মিশর-ইসরায়েল সীমান্ত বরাবর দ্বিতীয় সুয়েজ খাল নির্মাণের পরিকল্পনা
কন্টেইনারবাহী জাহাজ এভার গিভেন আটকে এক সপ্তাহ ধরে অচল হয়ে পড়েছিল বিশ্বের ব্যস্ততম নৌ-সংযোগ পথ সুয়েজ খাল। এভার গিভেন মুক্ত হলেও ওই ঘটনায় টনক নড়েছে সংশ্লিষ্টদের। বিশেষ করে, পণ্যবাহী জাহাজগুলো যেভাবে দৈত্যাকৃতির হয়ে উঠছে, তাতে আগামীতে নতুন আরেকটি সুয়েজ খাল নির্মাণের প্রয়োজন হবে বলে মনে করা হচ্ছে। আর সেই চিন্তামাফিক আন্তর্জাতিক মহলের তৎপরতাও চোখে পড়ছে।
নতুন খালটি নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে মিশর ও ইসরায়েলের সীমান্ত বরাবর। পরিকল্পনাটি জাতিসংঘ কর্মকর্তারা যাচাই করে দেখছেন বলে জানিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান। ইতোপূর্বে, তারা ইরাক ও সিরিয়ার মধ্যে দিয়ে নির্মাণের জন্য প্রস্তাবিত অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ রুটের পরিকল্পনা নাকচ করে দেন।
সুয়েজের মতো দ্বিতীয় আরেকটি খাল নির্মাণ নিঃসন্দেহে হবে আরেক মহাকর্মযজ্ঞ। প্রয়োজন হবে বিপুল পুঁজির। তারপরও এনিয়ে উৎসাহের প্রধান কারণ, এভার গিভেনের সাম্প্রতিক ঘটনায় বিপুল আর্থিক ক্ষতি। এর ফলে মিশর সরকার কোটি কোটি পাউন্ড রাজস্ব হারিয়েছে মাত্র ছয় দিনে। আগামীতে, সুয়েজ মাসব্যাপী বন্ধ থাকার মতো সঙ্কট দেখা দিলে, তখন ক্ষতির অংক পর্বত-প্রমাণ হবে তাও বলাই-বাহুল্য। পাশাপাশি, এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে জ্বালানি, খাদ্য, শিল্পজাত পণ্য ও কাঁচামালের সরবরাহ বিচ্ছেদের হুমকি তৈরি করে সাম্প্রতিক সুয়েজ সঙ্কট। অথচ এই পথে টয়লেট পেপার থেকে শুরু করে আইফোন, পিপিই সবই রপ্তানি হয়। বাণিজ্যপথটির সচল গতির উপর নির্ভর করে কোটি কোটি মানুষের জীবিকা।
ইতোপূর্বে, সুড়ঙ্গ খননকারী আন্তর্জাতিক কোম্পানি ওএফপি ল্যারিওল'কে 'সুয়েজ-২' বা দ্বিতীয় খালের প্রকল্প সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের দায়িত্ব দিয়েছিল জাতিসংঘ। কোম্পানিটি জানায়, পাঁচ বছরের মধ্যে এটি খনন করা যাবে।
লোহিত সাগরের আকাবা উপসাগর থেকে সরাসরি 'সুয়েজ ২' খনন করা হবে।
প্রকল্প সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনের মূল লেখক আইভার শোভেল জানান, "১৮৫০ সালে প্রথম সুয়েজ খাল খননের সময় থেকে প্রযুক্তি অনেক এগিয়ে গেছে। দ্বিতীয় খাল খননে তাই বেশি সমস্যা দেখা দেবে না। তবে নতুন খালটি প্লাবিত করামাত্র ভুমধ্যসাগরের সাগরপৃষ্ঠের উচ্চতা কিছুটা কমতে পারে, ফলে আরও প্রশস্ত ও দীর্ঘ সৈকত তৈরি হতে পারে।"
সুয়েজ-২ নির্মাণে প্রধান ভূমিকা পালনের প্রস্তুতি রয়েছে যুক্তরাজ্য সরকারের। ব্রিটিশ সরকারি সূত্র গার্ডিয়ানকে জানায়, "ওই অঞ্চলের উন্নতি এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নির্মাণের" লক্ষ্যে নেওয়া যেকোনো প্রকল্পে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখার ইচ্ছে আছে তাদের। জাতিসংঘের কাছে জমা দেওয়া প্রকল্প পরিকল্পনা সম্পর্কেও তারা জ্ঞাত বলে স্বীকার করে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, "এধরনের নির্মাণকাজে আমাদের সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা আছে, উত্তর আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে প্রস্তাবিত সুড়ঙ্গের পরিকল্পনাটিও আমরা মিশরীয় কর্তৃপক্ষকে দিতে পারি।" তিনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের বৃহৎ অবকাঠামো নির্মাণকাজের সফল ট্র্যাক রেকর্ডও উল্লেখ করেন।
এছাড়া, নীল নদ থেকে লোহিত সাগর পর্যন্ত একদা প্রবাহিত প্রাচীন একটি নৌপথকেও পুনর্জীবিত করার আরেকটি প্রস্তাবনাও যাচাই করে দেখছেন জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্ব সংস্থাটির মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের ওয়াটার ডিভিশন ম্যানেজমেন্ট শাখার বিশেষজ্ঞ মো সেজ বলেন, "এই আইডিয়াটি সত্যিই চমৎকার।" বর্তমানে মো সেজের অধীনস্ত কর্মীরা প্রাচীন ওই নৌপথের প্রকল্প সম্ভাব্যতা যাচাই করছেন।
নৌপথ প্রকৌশলীরা অবশ্য সতর্ক করে বলেছেন, ২০ হাজার কন্টেইনারবাহী এভার গিভেনের মতো সুবৃহৎ জাহাজ পারাপারে নীল নদ সক্ষম নাও হতে পারে। তবে অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের পণ্যবাহী জাহাজের বহর এই সমস্যার আধুনিক সমাধান হতে পারে।
তারপরও অবশ্য অন্যান্য সমস্যা রয়েই গেছে দ্বিতীয় এই প্রস্তাবনায়। উৎসে বাঁধ নির্মাণের কারণ নিকট ভবিষ্যতে নীল নদ হারাতে পারে পানির স্বাভাবিক স্তর। তখন পণ্য বহনের মতো গভীরতা থাকবে না, তাই নদীভিত্তিক প্রাচীন নৌপথ চালুর চাইতে নতুন খাল নির্মাণকেই বেশি বাস্তবসম্মত সমাধান মনে করা হচ্ছে।
- সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান