বাংলাদেশের ‘অ্যাজমাটিক ম্যান’ ফ্রান্সে থাকার অনুমতি পেল
বাংলাদেশে উচ্চ মাত্রার বায়ুদূষণ থাকার কারণে বাংলাদেশী এক হাঁপানি রোগীকে ফ্রান্সে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
৪০ বছর বয়স্ক হাঁপানী রোগী এই ব্যক্তি ২০১১ সাল থেকে ফ্রান্সের তুলুজে বসবাস করছেন।
২০১৯ সালে বিশ্ব বায়ু মান প্রতিবেদনে সূক্ষ্ম কণা দূষণের জন্য বাংলাদেশকে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দেশ এবং রাজধানী ঢাকাকে বিশ্বে ২১তম দূষিত শহর হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স অনুসারে ২০১৯ সালে বাংলাদেশে বায়ু দূষণের কারণে ১৭০,০০০ জনের মৃত্যু ঘটেছে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশের তীব্র বায়ু দূষণ এবং স্বাস্থ্যের উপর তার জোরালো প্রভাবের কথা বিবেচনায় নিয়ে ফরাসী কর্তৃপক্ষ এই ব্যক্তিকে ফ্রান্সে অবস্থানের পক্ষে সম্মতি দিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই ব্যক্তি রাঁধুনি এবং ওয়েটার হিসেবে কাজ করতেন। ২০১৭ সালে তিনি বার্ষিক রেসিডেন্সি পারমিট পুনর্নবীকরণের জন্য আসার পর তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর মতো ঝুঁকি তৈরি হয় এবং ফ্রান্সের নিম্ন আদালত সিদ্ধান্তও দেয় যে তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো নিরাপদ।
পরে আপিল করলে বাংলাদেশী অভিবাসীর আইনজীবী যুক্তি দেখান যে, বাংলাদেশের তীব্র যানজট ইট ভাটার ক্ষতিকর বায়ু দূষণের মধ্যে তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হলে তার হাঁপানির অবস্থা আরো খারাপ হবে, এবং এর ফলে তার জীবন হুমকির মুখে পড়বে।
তিনি আরও বলেন, এই ব্যক্তির হাঁপানি গুরুতর অবস্থায় আছে, তাকে নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হয়, এবং প্রায় ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্ট ভোগেন তিনি, তখন ভেন্টিলেশনের প্রয়োজন হয়।
আইনজীবীর এই যুক্তিতর্ক উত্থাপনের পর বোর্ডের আপীল আদালত আগের আদেশ প্রত্যাহার করে নেয় এই যুক্তি দেখিয়ে যে, হাঁপানীতে আক্রান্ত এই ব্যাক্তির প্রয়োজনীয় ওষুধ বাংলাদেশে পাওয়া যায় না, ফলে তার জীবন ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।
তার আইনজীবী লুডোভিচ রিভিয়েরে বলেন, আমার মক্কেলকে তার দেশে ফেরত পাঠানোটা ছিল আসলে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া। হাঁপানি রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা যে কোনো সময় মারাত্মক আকার নিতে পারে। আদালত আরো উল্লেখ করে যে, এই ব্যক্তির বাবাও হাঁপানির কারণে মাত্র ৫৪ বছর বয়সে মারা গেছেন, আর আদালত অবগত হয়েছেন যে ফ্রান্সে অবস্থানের জন্য আবেদনকারীর শ্বাসপ্রশ্বাসের মাত্রা স্বাভাবিক অবস্থা থেকে ২০১৩ সালে ছিল ৫৮ শতাংশ ২০১৮ সালে সেটা দাঁড়িয়েছে ১৭ শতাংশে।
আপিলে জয়ী রিভিয়েরে বলেন, আমার জানা মতে, এবারই প্রথম এই ধরনের মামলায় পরিবেশ দূষণের বিষয়টি বিবেচনা করা হয়েছে, আমি আনন্দিত যে ফ্রান্স তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়নি।
সূত্র:দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