বাইডেন-শি জিনপিং: বৈঠকের মূল লক্ষ্যসমূহ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং স্থানীয় সময় আজ সোমবার ভার্চুয়াল বৈঠকে বসবেন। দুই দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মাঝেই অমীমাংসিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে যাচ্ছে এ বৈঠকে।
চির প্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই দেশের নেতা গত সপ্তাহে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৬-এ যৌথ ঘোষণা দেন। স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে তাদের এই যৌথ ঘোষণা বিস্মিত করেছে অনেককেই। কারণ তাইওয়ানে সামরিক মহড়া ও জিনজিয়াংয়ের মরুভূমিতে মার্কিন যুদ্ধজাহাজের আদলে বানানো চীনের স্থাপনার রেশ এখনও কাটেনি।
এর মাঝেই আজকের আলোচনা থেকে শি ও বাইডেন কী চান, তা নিয়ে আগ্রহ দেখা দিয়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। তাদের চাওয়া–পাওয়া নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
মার্কিন এক গণমাধ্যম জানিয়েছে, আজ বাইডেন ও শির আলোচনায় গুরুত্ব পাবে সাইবার নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ ইস্যু। এর আগে শুক্রবার হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে জানায়, "নিজেদের অভিন্ন স্বার্থ নিয়ে আলোচনায় বসবেন দুই নেতা"।
গত জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর বাইডেন ও শি দুই দফায় আলোচনায় বসলেও, দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কে তেমন উন্নতির দেখা মেলেনি।
তবে গত সপ্তাহে শি জিনপিং 'ন্যাশনাল কমিটি অন ইউএস-চীন রিলেশনস'-কে বলেন, সম্পর্ক উন্নয়নে তার দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য সহযোগিতাই একমাত্র পথ।
কী চান বাইডেন:
সিনো-মার্কিন বৈঠক নিয়ে প্রত্যাশা কম; তবে অবশেষে দুই দেশ আলোচনার টেবিলে বসতে যাচ্ছে এটিই বড় কথা। যুক্তরাষ্ট্র ও চীন উভয়পক্ষই নিজেদের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন করতে চায়। বিগত কয়েক বছর ধরে বিশ্বের প্রধান এই দুই অর্থনীতির মধ্যে সম্পর্কের কোনো উন্নয়ন হয়নি; বরং বিভিন্ন ইস্যুতে বেড়েছে উত্তেজনা।
ধারণা করা হচ্ছে, বৈঠকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে তাইওয়ান ইস্যু। তাইওয়ান ঘিরে বেইজিং ক্রমাগত সামরিক অবস্থান জোরদার করে চলেছে। কিন্তু বাইডেনের চাওয়া, শি তাইওয়ানে শান্তি বজায় রাখুন। বাইডেনের এই চাওয়া পূরণ হতে হলে যুক্তরাষ্ট্রকেও প্রতিশ্রুতি দিতে হবে, তারা চীনের সার্বভৌমত্ব খর্বের চেষ্টা করবে না।
শি জিনপিংকে প্রভাবিত করতে বাইডেনের জন্য একটি বড় সুযোগ হতে পারে এই বৈঠক। চীনের ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের মতাদর্শকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেন 'প্রতিযোগিতা ও সহযোগিতামূলক' হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
গত সেপ্টেম্বরে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেছিলেন, কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাতে হলে জলবায়ু পরিবর্তনের মতো ইস্যুগুলো বাদ দেওয়া যাবে না। তিনি আরও বলেছিলেন, "মরূদ্যানের চারপাশে যদি মরুভূমি থাকে, তাহলে দেরিতে হলেও মরূদ্যান এক সময় মরুভূমি হয়ে যেতে পারে।"
শি জিনপিং কী চান:
বাইডেনের সঙ্গে জুমে ভার্চুয়াল আলোচনায় বসবেন চীনের প্রেসিডেন্ট। একাধিক গণমাধ্যম সূত্রের ধারণা, তাদের এই আলোচনার মূল ইস্যু হবে তাইওয়ান। এশিয়ার বাইরে অনেক দেশই তাইওয়ানের আলাদা অস্তিত্বকে স্বীকৃতি দেয়নি। বেইজিংও চায় তাইওয়ান চীনের অংশ হয়েই থাকুক।
কয়েক সপ্তাহ আগে বাইডেন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, চীন আক্রমণ করলে তাইওয়ানকে রক্ষা করবে যুক্তরাষ্ট্র। বাইডেনের এমন মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন শি; যুক্তরাষ্ট্রের এমন অবস্থানের ব্যাখ্যাও চেয়েছিলেন তিনি।
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তাইওয়ান ইস্যু ছাড়াও দ্বন্দ্বের আরেকটি অন্যতম কারণ হলো করোনাভাইরাসের উৎসস্থল। করোনার উৎস নিয়ে চীন লুকোচুরি করছে বলে অভিযোগ এনেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এছাড়া, গত সপ্তাহে বাইডেন চীনের টেলিকম প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আবারও বিধিনিষেধ আরোপ করতে চেয়েছিলেন। এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ইতোমধ্যে তিনি জোট পুনর্গঠনও শুরু করেছেন। গত সেপ্টেম্বরে বাইডেন ও শির ফোনালাপের সময় বেইজিং বলেছিল, প্রতিযোগিতা যেন কোনোভাবেই শত্রুতায় রূপ না নেয়।
যেকোনো ইস্যুতে বৈরিতা দমন ও আলোচনার একাধিক পথ তৈরিতে এই বৈঠক কতখানি ফলপ্রসূ হয়, সেটিই এখন আলোচ্য বিষয়।
- সূত্র: বিবিসি