সাত খুনের দায়ে ভারতে প্রথম কোনো নারীর মৃত্যুদণ্ড
ভারতের উত্তর প্রদেশের বাওয়ান খেরিতে ২০০৮ সালের একদিন রাত ২টায় প্রতিবেশীরা জেগে ওঠেন এক বাড়ি থেকে নারীকণ্ঠে কান্নার শব্দে। ঘুম ঘুম চোখে এগিয়ে গিয়েই তারা প্রত্যক্ষদর্শী হন এক বীভৎস হত্যা-পরবর্তী দৃশ্যের।
প্রথম যে ব্যক্তি দোতলা সেই বাড়িতে গিয়েছিলেন, সেই লতিফ উল্লাহ খান দেখেন, শবনম অচেতন অবস্থায় তার বাবার পাশে পড়ে আছেন; আর বাবা শওকত আলীর গলা কাটা, রক্তাক্ত।
শবনমের দুই ভাই, মা, ভাবী ও ১৪ বছর বয়সী চাচাতো বোনের দেহও পড়ে ছিল রক্তে ভেসে যাওয়া সেই ঘরে। এমনকি শবনমের ১০ মাস বয়সী ভাতিজা মা-বাবার মাঝে ঘুমিয়ে ছিল, তাকেও শবনম গলা টিপে হত্যা করেন।
বীভৎস এই খুন সে সময় ভারতজুড়ে আলোচনার ঝড় তোলে। শবনম যে শুধু তার পরিবারের এক শিশুসহ সাতজনকে খুন করেছেন, তা নয়; সে নিজেও তখন আট সপ্তাহের অন্তসত্ত্বা ছিল। শবনম ও তার প্রেমিক সেলিমকে তাদের খুনের দায়ে অভিযুক্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
আর যদি শবনমের ফাঁসি হয়, তাহলে তিনিই হবেন ১৯৫৫ সাল থেকে এখনো পর্যন্ত ভারতের প্রথম নারী, যার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে।
কিন্তু শবনমের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সম্ভাবনা থাকলেও তার আইনজীবীরা তাকে দোষী মানতে নারাজ। আইনজীবী শ্রেয়া রাস্তোগী বলেন, তার মক্কেল কখনো খুনের দায় স্বীকারই করেননি। বরং তিনি জাতপাতের পক্ষাবলম্বনকারী পুরুষতান্ত্রিক সমাজ প্রথার বলি হচ্ছেন।
তবে সেই রাতের খুনের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের পাশাপাশি শবনম-সেলিম জুটি আরেকটি শিশুকেও এই জঘন্য পরিস্থিতির মধ্যে এনে ফেলে। আর সেই শিশু শবনমের ছেলে বিট্টু (ছদ্মনাম), যাকে শবনম দত্তক দেওয়ার আগপর্যন্ত জেলের ভেতরে বড় করেছিলেন।
এখন ১২ বছর বয়সী বিট্টু নিজের মায়ের প্রাণভিক্ষা চেয়ে আবেদন করেছে ভারতের রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দের কাছে।
খুনের কারণ কী?
