ভারতের মহামারি পরিস্থিতি হয়ে উঠতে পারে নারকীয়
করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভারতের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা খাতের মতো দেশটির অর্থনীতিও যদি একই পদাঙ্ক অনুসরণ করে তাহলে এক্ষেত্রে করণীয় তেমন কিছুই থাকবে না। এখনো পর্যন্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুটি পদক্ষেপের মধ্যে বেশ ফারাক রয়ে গেছে।
আশাবাদীরা মনে করছেন, ভ্যাকসিন নেওয়ার ফলে মানবদেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে এবং তা শিগগিরই এই ভাইরাসের সংক্রমণ থামাতে সক্ষম হবে। কিন্তু তা যদি না হয়, তাহলে অর্থনৈতিক খাতের সমস্যা দূর করতে ভারত সরকারকে বিপাকে পড়তে হবে।
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় তরঙ্গ ইতোমধ্যেই প্রথমটির চেয়ে অধিক শক্তিশালী বলে প্রমাণিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার একদিনে ৩ লাখ ১৪ হাজার ৮৩৫ জন করোনা আক্রান্ত নিয়ে বিশ্বরেকর্ড করেছে ভারত।
হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন ফুরিয়ে যাচ্ছে, এমনকি মুম্বাই ও দিল্লির বিলাসবহুল হাসপাতালগুলোও তাদের সেবা বজায় রাখতে পারছে না। গণচিতা সাজিয়ে দাহ করতে হচ্ছে মৃতদেহ।
গত বছরের জাতীয় পর্যায়ে লকডাউনের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় পর্যায়ে জনসমাগম সীমিত করা হয়েছে। ফলে আগের বছরের জুন থেকে জিডিপি হ্রাস পেয়েছে ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ। বহু কারখানা এখনো চলছে, যদিও পণ্য উৎপাদনের পরিমাণ কম। সেইসঙ্গে নির্মাণ কাজগুলোও চলছে। সংকটের মাত্রার ওপর ভিত্তি করে বিধিনিষেধের বাস্তব আরোপ হয়েছে আরও দেরিতে।
নিরপেক্ষ বাজারমান সামান্য উপরে উঠলেও সংকটের ফলে লকডাউন আবার জোরালো করতে হয়েছে ভারতে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এখন সেখানে কাজ করা নিয়ে ভীত, ফলে এপ্রিলে ভারতের নেট বিক্রেতাদের ঋণের দায়ও বেড়ে গেছে এবং রুপির মুদ্রামান অনেকটা কমে গেছে।
এতসব দুর্যোগের মধ্যেও আশার বাণী একটিই, টিকাদান কর্মসূচি জোরদার করার ফলে জনগণের মধ্যে ইমিউনিটি বৃদ্ধি পাবে এবং এতে সংক্রমণের তীব্রতা ব্যাপক হারে কমে যাবে।
ক্রেডিট সুইসের নীলকান্ত মিশ্র ও তার দল হিসাব করে জানিয়েছে, এপ্রিলের শেষার্ধের মধ্যেই ৪০ শতাংশ জনসাধারণের দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে। বেইন ক্যাপিটাল ইন্ডিয়া পরিচালিত একটি ফাউন্ডেশনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অমিত চন্দ্র আশা করছেন, মুম্বাইয়ের ক্ষেত্রে আরও বড় সফলতা পাবেন। সেখানে ৬৫ শতাংশ সংক্রমণ কমানোর প্রত্যাশা করছেন তারা। তবু মহামারি বিশেষজ্ঞরা ভাইরাসের নতুন নতুন ভ্যারিয়ান্ট নিয়ে উদ্বিগ্ন। এ ব্যাপারে তারা ততটা আত্মবিশ্বাসীও নন।
বিশ্বের শীর্ষ ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান 'সেরাম ইনস্টিটিউট' ভারতে অবস্থিত। তা সত্ত্বেও দেশটির রাজনীতিবিদরা এখন ভ্যাকসিন আমদানি করতে চাইছেন, যদিও সরবরাহ প্রক্রিয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
আয় সহায়তার জন্যে সাধারণ মানুষের হাহাকার বাড়ছে, তারা ইতোমধ্যেই নিজেদের সঞ্চিত অর্থ ব্যয় করে ফেলেছেন। কারণ ভাইরাসের প্রথম তরঙ্গের সময়ে সরকার এ ব্যাপারে মিতব্যয়ী ভূমিকা পালন করেছে। এছাড়াও ভারত নিজেদের আর্থ-রাজকোষ অনেকটাই নিঃশেষ করে ফেলেছে। বৃহস্পতিবারের সভার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন পরিচালক এই তথ্য জানান।
তার মানে, যদি প্রত্যাশামতো সবকিছু না ঘটে, তাহলে অপ্রচলিত বিকল্প ব্যবস্থায়ই যেতে হবে তাদের।
- সূত্র: রয়টার্স