মুক্তি পেলেন মিয়ানমারের মুসলিমবিরোধী কুখ্যাত সন্ন্যাসী বিরাথু
অং সান সু চির ক্ষমতাচ্যুত সরকারের আনা রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ প্রত্যাহারের পর জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধ সন্ন্যাসী বিরাথুকে মুক্তি দিয়েছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী।
সোমবার এক সামরিক বিবৃতিতে বলা হয়, মিয়ানমারে ধর্মীয় বিদ্বেষ জাগিয়ে তোলার জন্য 'টাইম ম্যাগাজিন' যাকে 'দ্য ফেস অব বুদ্ধিস্ট টেরর' বলে অভিহিত করেছিল, সে বিরাথু'কে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
তবে বিস্তারিত বিবরণ না দেওয়া সে বিবৃতিতে বলা হয়, তিনি 'একটি সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।'
কেন্দ্রীয় শহর মান্দালয়ের বাসিন্দা বিরাথু ২০০১ সালে মুসলিমবিরোধী ৯৬৯ গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হন এবং ২০০৩ সালে প্রথমবারের মতো কারাভোগ করেন। ২০১০ সালে জেল থেকে ছাড়া পান তিনি।
পরবর্তীকালে পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে বৌদ্ধ এবং জাতিগত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের মধ্যে দাঙ্গা শুরু হওয়ার দুই বছর পর মিয়ানমারে পরিচিতি লাভ করেন বিরাথু।
এছাড়া, তিনি একটি জাতীয়তাবাদী সংগঠনও প্রতিষ্ঠা করেন। মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উস্কে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয় তার সেই সংগঠনের বিরুদ্ধে। তাছাড়া আন্তঃধর্মীয় বিবাহকে জটিল করে তোলার জন্য আইন তদবিরেও সফল ছিলেন তিনি।
২০১৭ সালে, মিয়ানমারের সর্বোচ্চ বৌদ্ধ কর্তৃপক্ষ তাকে এক বছরের জন্য ধর্ম প্রচার করতে নিষেধ করে। এরপর ২০১৮ সালে তার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয় ফেসবুক।
কিন্তু ৫৩ বছর বয়সী এ সন্ন্যাসী জাতীয়তাবাদী সমাবেশে নিয়মিত অংশ নিয়েছেন এবং অং সান সু চি'র সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিলেন। সু চি'র সরকার সেনাবাহিনী প্রণীত সংবিধান পুনর্লিখনের ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন বিরাথু।
২০১৯ সালের মে মাসে তৎকালীন সরকারের প্রতি 'উত্তেজনাপূর্ণ অসন্তুষ্টি' এবং 'ঘৃণা বা অবমাননা'র দায়ে অভিযুক্ত করা হয় তাকে। পরবর্তীকালে গত বছর আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
গত ১ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকেই অশান্তি বিরাজ করছে মিয়ানমারে। সেনা অভ্যুত্থানের ফলে শুরু হওয়া ব্যাপক প্রতিবাদ আন্দোলন দেশটির অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছে। এ প্রতিবাদ আন্দোলনে হামলা চালায় সেখানকার জেনারেলরা। গ্রেপ্তার ও মৃত্যু পর্যবেক্ষণকারী সংগঠন 'অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্সের' মতে, শিশুসহ এক হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এই হামলায়।
বিরাথু রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারে ব্যাপক কুসংস্কার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এসব মুসলমানের মধ্যে অনেকের পরিবার মিয়ানমারে কয়েক প্রজন্ম ধরে বসবার করলেও তাদেরকে বাংলাদেশ থেকে আসা অভিবাসী হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।
২০১৭ সালে মিয়ানমারের পুলিশ পোস্টগুলোতে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার ফলে নৃশংস এক সামরিক অভিযান শুরু হয়। ফলে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। এ ঘটনা বর্তমানে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে একটি গণহত্যার মামলা হিসেবে উল্লেখিত আছে।
এদিকে, বিরাথুর বেশ বড় এক অনুসারী দল ছিল এবং তাকে সামরিক বাহিনীর সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতে দেখা যেত। কিন্তু কারাগারে থাকাকালে সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে তিনি সেনাবাহিনী পরিচালিত সরকার সম্পর্কে তিক্ত অভিজ্ঞতার অভিযোগ করেছিলেন।
'মিয়ানমার নাউ' নামে একটি স্বাধীন গণমাধ্যম জানায়, জাতীয়তাবাদী সমর্থকদের চালানো প্রচারাভিযানের কারণে বিরাথুকে 'ক্ষমা' করে দিয়েছে সেনাবাহিনী। এছাড়াও ওই গণমাধ্যমে একজন সমর্থকের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, বিরাথু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন এবং তার 'স্বাস্থ্য ভালো ছিল না।'
জেনারেলরা ফেব্রুয়ারিতে ক্ষমতা দখল করার পর আটক করা হয় তৎকালীন সরকার প্রধান অং সান সু চি'কে। করোনাভাইরাসের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করা, দুর্নীতি এবং অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট লঙ্ঘন-সহ বিভিন্ন অভিযোগের মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাকে।
-
সূত্র: আল-জাজিরা