ফ্রান্সের সিনেটের স্বীকৃতির পর ইউরোপীয় পার্লামেন্টও মিয়ানমারের বিকল্প সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে
প্রথমে ফ্রান্সের সিনেটের স্বীকৃতি। এরপর এবার মিয়ানমারের জাতীয় ঐক্যের সরকারকে (এনইউজি) স্বীকৃতি দিতে চাইছে ইউরোপীয় পার্লামেন্টও।
গত মঙ্গলবার ফ্রান্সের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে গৃহীত প্রস্তাবে মিয়ানমারে সাংবিধানিক প্রক্রিয়া ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি দেশটিতে শান্তি ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার স্বার্থে বিকল্প সরকারকে (এনইউজি) স্বীকৃতি দিতে ফ্রান্স সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
সেদিনই এনইউজিকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে আলোচনা শেষে প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়।
এরপর গতকাল বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় পার্লামেন্টে এক প্রস্তাবে মিয়ানমারে চলমান সংকট নিরসনে এনইউজিকে যুক্ত রাখার জন্য আসিয়ানসহ আন্তর্জাতিক সব পক্ষকে আহ্বান জানানো হয়েছে।
গতকাল ইউরোপীয় পার্লামেন্টে মিয়ানমারের ধর্মীয় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অবস্থাসহ দেশটির মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রস্তাবের পক্ষে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ৬৪৭ সদস্য ভোট দেন। বিপক্ষে ভোট দেন ২ জন। ভোটদানে বিরত থাকেন ৩১ জন। প্রস্তাবে মিয়ানমারে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের পাশাপাশি বিক্ষোভ-প্রতিবাদকারীদের ওপর দমন-পীড়ন চালানোর ঘটনায় দেশটির সামরিক সরকারের নিন্দা জানানো হয়েছে।
এছাড়াও মানবাধিকার লঙ্ঘন ও হামলার ঘটনাকে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে অভিহিত করেছেন। মিয়ানমারের স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর হামলা, নির্যাতন ও আটকের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী যে অজুহাতে অভ্যুত্থান করেছে, তার সত্যতা খুঁজে পাননি ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা। ফলে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট ও স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন তারা।
মিয়ানমারের সংকট সমাধানের জন্য আসিয়ানকে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে বলা হয়েছে। আসিয়ান তাদের উদ্যোগে যেন এনইউজিসহ মিয়ানমারের নাগরিক সমাজকে যুক্ত রাখে, তা-ও বলা হয়েছে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রস্তাবে।
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নিরাপদ, স্বেচ্ছা ও মর্যাদাপূর্ণ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
মিয়ানমারে সামরিক জান্তা সরকারকে এখন পর্যন্ত কেউই স্বীকৃতি দেয়নি। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সদ্য সমাপ্ত অধিবেশনেও যোগ দিতে পারেনি মিন অং হ্লাইংয়ের সরকার।
মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে নভেম্বরে জাতিসংঘে আলোচনা হওয়ার কথা আছে। এই পরিস্থিতিএ এনইউজিকে বিদ্যমান সংকট নিরসনে যুক্ত করার আহ্বান আন্তর্জাতিক পরিসরে এনইউজির স্বীকৃতির দাবিকে জোরালো করে তুলছে।
অং সান সু চির সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে গত ১ ফেব্রুয়ারি জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের নেতৃত্বাধীন সামরিক বাহিনী মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে। এরপর অভ্যুত্থানবিরোধী এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা ১৬ এপ্রিল সু চিকে স্টেট কাউন্সেলর করে জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠন করেন। এই সরকার মূলত দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় এবং নির্বাসিত থেকে কাজ করছে।