যে বৈঠক থেকে সারাবিশ্বে ছড়িয়েছে করোনা
চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে কোভিড-১৯ নামে যে করোনা ভাইরাসটি ছড়িয়েছে ডিসেম্বরের শেষ দিকে তাতে এ পর্যন্ত ১৮৬৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতের সংখ্যা উৎপত্তিস্থল চীনে সবচেয়ে বেশি হলেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তা ছড়িয়ে পড়েছে এবং বেশ কয়েকজনের মৃত্যুও হয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে, চীন থেকে দ্রুততম সময়ে কীভাবে এই ভাইরাসটি বিশ্বের অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
বিবিসি তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে সিঙ্গাপুরের অভিজাত গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে একটি আন্তর্জাতিক সেলস কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ১০০ জনেরও বেশি মানুষ যোগ দেন। সম্মেলনটির মাত্র এক সপ্তাহ পরই দক্ষিণ কোরিয়া থেকে শুরু করে মালয়েশিয়া; এমনকি যুক্তরাজ্য ও স্পেনে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ধরা পড়া শুরু করে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ৪১ বছর বয়সী যে মালয়েশিয়ান ব্যক্তির শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত করা হয় তিনি চীন থেকে আগত তার সহকর্মীদের সঙ্গে ওই সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে তার বোন এবং শাশুড়িও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন।
দক্ষিণ কোরিয়া তাদের যে দুই নাগরিককে প্রথমবারের মতো করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করে তারাও ওই সম্মেলনে গিয়েছিলেন। সিঙ্গাপুর তাদের দুই নাগরিক ও একজন স্থায়ী বসবাসকারীসহ তিনজনের করোনা শনাক্ত করেন যারা ওই সম্মেলনে ছিলেন। স্টিভ ওয়ালশ নামে যে ব্রিটিশ নাগরিকের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত করা হয় তিনিও ও সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন।
সম্মেলন শেষে এই ব্রিটিশ নাগরিক দেশে ফেরার পথে ছুটি কাটাতে ফ্রান্সের স্কি রিসোর্টে যান। ধারণা করা হচ্ছে ইংল্যান্ডে পাঁচ, ফ্রান্সে পাঁচ ও স্পেনের এক নাগরিকের মধ্যে যে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে তা ওয়ালশ নামে এই ব্যক্তির কাছ থেকে ছড়িয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে স্থান হিসেবে সিঙ্গাপুর কীভাবে অন্যতম কেন্দ্রতে পরিণত হয়েছে তা এই একটি বৈঠকই স্পষ্ট করেছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের জন্য অন্যতম গন্তব্য হওয়ায় করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রে অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ সিঙ্গাপুর। ছোট্ট শহুরে এই দেশটির সঙ্গে ব্যবসা ও পর্যটনে সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক চীনের সঙ্গে। দেশটির পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী কেবলমাত্র ২০১৯ সালে ৩ দশমিক ৬২ মিলিয়ন চীনা নাগরিক সিঙ্গাপুর গমন করেন।
সরকার বিরোধী আন্দোলন চলতে থাকায় হংকং পরিহার করে নতুন চান্দ্র বর্ষের ছুটিতে চীনা নাগরিকদের অনেকেই এবার ছুটি কাটাতে সিঙ্গাপুরকে বেছে নিয়েছেন। আর এমন সময়েই শুরু হলো করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি।