ভারতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণে নতুন নীতিমালা, উদ্বেগে সাংবাদিকরা
ভারতে গত বৃহস্পতিবার জারি হওয়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সম্পর্কিত নতুন নিয়মের ফলে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও অনলাইন নিরাপত্তা আরও ঝুঁকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন দেশটি সাংবাদিক ও অধিকারবাদী কর্মীরা।
নতুন এই নির্দেশিকা ও নিয়মের ফলে সরকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ডিজিটাল স্ট্রিমিং প্লাটফর্মগুলোতে প্রকাশিত কন্টেন্ট নিয়ন্ত্রণের আরও বেশি নজরদারি চালাতে পারবে।
ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ ও অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর কর্তৃপক্ষকে কোনো ব্যবহারকারীর পোস্ট মুছে দেওয়া এবং ব্যবহারীর নাম-পরিচয় প্রকাশের অনুরোধ করতে পারবে সরকার।
ইন্টারমিডিয়ারি গাইডলাইনস ও ডিজিটাল মিডিয়া এথিকস কোডের আওতায় কোনো কন্টেন্টের ব্যাপারে আইনি আদেশ পাওয়ার ৭২ ঘন্টার মধ্যে সেই কন্টেন্ট মুছে ফেলতে হবে, এছাড়াও সাইবার নিরাপত্তা সংক্রান্ত যে কোন ঘটনায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করতে হবে।
টুইটার কতৃপক্ষ টুইটারে প্রকাশিত ভারতের কৃষক আন্দোলন সম্পর্কিত কন্টেন্ট মুছে দেওয়ার আবেদন প্রত্যাখানের দুই সপ্তাহ পর নতুন এই নীতিমালা ঘোষণা করে ভারত সরকার।
ভারতের শীর্ষ ইন্টারনেট নীতিমালা ওয়েবসাইট মিডিয়ানামা'র নিখিল পাহওয়া বলেন, "যেভাবে এসব নীতি কার্যকর হবে, ভারতে বাকস্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, সৃজনশীলতা ও নিরাপত্তা আরও সংকুচিত হয়ে যাবে,"
"নতুন এসব নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা ইন্টারনেট নজরদারির সবচেয়ে বাজে অধ্যায়," বলেন তিনি।
"এটি অত্যন্ত প্রতিক্রিয়াশীল, আমার মতে এসব বিধিমালা আইন সমর্থিতও নয়। আদালতে এসব নীতিমালা চ্যালেঞ্জ করা প্রয়োজন," যোগ করেন তিনি।
ভারতে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারী আছেন ৫৩ কোটি, ইউটিউব ব্যবহারকারী ৪৪ কোটি ৮০ লাখ, ফেসবুক ব্যবহারকারী ৪ কোটি ১০ লাখ, ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী ২ কোটি ১০ লাখ ও টুইটার ব্যবহারী আছেন ১ কোটি ৭ লাখ।
তবে এর মধ্যে কোন সামাজিক মাধ্যম প্রতিষ্ঠানই এখন পর্যন্ত নতুন এসব নীতিমালার ব্যাপারে বিস্তারিত মন্তব্য করেনি।
এবিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ফেসবুকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, "এধরনের বিস্তারিত নীতিমালার গুরুত্ব আছে, আমরা নীতিমালাগুলো গুরুত্বসহকারে যাচাই করে দেখব।"
টুইটার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, "নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সুরক্ষা ও স্বাধীনতা বজায় থাকলেই ওই নীতিমালা কল্যাণকর হয়।"
অনলাইন সংবাদ মাধ্যমগুলোও নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে এসব নীতিমালার প্রণীত হয়েছে এমন আশঙ্কা করছেন সাংবাদিকরা।
ডিগিপাব ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়ার চেয়ারপারসন ও নিউজ মিনিটের সম্পাদক ধনয় রাজেন্দ্র বলেন, "আমরা জানি ডিজিটাল মাধ্যমে নানা কাজে সরকার আতঙ্কিত। এসব নীতিমালা প্রণয়নের একমাত্র লক্ষ্য আমাদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠাই কি না তা সময়ই বলে দেবে,"
"সরকারের উদ্দেশ্য এটিই এমনটাই আশঙ্কা করছি আমরা," বলেন তিনি।
দিল্লি ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম নিউজ ক্লিকের সাংবাদিক পরঞ্জয় গুহ ঠাকুরতা বলেন, "শুধু মানুষের মুখ বন্ধ করতেই নয়, তাদের কার্যক্রমে বাধা দেওয়ার সরকারি কৌশল নতুন এসব নীতিমালা," গত সপ্তাহেই উল্লিখিত সংবাদমাধ্যমটির কার্যালয়ে অভিযান চালায়।
"ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে কথা গণমাধ্যমগুলো কঠোরভাবে দমন করাই এর উদ্দেশ্য।" যোগ করেন তিনি।
- সূত্র: আরব নিউজ