পুরোনো মাপজোখের চাইতেও বেশি উঁচু এভারেস্ট, যৌথ ঘোষণা নেপাল ও চীনের
হিমালয়ের সর্বোচ্চ পর্বত মাউন্ট এভারেস্ট- পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু শিখরও বটে। কিন্তু, এর মাপজোঁক নিয়েই ছিল মতভেদ। এবার তার অবসান ঘটিয়ে একযোগে এভারেস্টের নতুন উচ্চতা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে নেপাল ও চীন।
আজ মঙ্গলবার (৮ ডিসেম্বর) যৌথভাবে দুই দেশ এ ঘোষণা দেয়। নতুন করে উচ্চতার হিসাব গ্রহণ করা হয়েছে ৮,৮৪৮.88 মিটার (বা ২৯,০৩১.৭ ফুট), যা নেপাল সরকারের পূর্ববর্তী জরিপের চেয়ে সামান্য আর চীনের পূর্ব হিসাবের চাইতে চার মিটার বেশি।
চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এবং তার নেপালি প্রতিপক্ষ প্রদীপ গয়াওয়ালি এক ভার্চুয়াল কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে একইসঙ্গে বোতাম চেপে নতুন উচ্চতার উদ্বোধন করেন। সঙ্গে সঙ্গেই পর্দায় ভেসে ওঠে এভারেস্টের নব-নির্ধারিত উচ্চতার সংখ্যা।
নেপাল আর চীনের সীমানার মাঝ বরাবর এভারেস্টের অবস্থান। গত বছর নতুন করে উচ্চতা মাপতে নেপালের জরিপকারীরা এভারেস্ট আরোহণ করেন। চলতি বছরে চীনের একটি পরিমাপ দলও সেই একই পন্থা অনুসরণ করে। এরপরই, সাগরপৃষ্ঠ থেকে এভারেস্ট চূড়ার নয়া-উচ্চতা সম্পর্কে জানানো হলো।
দেশ দুটি আগে থেকেই উচ্চতা সম্পর্কে দুই রকম ধারণা পোষণ করতো। তবে ২০১৫ সালে হওয়া বড় এক ভূমিকম্পের ফলে চূড়ার প্রকৃত উচ্চতা কমেছে এমন আশঙ্কাও করা হচ্ছিল। ওই ভূমিকম্পে নেপালে প্রায় ৯ হাজার মানুষ মারা যান। ক্ষতিগ্রস্ত হয় বসতবাড়ি, সড়ক, সেতুসহ প্রায় ১০ লাখ অবকাঠামো। ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট তুষারধ্বসে চাপা পরে মারা যান এভারেস্ট বেজ ক্যাম্পে থাকা ১৯ অভিযাত্রী।
তাই সবকিছু মিলিয়েই নতুন করে পরিমাপের তোড়জোড় শুরু করে দুই দেশ।
তবে, এভারেস্টের হাত থেকে সর্বোচ্চ শৃঙ্গের শিরোপা কেড়ে নেওয়া সহজ নয়। কারণ, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কে-২ ৮,৬১১ মিটার (২৮,২৪৪ ফুট) উঁচু। অর্থাৎ, তা এভারেস্টের চেয়ে প্রায় ২৩৭ মিটার কম।
প্রকৃতঅর্থেই, এভারেস্টের চূড়ার আকাশছোঁয়া বিস্তৃতিকে ১৮৫৬ সালে প্রথম মাপে ব্রিটিশ একটি দল। তখন উচ্চতা নির্ণয় করা হয় ৮,৮৪২ মিটার (২৯,০০২ ফুট)।
১৯৫৪ সালে সার্ভে অব ইন্ডিয়ার পরিমাপ অনুসারে তা ৮,৮৪৮ মিটার (২৯,০২৮ ফুট) বলে জানানো হয়। এতদিন যা সর্বজন স্বীকৃত ছিল।
এর আগে ১৯৯৯ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোস্যাইটির একটি দল জিপিএস প্রযুক্তির সহায়তায় উচ্চতা ৮,৮৫০ মিটার (২৯,০৩৫ ফুট) বলে জানিয়েছিল। ২০০৫ সালে চালানো এক অভিযানে চীনের একটি দল অবশ্য সেটি ৮,৮৪৪ মিটার (২৯,০০৯ ফুট) বলে হিসাব করে। চূড়ায় জমা তুষারকে বাদ দেওয়ার কারণেই তাদের পরিমাপটি-ই সঠিক বলে দাবি করেন চীনা জরিপকারীরা।
এভাবেই মেঘছোঁয়া শিখরের বিশালত্ব ঘিরে বিতর্ক নতুন মাত্রা পায়।
তাই প্রকৃত অবস্থা জানতে ২০১৯ সালের মে'তে নেপাল সরকারের একটি অভিযাত্রী দল জিপিএস এবং স্যাটেলাইট উপকরণসহ পরিমাপ করতে যান। তারা চূড়ায় জমা বরফেরও আলাদা মাপ নেন।
ওই বছরই নেপাল ভ্রমণ করেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তখনই দুই দেশের মধ্যে এভারেস্টের প্রকৃত উচ্চতা সম্পর্কে ঐক্যমত্যে পৌঁছানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এজন্য ২০২০ সালের বসন্তে চীনা জরিপ সংস্থার সদস্যরা নতুন করে মাপজোঁক করেন। ওই সময় করোনা মহামারির কারণে অন্যান্য আরোহীদের অভিযান স্থগিত ছিল। সেকারণে বেশ নির্বিঘ্নেই নিজেদের দায়িত্ব সম্পাদনের সুযোগ পায় চীনের দলটি।
ঐক্যমেত্যর ভিত্তিতে নতুন উচ্চতা নির্ণয়কে স্বাগত জানিয়েছেন নেপালের পর্বতারোহী সম্প্রদায়।
নেপাল মাউন্টেইনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সান্তা বীর লারমা বলেন, ''পর্বতারোহনের ইতিহাসে এটি ঐতিহাসিক এক মুহূর্ত। অবশেষে বিতর্কের অবসান হলো। এখন থেকে বিশ্ববাসী শুধু নতুন সংখ্যাটিকেই জানবে।''
- সূত্র: এপি