হজ শেষে থাকতে হবে না আইসোলেশনে
মহামারিকালে দ্বিতীয়বারের ন্যায় চলতি বছর হজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ বছর কেবল টিকা নেওয়া সৌদি নাগরিক এবং দেশটিতে দীর্ঘদিন ধরে বাসকারী নির্বাচিত কিছু বিদেশি নাগরিক হজের অনুমতি পেয়েছেন। এই সীমিত সংখ্যক হজ প্রত্যাশীদের অনলাইনে আবেদন করে বিশেষ অনুমতি নিতে হয়েছে।
এর আগে সৌদি সরকার ঘোষণা করেছিল, হজের কাজ সম্পন্ন হলে হজযাত্রীদের নির্ধারিত সময় পর্যন্ত আইসোলেশনে থাকতে হবে।
তবে নতুন ঘোষণায় জানা গেল, হজ সম্পন্ন করে বাড়ি ফেরা হজযাত্রীদের কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ পরীক্ষার প্রয়োজন নেই, এমনকি দরকার পড়বে না আইসোলেশনেরও।
সৌদি আরবের স্বাস্থ্য প্রতিরক্ষামূলক মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী ডা. আবদুল্লাহ আসিরি এ তথ্য দিয়েছেন।
তিনি বলেন, "এ বছর হজ থেকে ফেরা কিছু মানুষের পরিবারের লোকজন তাদের করোনা পরীক্ষা কিংবা আইসোলেশনে রাখার ব্যাপারে জানতে চাচ্ছেন। যেহেতু সকল হজ যাত্রী এবং হজে দায়িত্ব পালন করা কর্মীই টিকার ডোজ সম্পন্ন করেছেন, ফলে আপাতত তাদের করোনার পরীক্ষা বা বিচ্ছিন্নতার প্রয়োজন নেই"।
তবে যদি আগামী দুই সপ্তাহের ভেতর তাদের মধ্যে করোনার কোনরূপ লক্ষণ প্রকাশ পায়, তাহলে পরীক্ষা আবশ্যক।
ইতিমধ্যে সৌদির প্রায় ২ কোটি ৪০ লাখ মানুষ টিকাগ্রহণ করেছেন।
আসিরি বলেন, "যারা টিকা নিতে কিছুটা দ্বিধান্বিত ছিলেন, তারাও যে শেষ পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন তার কারণ মূলত তিনটি। প্রথমত, তাদের পরিবারের এক বা একাধিক সদস্য টিকা নেয়ায় এক ধরনের আস্থা ও টিকার প্রতি সমর্থন তৈরি হওয়া, জাতীয় এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা বোধ এবং তৃতীয় কারণটি অর্থনৈতিক।
সৌদিস্থ কায়সার ফ্যামিলি ফাউন্ডেশনের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, যারা এখনো টিকা গ্রহণ করেন নি তাদের মধ্যে রয়েছে কিশোর-কিশোরীরা, সমাজে স্বল্প শিক্ষিত শ্রেণির লোক, জাতিগত সংখ্যালঘু কিংবা যাদের স্বাস্থ্য বীমা নেই তারা।
এ প্রসঙ্গে ডা. আবদুল্লাহ আসিরি বলেন, "টিকা প্রত্যাখ্যান করার নেপথ্যেও প্রধান তিনটি কারণ রয়েছে: পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার ভয়, টিকা সম্পর্কে জ্ঞানের অপর্যাপ্ততা এবং 'টিকার কোন দরকার নেই' এহেন বিশ্বাস"।
ডেল্টা প্রকরণ সম্পর্কে তিনি বলেন, "ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট এসে আগের সব হিসাব বদলে দিয়েছে। প্রাকৃতিক সংক্রমণের বিরুদ্ধে শুধু ইম্যুনিটিই এখন যথেষ্ট নয় এবং টিকার দুটি ডোজ সম্পন্ন করা একটি প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে"।
যে সকল রাষ্ট্র তার নাগরিকদের জন্য পর্যাপ্ত টিকার ব্যবস্থা করতে পেরেছে তারাই মহামারির সবচেয়ে খারাপ প্রভাব উতরে যেতে পেরেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
গতকাল শুক্রবার সৌদি আরব করোনাভাইরাসে নতুন করে ১১ জনের মৃত্যুর খবর জানায়; এ নিয়ে দেশটিতে করোনায় প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়াল ৮,১৪১ জনে।
নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১,২৪৭ জনের।এ পর্যন্ত কোভিড-১৯ পজিটিভ এসেছে মোট ৫১৫,৬৯৩ জনের দেহে। দেশটিতে বর্তমানে করোনার সক্রিয় কেস ১০,৭৪২টি; এদের ভেতর ১,৩৮৩ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
সৌদির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, এখন পর্যন্ত দেশটিতে করোনায় সুস্থ হয়েছে ১,১৬০ জন; সব মিলিয়ে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা ৪৯৬,৮১০।
মহামারির প্রাদুর্ভাবের পর থেকেই সৌদি আরবজুড়ে পর্যাপ্ত করোনা পরীক্ষাকেন্দ্র এবং চিকিৎসাসেবা ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে।
এসব কেন্দ্রের আবার রয়েছে দুটি ধরন। 'তাকাদ' (নিশ্চিত করুন) কেন্দ্রগুলো তাদের জন্য যাদের মৃদু থেকে কোভিডের হালকা উপসর্গ রয়েছে অথবা যারা মনে করেন, কোন সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার ফলে তাদের মধ্যেও ভাইরাস ছড়িয়েছে।
অন্যদিকে 'তেতাম্মান' (বিশ্রামের আশ্বাস) ক্লিনিকগুলো জ্বর, স্বাদ ও ঘ্রাণশক্তি লোপ পাওয়া এবং শ্বাসকষ্টের মতো ভাইরাসের লক্ষণগুলোতে চিকিৎসা এবং পরামর্শ দিয়ে থাকে।
- সূত্র-আরব নিউজ