মিয়ানমারের রাজপথে রক্তের স্রোত, মানবতাবিরোধী অপরাধের শঙ্কা জাতিসংঘের
গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলন দমনে নির্মমতা চরমে উঠেছে মিয়ানমারে। গত বৃহস্পতিবার অন্তত ১২ বিক্ষোভকারীর মৃত্যুর কথা জানায় একটি পর্যবেক্ষক গোষ্ঠী। জাতিসংঘের শীর্ষ এক কর্মকর্তা চলমান দমনপীড়ন "মানবতাবিরোধী অপরাধের পর্যায়ে পৌঁছানোর" আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
রাজনৈতিক অধিকার গোষ্ঠী অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিকাল প্রিজনার্স (এএপিপি) জানায়, বৃহস্পতিবার দেশটির কেন্দ্রীয় ছোট শহর মিয়াং- এ নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের ভিড়ে গুলি চালায় পুলিশ। ঘটনাস্থলেই তাতে প্রাণ হারান ৮ জন। সামাজিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে শহরটির রক্তস্নাত রাজপথ আর সড়কজুড়ে পড়ে থাকা ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ। একটি ছবিতে দেখা যায় গুলিতে মাথা ফেটে চৌচির হওয়া একটি লাশ, মৃতের মগজ ছড়িয়ে পড়েছে পথেই।
গতকালকে (১১ মার্চ) ছোট্ট জনপদ মিয়াং এর ঘটনা ইঙ্গিত দেয় যে, শুধু বড় শহর বা প্রধান নগরে নয়; সামরিক জান্তা নির্মমতার আশ্রয় নিয়ে মিয়ানমারের সবখানে তাদের স্বেচ্ছাচারী নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে চায়।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বৃহস্পতিবার সবচেয়ে বড় শহর ইয়াঙ্গুনের উত্তর দাগোন এলাকায় চিত মিন থু নামের এক বিক্ষোভকারীর নিহত হওয়ার কথা নিশ্চিত করে। নিহতের স্ত্রী আয়ে মিয়াত থু বার্তা সংস্থাটিকে জানান, আমাদের শিশুপুত্রের মুখের দিকে চেয়ে ওকে আমি অনেকবার বিক্ষোভে যোগ না দেওয়ার অনুরোধ করি। "কিন্তু সে বলে, গণতন্ত্রের জন্য জীবন দেওয়া যায়। সবাই যদি ভয়ে আন্দোলনে যোগ না দেয় তাহলে দেশে গণতন্ত্র ফিরবে না, বলেই সে আশঙ্কা করেছিল।"
গত ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের পর থেকে কমপক্ষে ৮০ জন আন্দোলনকারী নিহত এবং কয়েকশ' জন আহত হয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক দপ্তর। জাতিসংঘের হিসাবে এরমধ্যে চারটি প্রাণহানি ঘটেছে জান্তা প্রশাসনের নিরাপত্তা হেফাজতে, যার মধ্যে অং সান সু চি'র ক্ষমতাচ্যুত সরকারি দল এনএলডি'র শীর্ষ দুজন কর্মকর্তাও রয়েছেন।
এএপিপি'র মতে, এপর্যন্ত অন্তত ২,০০০ জন গণ-গ্রেপ্তারের শিকার হয়েছে। আটককৃতদের বন্ধু ও পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হচ্ছে না। অধিকাংশকে অজ্ঞাতস্থানে রাখায় তাদের সর্বশেষ অবস্থাও জানতে পারছে না কেউ।
তবে গত বুধবার সামরিক বাহিনী পরিচালিত একটি রাষ্ট্রায়ত্ত দৈনিকের প্রজ্ঞাপনে, আন্দোলনকারীদের উপর ন্যূনতম শক্তি ব্যবহারের দাবি করা হয়।
এঅবস্থায় মিয়ানমারে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুজ জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের উদ্দেশ্যে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, "বেশ কিছু ঘটনার প্রেক্ষিতে দেখা যাচ্ছে, জান্তা নিয়ন্ত্রিত নিরাপত্তা বাহিনী নির্বিচার হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করছে। একইসঙ্গে, তারা আটককৃতদের জেলে বন্দি রেখে, অন্যায় বিচারের সম্মুখীন করে পরিকল্পিতভাবে ব্যাপক আকারে দমনাভিযান চালাচ্ছে। জান্তা সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের সম্মতিতেই সবকিছু ঘটছে।"
শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমনে এমন প্রতিক্রিয়াকে তিনি "বর্বরোচিত কাজ" বলে উল্লেখ করে জানান, "খুব সম্ভবত তারা মানবতার বিরুদ্ধে পরিকল্পিত অপরাধ সংগঠনের সকল শর্ত পূরণ করে ফেলেছে।"
তিনি জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর প্রতি মিয়ানমারের জান্তাকে অর্থ ও অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করার আহবান জানান এবং শীর্ষ সামরিক নেতৃত্ব, সামরিক বাহিনী পরিচালিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আর দেশটির রাষ্ট্রীয় জ্বালানি কোম্পানির উপর বহুমাত্রিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিৎ বলেও মন্তব্য করেন।
ইতোপূর্বে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গোষ্ঠী অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে সামরিক বাহিনী প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে 'হত্যালীলা'য় মেতেছে বলে উল্লেখ করা হয়। তারপর এই বিবৃতি দেন টম অ্যান্ড্রুজ।
- সূত্র: সিএনএন