজ, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনা, শরীরচর্চা, অসুস্থ কারও শুশ্রূষার ব্যবস্থা করা ও কারও যত্ন নেয়ার উদ্দেশ্যে বের হওয়া এবং অন্যের জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নতুন হিসেবে, গতকালও ৫৮ হাজার ৭৮৪টি নতুন সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে, যা আগেরদিনের চেয়েও ৪২ শতাংশ বেশি।
মারা গেছেন আরও ৪০৭ জন, যা গত সপ্তাহের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি।
স্কটল্যান্ডেও নতুন করে কঠোর নিয়ম আরোপের ঘোষণা দেন ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টারজন।
প্রাক্তন স্বাস্থ্যসচিব জেরেমি হান্ট টুইটারে লিখেছেন, 'যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসে (এনএইচএস) সবসময়ই কঠিন একটা শীতকাল মোকাবিলা করতে হয়েছে- এই তর্ক যারা করছেন, তাদের বলতে চাই, পদে থাকাকালীন আমার চার বছরের শীতকালে কোনোবারই এমন প্রকট দুর্যোগ দেখিনি।'
মি. হান্ট আরও বলেন, মহামারি থেকে শেখা প্রথম শিক্ষা হলো, দ্রুত ও যথাযথ পদক্ষেপ নিলে যে কোনো দেশ জীবনরক্ষার পাশাপাশি তাদের পূর্বের অর্থনৈতিক অবস্থায় ফিরে যেতে পারে।
'আমরা এখন আর অপেক্ষা করার মতো দশায় নেই। স্কুলগুলো বন্ধ করে দিতে হবে, আন্তর্জাতিক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে, প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বেরোনো বন্ধ করতে হবে। এ পর্যন্ত যতগুলো লকডাউনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সবগুলো স্তরকেই পুনর্মূল্যায়ন করা হয়েছে, যেন ভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করা যায়।'
'সুখবর হলো, বিধিনিষেধের সময়সীমা শেষ হবার আগেই যারা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত, তাদের কাছে কোভিডের ভ্যাকসিন পৌছে যাবে; অর্থাৎ, অন্ধকার সুড়ঙ্গের শেষেই অপেক্ষায় থাকবে আলো।'
এদিকে ডাউনিং স্ট্রিট থেকে প্রেরিত আরেকটি বার্তায় বরিস জনসন বলেন, 'আমাদের হাসপাতালগুলোতে এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি চাপ রয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'এবারের গ্রীষ্মে পরীক্ষা নেওয়াটা সম্ভব কিংবা ন্যায়সঙ্গত নয়।'
ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝির মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চারিটি গ্রুপের মাঝে টিকা দেওয়ার কাজ সম্পন্ন করা হবে, এ আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি জানান, 'সামনের সপ্তাহগুলো অনেক বেশি কঠিন হতে যাচ্ছে; তবে আমার বিশ্বাস, আমরা সংগ্রামের একেবারে শেষে চলে এসেছি।'
'কিন্তু আমাদের এই আশা বাস্তব রূপ তখনই লাভ করবে, যখন ভাইরাসটি আবারও নতুন করে তার ধরন বদলাবে না,, স্বীকার করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।
সূত্র: মেইল অনলাইন