বিশ্বের অন্তত ৮৫ শতাংশ মানুষ মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার: গবেষণা
বিশ্বের অন্তত ৮৫ শতাংশ মানুষ জলবায়ু পরিবর্তন দ্বারা সৃষ্ট আবহাওয়া বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছেন। সোমবার 'ন্যাচার ক্লাইমেট চেঞ্জ' সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণায় এই তথ্য পাওয়া গেছে।
মেশিন লার্নিং (এমএল) পদ্ধতিতে ভূ-মানচিত্র তৈরির মাধ্যমে বৈশ্বিক উষ্ণতার সঙ্গে সম্পর্ক থাকতে পারে এমন এক লাখের বেশি ঘটনার বিশ্লেষণ করেন গবেষকরা। জীবাশ্ম জ্বালানি এবং কার্বন নিঃসরণের অন্যান্য উৎস থেকে সৃষ্ট তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের পরিবর্তন সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠিত তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে এই বিশ্লেষণ মেলানো হয়।
গবেষণায় ফসল উৎপাদন হ্রাস, বন্যা, তাপদাহের মতো ঘটনাগুলো প্রাধান্য পায়। সম্মিলিত ফলাফল থেকে গবেষকরা মানুষের দৈনন্দিন কার্যক্রমের সঙ্গে আবহাওয়া বিপর্যয় বৃদ্ধি পাওয়ার স্পষ্ট সংযোগ খুঁজে পান। সেই অনুসারে, বৈশ্বিক উষ্ণতা বিশ্বের ৮০ শতাংশ ভূ-অঞ্চলে প্রভাব ফেলেছে বলে জানান গবেষকরা।
জার্মানির মার্কেটর রিসার্চ ইন্সটিটিউট অন গ্লোবাল কমনস অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জের গবেষক ও গবেষণাটির প্রধান লেখক ম্যাক্স কালাগ্যান বলেন, "জলবায়ু পরিবর্তন কীভাবে আমাদের সমাজ ও বাস্তুতন্ত্রে প্রভাব ফেলছে তার প্রমাণ হিসেবে আমাদের কাছে এখন বিশদ তথ্য রয়েছে।"
নিউ ইয়র্ক শহর থেকে শুরু করে দক্ষিণ সুদানের মানুষের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে স্পষ্ট তথ্য প্রদান করেছে এই গবেষণা। কালাগ্যান বলেন, "জলবায়ু পরিবর্তন দৃশ্যমান এবং বিশ্বের প্রায় সকল স্থানেই তা চোখে পড়ছে।"
আগামী মাসে স্কটল্যান্ডের গ্লাসকোতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনের শীর্ষ সম্মেলন কপ-২৬ কে সামনে রেখে প্রকাশিত হলো এই গবেষণা। গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর ওপর দৃঢ় জলাবায়ু লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে চাপ প্রয়োগ করবে বলেই আশা করছেন গবেষকরা।
গবেষণায় বিশ্বের ৮৫ শতাংশ মানুষের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়ার বিষয়টি অস্বাভাবিক মনে হতে পারে। তবে, লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজের গ্র্যানথাম ইন্সটিটিউট ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড দ্য এনভায়রনমেন্টের সিনিয়র লেকচারার ফ্রেডরিক অটো এই হারকেও কম বলে মনে করছেন।
তিনি বলেন, "মানব নিঃসৃত গ্রিনহাউজের প্রভাবে বিশ্বের সকল মানুষেরই চরম আবহাওয়ার সম্মুখীন হওয়ার কথা।"
এর আগে এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়া বর্তমান গতিতে চলতে থাকলে ২১ শতকের শেষ নাগাদ বৈশ্বিক তাপমাত্রা ২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে, খাদ্য ও পানির সংকটসহ ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে বিশ্ব।
চীন ও ভারতসহ বিশ্বের শীর্ষ কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলো এখন পর্যন্ত ২০৩০ সাল নাগাদ নিঃসরণ কমানোর নতুন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আনুষ্ঠানিক অঙ্গীকার গ্রহণ করেনি। পরিবেশবাদী ও আন্দোলনকারীরা বাড়তে থাকা জ্বালানি সংকট নিয়ে চিন্তিত। জ্বালানি সংকটে বাড়ছে পণ্যের দাম, দেখা দিয়েছে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতা। ফলে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতি রক্ষায় জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো নিয়েও বাড়ছে অনিশ্চয়তা।
দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট এবং ন্যাশনাল ওশানিক অ্যান্ড অ্যাটমসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের হিসাব অনুসারে, চলতি বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইতোমধ্যে আবহাওয়াজনিত বিপর্যয়ে ৩৮৮ জনের প্রাণহানিসহ ১০০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
- সূত্র: দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট