সাইবার শক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের চাইতে এক দশক পিছিয়ে চীন
দুর্বল নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণের গুণগত সক্ষমতার অভাবে সাইবার শক্তি হিসেবে চীনের অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিশালী নয়। এসব দুর্বলতা কাটিয়ে প্রতিপক্ষ যুক্তরাষ্ট্রের পর্যায়ে পৌঁছাতে দেশটির অন্তত এক দশক সময় লাগবে বলে সাম্প্রতিক এক আন্তর্জাতিক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়।
গত সোমবার (২৮ জুন) যুক্তরাজ্য ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (আইআইএসএস) এ গবেষণা প্রকাশিত হয়। বিশ্বব্যাপী যখন পশ্চিমা স্থাপনায় হ্যাকার গোষ্ঠীর আক্রমণ বাড়ছে এবং চীন, রাশিয়া ও উ. কোরিয়ার মতো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অনলাইন গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ উঠেছে, তার প্রেক্ষাপটে এটি প্রকাশিত হলো।
গত ডিসেম্বরে মার্কিন কর্মকর্তারা আবিষ্কার করেন, রুশ গোয়েন্দা সংস্থা- এসভিআর যুক্তরাষ্ট্রের সোলারউইন্ডস নামক একটি তথ্যপ্রযুক্তি সেবাদাতা কোম্পানির সফটওয়্যার হ্যাক করে বাণিজ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়সহ ওয়াশিংটনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু সরকারি স্থাপনায় অনুপ্রবেশ করেছে। তার তিন মাস পর মাইক্রোসফটের ইমেইল সফটওয়্যারে চীনের রাষ্ট্র সমর্থিত হ্যাকাররা অনুপ্রবেশ করেছে বলে অভিযোগ আনা হয়। চীনা হ্যাকাররা যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি সংস্থাসহ বিভিন্ন গবেষণা সংস্থাকে লক্ষ্যবস্তু করেছিল।
সাইবার শক্তির অনেক রকম সক্ষমতার ভিত্তিতে বিভিন্ন দেশের র্যাঙ্কিং তালিকা প্রস্তুত করেছে আইআইএসএস। সংশ্লিষ্ট দেশের ডিজিটাল অর্থনীতির শক্তি, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের পরিপক্বতা এবং সামরিক কার্যক্রমের সঙ্গে সাইবার স্থাপনাগুলো কতোটা ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে পারছে- এমন অনেক বিষয়কে মাপদণ্ড ধরে এ তালিকা করা হয়।
প্রতিবেদনটি জানায়, আক্রমণাত্মক সাইবার অপারেশনে রাশিয়ার মতো চীনও দক্ষতার সঙ্গে গুপ্তচরবৃত্তি, মেধাস্বত্ব ভঙ্গ করে চুরিসহ যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র রাষ্ট্রগুলোর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। কিন্তু, পশ্চিমা প্রতিপক্ষের তুলনায় এ দুই দেশের সাইবার নিরাপত্তা বেশ শিথিল বলে উল্লেখ করে থিঙ্ক ট্যাঙ্কটি।
ফলে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রথম সাড়ির সাইবার শক্তি হিসেবে র্যাঙ্কিং তালিকায় স্থান দেওয়া হয়। দ্বিতীয় সাড়িতে স্থান পেয়েছে চীন, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফ্রান্স ও ইসরায়েলের মতো রাষ্ট্র। আর তৃতীয় সাড়িতে আছে ভারত, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, মালয়েশিয়া, উত্তর কোরিয়া, ইরান ও ভিয়েতনাম।
এব্যাপারে আইআইএসএস- এর সাইবার, স্পেস অ্যান্ড ফিউচার কনফ্লিক্ট বিশেষজ্ঞ গ্রেগ অস্টিন বলেন, "কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় বিশ্ব নেতৃত্ব দেওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষাসহ গণমাধ্যমে শুধু চীনের ডিজিটাল অগ্রসরতার ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরা হয়, এর ফলে দেশটির প্রকৃত সাইবার দক্ষতার চাইতে বাড়িয়ে বলার চর্চা তৈরি হয়েছে।"
"প্রায় সব দিক থেকে চীনের সাইবার নিরাপত্তার দক্ষতা অন্য অনেক দেশের তুলনায় খুব বাজে অবস্থানে রয়েছে," তিনি যোগ করেন।
গবেষণা সংস্থাটির প্রতিবেদন অনুসারে, নিজ দেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর তথ্য দমন বা 'কন্টেট সিকিউরিটি'তে বেশি মনোযোগ দেয় চীন, কিন্তু এসব তথ্যের বাহক নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা শক্তিশালী করতে পারেনি। একইসঙ্গে, চীনের সাইবার গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণকে 'ফাইভ ইন্টেলিজেন্স আই' খ্যাত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের চেয়ে অনেক কম পরিপক্ব বলেও উল্লেখ করা হয়।
- সূত্র: ফিন্যান্সিয়াল টাইমস