শবনম কেন এই হত্যাকাণ্ড ঘটালেন, তা জানতে ফিরে যেতে হবে ২০০৮ সালের ভারতের উত্তর প্রদেশে। সেলিম ও শবনম একে অপরকে গভীরভাবে ভালোবাসলেও তাদের পরিবার এই সম্পর্ক মেনে নেয়নি।
ওই সময়ে ২২ বছর বয়সী শবনম ছিলেন সাইফি গোত্রের একজন শিক্ষিকা। অন্যদিকে, সেলিম ছিলেন ২৪ বছর বয়সী একজন বেকার পাঠান যুবক।
সাধারণত ভারতে জাত-গোত্র প্রথা হিন্দু সমাজে প্রকট হলেও, মুসলিম সমাজও পিছিয়ে নেই এক্ষেত্রে। একই ধরনের জাত প্রথা মুসলিম সমাজেও রয়েছে, যা মূলত আরব বিশ্বের কোনো অংশ থেকে তারা এসেছে, এর ওপর নির্ভর করে।
পরিবারগুলোতে এখনো প্রায়ই নিজ গোত্রের ভেতরে বিয়ে করতে চাপ দেওয়া হয়। আর এই কাজে ব্যর্থ হলে তা মারামারি থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ মাত্রায় 'অনার কিলিং' পর্যন্ত যেতে পারে।
তবে এই হত্যাকাণ্ডের আগেই শবনমের মৃত ভাবি আনজুমের বাবা লাল মোহাম্মদ পুলিশকে একটি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন সেলিম-শবনমের সম্পর্কের ব্যাপারে। তিনি ২০০৮ সালে আদালতে বয়ানে জানান, শবনমের ভুল পথে পা বাড়ানো নিয়ে ঘরের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল।
শবনম যে স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন, সেখানে তার সহকর্মী নিশ্চয় ত্যাগী জানান, শবনম তাকে বলেছেন, তিনি সেলিমকে ভালোবাসেন; কিন্তু তার পরিবার এর বিরোধিতা করেছে। শবনমের চাচাতো ভাই সুখন আলীও আদালতে জানান, সেলিম প্রায়ই শবনমের সঙ্গে দেখা করতে তাদের বাড়িতে যেতেন। কিন্তু শবনমের বাবা তা পছন্দ করতেন না এবং মেয়েকে মারধর করতেন।
খুনের রায়ে জেলা জজ এসএএ হুসেইনি জানান, স্থানীয়রা তাদের এই 'হারাম' সম্পর্ক ও সন্তান জন্মদান মেনে নিতে পারেনি। কিন্তু সাতজন মানুষ খুন করা ছাড়াও শবনম চাইলেই অন্য উপায় অবলম্বন করতে পারতেন; বাওয়ান খেরির রক্ষণশীল সমাজ থেকে পালাতে পারতেন।
তবে খুনের সময় শবনম নিজের গর্ভধারণের কথা জানতেন কি না, তা স্পষ্ট নয়।
আদালত জানান, শবনম তার পুরো পরিবারকে খুন করেছেন তাদের সম্পত্তির একমাত্র উত্তরাধিকারী হয়ে সেলিমের সঙ্গে সুখে জীবনযাপন করতে। কিন্তু শবনমের আইনজীবী শ্রেয়া রাস্তোগির মতে, আদালত তাদের এই দাবির কোনো প্রমাণই দেখাতে পারেননি।
তিনি আরও দাবি করেন, শবনম গ্রেপ্তার হওয়ার পর রুটিন মাফিক মেডিক্যাল চেকআপের সময়ই তার গর্ভধারণের বিষয়টি জানতে পারেন।
এক কাপ চা দিয়ে শুরু!
২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল শবনম তার পরিবারের সান্ধ্যকালীন চায়ের সঙ্গে সেলিমের এনে দেওয়া এক প্রকার ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেন এবং পরিবারের সবাইকে খাওয়ান। সবাই ঘুমে অচেতন হয়ে যাবার পর কুঠার হাতে ঘরে ঢুকেন সেলিম। খুনের পরদিন সেলিম নিজেই জেলা পুলিশের সঙ্গে সংযোগ আছে- এমন এক স্থানীয় চা বিক্রেতা বিলাল আহমদের কাছে নিজের সম্পৃক্ততা স্বীকার করেন।
তবে সেলিম আশা করেছিলেন, এই খুনের সঙ্গে চা বিক্রেতা আহমদের সংযোগ তাকে শাস্তি থেকে রক্ষা করবে। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে তা হয়নি। সেলিমের স্বীকারোক্তি পুলিশকে জানিয়ে দেন আহমদ এবং পরে আদালতেও জানান।
অন্য সাক্ষীরা ছিলেন স্থানীয় ফার্মেসির লোকজন। খুনের আগেরদিন সেলিম তাদের কাছে ঘুমের ওষুধ চাইতে গেলেও তারা তাকে দেননি। কারণ, ভারতে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া কড়া ঘুমের ওষুধ বিক্রি হয় না। এরপর সেলিম একজন ফল বিক্রেতার কাছ থেকে ওষুধগুলো সংগ্রহ করেন।
