প্রধান শহরগুলো ছেড়ে পালাচ্ছে ভারতের শীর্ষ ধনীরা
মহামারীর প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে ভারতের অনেক ধনকুবেরই তাদের পরিবার এবং কর্মীদের নিয়ে সুরিক্ষিত আস্তানা গেড়েছে ঘরের ভেতর। ভাইরাসের পুনরুত্থান দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার নাজেহাল অবস্থা এবং অন্যান্য দেশগুলোতে ভারতীয় ভ্রমণকারীদের প্রবেশ নিষেধ থাকায় অনেক ধনকুবেরই চলে যাচ্ছে বড় শহরগুলোর বাইরে।
আইটি জায়ান্ট ইনফোসিস লিমিটেডের অন্যতম কোটিপতি-সহপ্রতিষ্ঠাতা ক্রিস বলেন, "আমি আমার পরিবার এবং আমাদের কর্মীদের সাথে বাড়ির ভিতরে রয়েছি, এটাই আমার গল্প।"
তিনি বলেন, "আমাদের গ্রুপটি বাইরের যোগাযোগ এড়িয়ে চলছে এবং কেবল বাড়িতে রান্না করা খাবার খাচ্ছে।"
ইনফোসিসের আরেক সহ-প্রতিষ্ঠাতা নন্দন নিলেকানি একটি টেক্সট বার্তায় বলেছেন যে, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় এবং আরও মারাত্মক ঢেউ ১৩০ কোটি মানুষের দেশকে বিপাকে ফেলে দেওয়ায় নিরাপদে থাকার জন্য নিজের বাড়িতেই অবস্থান করছেন তিনি।
করোনা ভাইরাসের ভয়াবহ প্রাদুর্ভাবে অনেক ধনী পরিবারকে ভারত ছেড়ে পালাতে উৎসাহিত করেছে। করোনাভাইরাসের বর্তমান কেন্দ্রস্থল ভারত থেকে বিমান চলাচল নিষিদ্ধ করার আগে পর্যন্ত অনেকেই ব্যক্তিগত জেট বিমানে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে চলে যান।
কোনো কোনো ধনকুবের অবশ্য এখনো হুঙ্কারে দিয়ে বাড়ি থেকেই চালিয়ে যাচ্ছে নিজেদের বিশাল ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য। তারাই আবার এগিয়ে আসছে অক্সিজেন সরবরাহ এবং সুরক্ষামূলক সরঞ্জামের মতো প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানে।
ভারতের সবচেয়ে দামী স্টার্টআপ, অনলাইন-শিক্ষা সরবরাহকারী বাইজুর কোটিপতি প্রতিষ্ঠাতা বাইজু রবীন্দ্রন ব্যাঙ্গালোরের এইচএসআর লেআউট এলাকায় বেশ কয়েকটি বাড়িতে তার পরিবারের সাথে বাস করছেন।
রবীন্দ্রন জানান, পারিবারিক কর্মীরাও আপাতত তাদের সাথে বিচ্ছিন্ন। প্রয়োজনীয় মজুদ ব্যবস্থা শক্তিশালী এবং বাইরের যোগাযোগ ন্যূনতম হয়েছে।
করোনা ভাইরাস রাজধানী নয়াদিল্লি এবং অর্থনৈতিক কেন্দ্র মুম্বাইকে ভয়াবহভাবে আক্রান্ত করায় ভারতের শীর্ষ দুই ধনী ব্যক্তি আম্বানি, আদানি দেশের তুলনামূলক কম জনবহুল অংশের বাড়িতে চলে গেছেন।
এশিয়ার শীর্ষ ধনী ব্যক্তি মুকেশ আম্বানি তার পরিবারের সাথে মুম্বাই থেকে জামনগরে স্থানান্তরিত হয়েছেন – যা গুজরাট রাজ্যের একটি এলাকায় অবস্থিত। সেখানে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিশাল জোড়া তেল শোধনাগার কমপ্লেক্স রয়েছে। এ তথ্য জানা গেছে তাদের গতিবিধির খোঁজখবর রাখা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তিদের থেকে।
ভারতের দ্বিতীয় ধনী ব্যক্তি বিলিয়নেয়ার গৌতম আদানি তাঁর ছেলে করণ আদানি এবং পরিবারের অন্যান্য ঘনিষ্ঠ সদস্যদের সঙ্গে গুজরাটের আহমেদাবাদের উপকণ্ঠে তাদের বাড়িতে রয়েছেন বলে তাদের পরিচিত এক ব্যক্তি জানিয়েছেন।
এ দুই ধনী ব্যক্তির অবস্থান নিয়ে রিলায়েন্স কিংবা আদানি গ্রুপের প্রতিনিধিরা কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ভারত প্রতিদিন রেকর্ড সংখ্যক নতুন করে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হচ্ছে। চিকিৎসা সুবিধা এবং শ্মশানগুলোর ধারণক্ষমতা অতিক্রম করছে প্রতিদিনই। মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় অক্সিজেন সিলিন্ডার থেকে শুরু করে কোয়ারেন্টাইনে থাকা বয়স্কদের খাবার পর্যন্ত সবকিছুর জন্যই আকুতি জানাচ্ছে। ভারতের কিছু অঞ্চল পুনারায় লকডাউন ঘোষণা করেছে, উদ্বেগ রয়েছে যে দেশব্যাপী আরেকটি লকডাউন দারিদ্রতা এবং বৃহত্তর অর্থনীতির জন্য বিপর্যয়কর হতে পারে।
সূত্র: এনডিটিভি