যুদ্ধবিরতির পর সাহায্য আসতে শুরু করেছে গাজায়
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে যুদ্ধবিরতির কয়েক ঘণ্টা পরেই গাজায় এসে পৌঁছেছে প্রথম মানবিক সাহায্যের বহর।
যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নাগরিক বাড়ি ফিরে এসে দেখেছেন, সেগুলো আর বসবাসের যোগ্য নেই, বরং গোলাবারুদের আঘাতে বিধ্বস্ত। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এসব ক্ষয়ক্ষতি মেরামত করতে কয়েক বছর লেগে যাবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) আহত ব্যক্তিদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য করিডর তৈরির আহ্বান জানিয়েছে।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের মধ্যে সাম্প্রতিক ১১ দিনের ভয়াবহ সংঘাতে ২৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই গাজার অধিবাসী। তবে হামাস ও ইসরায়েল- দুই পক্ষই যুদ্ধে নিজেদের বিজয় ঘোষণা করেছে।
ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দারা সাময়িক যুদ্ধবিরতি উদযাপন করলেও অনেকেই আশঙ্কা করছেন, পুনরায় সহিংসতা তৈরি হওয়া সময়ের ব্যাপারমাত্র।
ইসরায়েল 'কেরেম শালম ক্রসিং' খুলে দেওয়ার পর জাতিসংঘ ও এর অঙ্গসংগঠনসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে ট্রাকভর্তি জরুরি ওষুধ, খাদ্য ও জ্বালানি সাহায্য আসতে শুরু করেছে গাজায়।
হামাস বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন এই সীমান্ত থেকে এক লাখেরও বেশি মানুষকে ঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছিল। ইউনিসেফ জানায়, প্রায় আট লাখ মানুষের কাছে ছিল না পাইপের পানি সরবরাহ।
ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যেই দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত ও কোভিড-১৯ আক্রান্ত ছিটমহল অঞ্চলটিকে পুনর্নিমাণ করতে কয়েক মিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন হবে।
হাজার হাজার মানুষ আহত হওয়ায় এই মুহূর্তে সীমান্তের জনসাধারণের স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা জানিয়ে সেখানে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা পাঠাতে বলেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র মার্গারেট হ্যারিস।
বছরের পর বছর ধরে গাজার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে রেখেছে ইসরায়েল ও মিসর। হামাসের কাছে অস্ত্র পৌঁছাতে পারে ভেবে এই সীমান্ত দিয়ে পণ্য পরিবহণ বা মানুষের যোগাযোগে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
ইউএন এজেন্সি ফর প্যালেস্টাইনিয়ান রিফিউজিস (ইউএনডব্লিউআরএ) এ অঞ্চলের হাজার হাজার বাস্তুহারা মানুষকে সাহায্য করা তাদের মূল লক্ষ্য বলে জানিয়েছে এবং তার জন্য জরুরি ভিত্তিতে ৩৮ মিলিয়ন ডলার সাহায্য চেয়েছে।
বৃহস্পতিবার গাজার আবাসন মন্ত্রণালয় জানায়, তাদের ১৮০০ হাউজিং ইউনিট এখন বসবাসের অযোগ্য এবং ধ্বংস হয়ে গেছে আরও এক হাজার।
ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেডক্রসের (আইসিআরসি) মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের পরিচালক ফ্যাব্রিজিও কার্বনি বলেন, 'মাত্র দুই সপ্তাহে এ ধ্বংসযজ্ঞ তৈরি হয়েছে। এগুলো ঠিক করতে বেশ কয়েক বছর সময় তো লাগবেই।'
সামিরা আবদাল্লাহ নাসের নামে এক নারী জানালেন, বিত হানুনের কাছে অবস্থিত তার দোতলা বাড়ি বোমায় উড়ে গেছে। তিনি সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, 'ফিরে এসে দেখলাম, আমাদের আর থাকার জায়গা নেই, পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই, শোয়ার বিছানা নেই; আমাদের এখন আর কিছুই নেই।'
আরেক বাসিন্দা আজহার সাইর জানান, তিনি এ পর্যন্ত এতটা ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ আর দেখেননি।
এদিকে যুদ্ধবিরতির পর বম্ব শেল্টার বা বোমা থেকে বাঁচার জন্য তৈরি আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছেন ইসরায়েলিরা। জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়া হয়েছে ইসরায়েলে এবং স্কুলগুলোও রোববার থেকে চালু হবে বলে জানানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, হামাসের ছোঁড়া ৪৩০০ রকেটের ৯০ শতাংশই তাদের এয়ার ডিফেন্সের মাধ্যমে প্রতিরোধ করা গেলেও, বাকি দশ শতাংশের আঘাতে তাদের কিছু বাড়িঘর, ভবন ও উপাসনালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইতোমধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঘোষণা দিয়েছেন, 'টু-স্টেট সল্যুশন' বা দ্বি-রাষ্ট্র ব্যবস্থাই এখন সংঘাত মোকাবিলার একমাত্র পথ। তিনি আরও বলেন, এই অঞ্চলের মানুষ যদি ইসরায়েলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার অধিকার আছে বলে দ্বার্থহীনভাবে মেনে না নেয়, তাহলে শান্তি বজায় রাখা সম্ভব হবে না।
গাজায় ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক সহায়তা পাঠাবে বলেও জানিয়েছেন বাইডেন।
-
সূত্র: বিবিসি