বিভিন্ন দেশে কোভিড আক্রান্তদের ক্ষতিপূরণ

কোভিড-১৯ এর উপসর্গ দেয়া যাওয়ার পর এবং পজিটিভ শনাক্ত হওয়ার পর সুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত আইসোলেশনে না থাকলে আক্রান্ত ব্যক্তি দ্রুতগতিতে সংক্রমণ ছড়িয়ে দিতে পারেন। তবে সবার ঘরে থাকার অবস্থা থাকে না, অনেকে মৃদু উপসর্গ থাকলেই বের হয়ে পড়েন, কাজে যোগদান করেন। একারণেই বিভিন্ন দেশে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ঘরে রাখতে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। আক্রান্ত হলে বা শুধু উপসর্গ দেখা দিলেই ঘরে থাকার জন্য বিভিন্ন দেশে আক্রান্ত ব্যক্তিকে অর্থ সাহায্য দেওয়া হচ্ছে।
পর্তুগাল
পর্তুগালে শুধু আক্রান্ত ব্যক্তিই নয়, যারা কোনো আক্রান্ত ব্যক্তির সরাসরি সংস্পর্শে এসেছেন এবং আক্রান্ত হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিরাও ১৪ দিন আইসোলেশনে থাকার জন্য তাদেরকে তাদের মূল বেতনের শতভাগ অর্থ দেওয়া হয়।
উপসর্গ দেখা দিলে অথবা পজিটিভ শনাক্ত হলে ২৮দিনের জন্য এ সুবিধা দেয়া হয়। আইসোলেশনের প্রথম দিনেই এ অর্থ পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
স্লোভেনিয়া
গত বছর মার্চে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পরই স্লোভেনিয়ায় সেলফ আইসলেশনে থাকার জন্য ক্ষতিপূরণ দেয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। আক্রান্তের পরিস্থিতি বিবেচনায় তাকে তার মূল বেতনের ৮০ শতাংশ থেকে পুরো বেতনই ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়া হয়। এই ক্ষতিপূরণ আক্রান্ত ব্যক্তিকে দে্য়াব হতে পারে বা তার নিয়োগকারীকে দেওয়া হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র
গত বছর মার্চে কিছু চাকুরিজীবির জন্য আক্রান্ত হলে ঘরে থাকার ক্ষতিপূরণ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ইতোপূর্বে দেশটিতে কখনো অসুস্থ হলে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি।
কিছু চাকরিজীবী আক্রান্ত হয়ে আইসোলেশনে থাকতে বাধ্য হলে বা সরকারের জারিকৃত লকডাউনের মধ্যে ১৪ দিন পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির সেবায় নিয়োজিত কোনো ব্যক্তিকে তাদের বেতনের এক-তৃতীয়াংশ দেয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে এ সুযোগের অনেক ফাঁক ফোকড় ছিল এমনটা জানিয়েছেন অনেক বিশেষজ্ঞ, অনেক স্বাস্থ্যকর্মী ও দোকানের কর্মচারী এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এ পরিকল্পনার মেয়াদও শেষ হয়ে যায় গত ৩১ ডিসেম্বর। তবে এ পরিকল্পনা আবারও নবায়নের কাজ করছেন জো বাইডেন।
জার্মানি
জার্মানিতে আক্রান্ত হয়েও আইসোলেশনে না থাকার কারণ উচ্ছারে জরিমানা ধার্য করা হয়, প্রায় ১০ হাজার ইউরো পর্যন্তও জরিমানা নেওয়া হতে পারে।
অন্যদিকে, আক্রান্ত যেসব রোগীর ঘরে থেকে কাজ করা সম্ভব না তাদের ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত তাদের সম্পূর্ণ বেতন দেয়া হয় ক্ষতিপূরণ হিসেবে। তার নিয়োগকারীই তাকে এ অর্থ দেবেন, পরবর্তীতে সরকারের কাছ থেকে সমপরিমাণ অর্থ বুঝে নেবেন নিয়োগকারী। ফ্রিল্যান্সার ও স্বনির্ভর ব্যক্তিদেরও ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়, তবে এজন্য তাদের সরাসরি স্থানীয় সরকার বরাবর আবেদন করতে হয়।
চেজ রিপাবলিক
চেজ রিপাবলিকে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য দুটি উপায় আছে- হয় বাসা থেকে কাজ করা, অথবা ১০দিনের জন্য ছুটি নিয়ে ৬০ শতাংশ বেতন নেওয়া।
তবে কোনো ফ্রিল্যান্সার বা স্বনির্ভর ব্যক্তির জন্য এ সিদ্ধান্ত একেবারেই অকার্যকর। শুধু ইন্সুরেন্স থাকা ব্যক্তিরাই এ সুবিধা পাবেন। একারণে বেশিরভাগ মানুষই ঘরে থেকে কাজ করাই বেছে নিচ্ছেন।
সুইডেন
সুইডেনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ঘরে থাকা নিশ্চিত করতে আইসোলেশনে যাওয়ার প্রথম দিন থেকেই তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। আইসোলেশনের সময় তাদের মূল বেতনের ৮০ শতাংশ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়।
মহামারীর প্রায় পুরো সময় জুড়েই সুইডেনে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খোলা ছিল। শিক্ষার্থীদের অসুস্থতার ক্ষেত্রে বাবা-মা'র ছুটি নেয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। তবে চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত চাকুরিজীবীরা স্থায়ী চাকুরিজীবীদের মতো সমান সুবিধা পাচ্ছেন না এমন অভিযোগও আছে।
- সূত্র: বিবিসি