খুনের পরদিন মহেন্দ্র সিং নামে একজন স্থানীয় প্রাশাসনিক কর্মকর্তার কাছেও সেলিম তার অপরাধ স্বীকার করেন। আদালতে মহেন্দ্র সিং সাক্ষ্য দেন, সেলিম তার কাছে রাজনৈতিক যোগাযোগ ব্যবহার করে তাকে জেলে না যেতে সাহায্য চেয়েছিলেন।
প্রাথমিক পর্যায়ে শবনম দাবি করেন, গুন্ডারা ঘরে ঢুকে এই খুন করেছে। কিন্তু সেই তথ্যের কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় পুলিশ তা নাকচ করে দেয়।
এছাড়াও পুলিশি গ্রেপ্তারের পর শবনমের কাছ থেকে খালি ওষুধের প্যাকেট পাওয়া যায় এবং সেলিম একটি পুকুর থেকে রক্তমাখা কুড়াল বের করে আনেন বলে আদালতে বলা হয়।
২০১৫ সালে এই মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্ট জানান, শবনম ইচ্ছা করেই সেদিন তার বাবার পাশে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকার ছলনা করেছিলেন, যেন মানুষ দেখে ভাবে, এটি বাইরের লোকের কাজ।
নিজেরা ভালোবেসে একে অপরের সঙ্গে থাকতে চাইলেও এই হত্যাযজ্ঞের পর আদালতে সেলিম ও শবনম পরস্পরের বিরোধিতা করেন। শবনম দাবি করেন, সেলিম একাই সবাইকে খুন করেছেন। অন্যদিকে সেলিমের দাবি ছিল, শবনম সবাইকে খুন করার পর বসে বসে মদ্যপান করছিলেন এবং সেলিমকে কল দিয়ে আসতে বলেন খুনের প্রমাণাদি সরিয়ে ফেলতে।
জেলা আদালত সাতজনকে খুনের দায়ে শবনম-সেলিম জুটিকে অভিযুক্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেন। এরপর অভিযুক্তরা উত্তর প্রদেশের মূল আদালত ও ভারতীয় সুপ্রীম কোর্ট পর্যন্ত আপিল করলেও প্রতিবারই তাদের নির্দোষ হওয়ার দাবি নাকচ করে দেওয়া হয়।
জেলের ভেতরেই শিশুর জন্ম
হত্যাকাণ্ডের আট মাস পর ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে কারাগারে শবনম ও সেলিমের সন্তান বিট্টু (আসল নাম নয়) জন্ম নেয়। বিট্টু এই মুহূর্তে তার পালক পিতার কাছে আছে এবং তিনি সিএনএনকে অনুরোধ করেছেন যেন ছেলের আসল নাম ব্যবহার করা না হয়। কারণ তিনি ভয় পাচ্ছেন, অন্যথায় বিট্টুকে হয়তো সমাজের কটুবাক্য শুনেই বড় হতে হবে।
কারাগারে বিট্টুকে জন্ম দেওয়ার পর ছয় বছর বয়স পর্যন্ত সে মায়ের সঙ্গেই ছিল। শবনমের আইনজীবী শ্রেয়া রাস্তোগির দাবি, ছেলের প্রতি শবনমের প্রবল স্নেহ রয়েছে। কারাগারেই তাকে লেখাপড়া শেখানোর চেষ্টা করতেন তিনি।
বিট্টু ছয় বছরে পা রাখার পর শবনমের সাবেক কলেজ সহপাঠী বন্ধু উসমান সাইফি বিট্টুকে দত্তক নিতে চান। উসমান সাইফি একজন সাংবাদিক এবং তিনি এই খুনের ঘটনা নিয়ে একটি বই লিখতে চেয়েছিলেন।
সাইফি বলেন, "প্রথমদিন বলার পর সে (শবনম) আমাকে মানা করে দিয়েছিল। কারণ আমি এমন একটা প্রশ্ন করেছিলাম, যা আমার করাই উচিত হয়নি। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, 'তুমি কেন খুন করেছ?' আমার ও আমার স্ত্রীর কাছে বিট্টু ভালো থাকবে- এটা দীর্ঘদিন ধরে বোঝানোর পর ২০১৫ সালে শবনম রাজি হয় তার ছেলেকে দিতে।'
সাইফি জানালেন, বিট্টু খুবই শান্ত ও ভদ্র ছেলে এবং সে সবাইকে সম্মান করে কথা বলে। এ যেন গোবরে পদ্মফুল ফোটার মতোই ব্যাপার।
কিন্তু বিট্টুর জীবন অত সহজ নয়। মায়ের অপরাধ নিয়ে তার দিকে গণমাধ্যমের দৃষ্টি থাকায় সে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছে না।
'একদিন সে মসজিদে গিয়েছিল, কেউ একজন সেখানে তাকে বলেছে, এটা তো শবনমের ছেলে, ওর মায়ের এখন ফাঁসি হবে। এই ঘটনায় বিট্টু মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল', বললেন সাইফি।
শুধুমাত্র বিট্টু যেন তার মাকে না হারায়, সেজন্য সাইফি ও তার স্ত্রীও এখন শবনমের ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে লড়ছেন।
ফাঁসির অপেক্ষা
শবনমের এই অপরাধের ঘটনা কর্নেল ল স্কুল সেন্টারের মাধ্যমে গবেষণা করা হয়েছে। তাদের মতে, প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থার ফলে তার এই অপরাধকে 'লিঙ্গ ইস্যু' দিয়ে বেশি বিচার করা হচ্ছে। তিনি নারী বলেই তাকে 'শিশু হত্যাকারী' বা 'ডাইনি' রূপে দেখা হচ্ছে এবং সে অনুযায়ীই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু ভারতীয় সুপ্রীম কোর্ট একে একটি বিরলতম অপরাধ হিসেবে গণ্য করেছেন বলে জানান এবং সকল সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতেই সেলিম ও শবনমের মৃত্যুদণ্ড পাওয়া উচিত বলে মনে করেন।
২০১৫ সালে তাদের বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারি হলেও প্রজেক্ট ৩৯-এ নামের আরেকটি বিরোধী পক্ষ এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে। তারা মনে করেন, বিচারপ্রক্রিয়া বাকি থাকতেই তাড়াহুড়ো করে রায় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শবনমের বিরুদ্ধে এখনো মৃত্যু পরোয়ানা জারির আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
এ বছরের ফেব্রুয়ারিতেই শবনম ও সেলিমের আইনজীবী উত্তর প্রদেশের গভর্নরের কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়ে আবেদন করেন।
শবনমের আইনজীবী শ্রেয়া রাস্তোগির মতে, মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার আগে অবশ্যই কোর্টের দেখা উচিত, অভিযুক্তের কোনো সংশোধন ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা আছে কি না। তিনি প্রশ্ন করেন, 'এক্ষেত্রে একজন মায়ের সঙ্গে তার ছেলের সম্পর্ক বিচারের চেয়ে ভালো কোনো উপায় আছে কি?'
তবে ফেব্রুয়ারিতেই ভারতের একজন জল্লাদ মথুরা জেল পরিদর্শনের পর শবনমের ফাঁসির গুঞ্জন আরও জোরালো হয়েছে। প্রসঙ্গত, মথুরা জেলই ভারতে নারীদের ফাঁসি দেওয়ার জন্য একমাত্র জেল।
উত্তর প্রদেশের কারাগারের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল অখিলেশ কুমার জানান, মৃত্যু পরোয়ানা জারি না হওয়া পর্যন্ত তারা কিছুই করতে পারবেন না।
ভারতের মতো দেশে যেখানে মানুষ মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে, সেখানে ৬৬ বছর পর কোনো নারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলে তা নিশ্চিতভাবেই একটি ভুল পথে পা বাড়ানো হবে। যদিও মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে বৈশ্বিক আবেদনের ভিত্তিতে জাতিসংঘে যে ভোটগ্রহণ করা হয়, ভারত তার বিপক্ষে ভোট দিয়েছে।
সাইফি বিশ্বাস করেন, ছেলের খাতিরে হলেও শবনমকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে। ফেব্রুয়ারিতে শবনমের ফাঁসির গুঞ্জন উঠলে তার ছেলে বিট্টুকে দেখা যায় একটি ব্ল্যাকবোর্ড হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে চক দিয়ে রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দের উদ্দেশ্যে পরিস্কার ভাবে লেখা, 'প্রেসিডেন্ট আঙ্কেল, দয়া করে আমার মা শবনমকে ক্ষমা করে দিন।'
সাইফি ভীতভাবে তার শেষ আকুতি জানালেন, 'যদি শবনমের ফাঁসি হয়, তাহলে শুধু শবনমই হারিয়ে যাবে না, হারিয়ে যাবে বিট্টুও। আর আমাদের আর কোনো সন্তান নেই, বিট্টুই আমাদের একমাত্র আশা।'
- সূত্র: সিএনএন