পাকিস্তানের উদ্দেশে বাইডেন প্রশাসনের রূঢ় বার্তা
ইসলামাবাদ সফরকালে একজন ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, বাইডেন প্রশাসন এই দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে অবনমিত করেছে।
মার্কিন ডেপুটি সেক্রেটারি অব স্টেট, ওয়েন্ডি শেরমান তার আগমনের প্রাক্কালে মুম্বাইয়ে দেওয়া এক বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের নতুন ধারাগুলো স্পষ্ট ভাষায় তুলে ধরেন এবং জোর দিয়ে বলেন, ভারতের সঙ্গে ওয়াশিংটনের গভীর সম্পর্কের কোনো তুলনা হবে না।
তার ইসলামাবাদ সফরের উদ্দেশ্যকে "খুবই সুনির্দিষ্ট এবং সংকীর্ণ" বলে আখ্যায়িত করেন শেরমান। তিনি আরও বলেন, "পাকিস্তানের সঙ্গে বিস্তৃত সম্পর্ক স্থাপনের কোনো ইচ্ছা নেই আমাদের।"
পরদিন তার পাকিস্তান সফরও পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোয়নি। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে একটি বৈঠকের কথা থাকলেও তা কখনো আলোর মুখ দেখেনি।
পাকিস্তান সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ দুই দেশের মধ্যে এক ধরণের কূটনৈতিক উত্তেজনা বিরাজ করছে, এবং জো বাইডেনের কাছ থেকে এখনো কোনো ফোন কল না পাওয়ায় রেগে আছেন ইমরান খান।
তবে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী জানিয়েছেন, শেরমানের সঙ্গে আলোচনা ভালোভাবেই এগিয়েছে।
"তিনি পাকিস্তানে বেশ আন্তরিকভাবে কথা বলেছেন, এবং পাকিস্তানের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে পেরেছেন," যোগ করেন ফাওয়াদ।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিদায়ের পর বাইডেন বিশ্বনেতাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক স্থাপনের দারুণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। ৩১শে আগস্ট আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের সমাপ্তি উপলক্ষে দেওয়া ভাষণে বাইডেন বলেছেন, এখন থেকে আঞ্চলিক কূটনীতির ওপরই জোর দিবেন তিনি। সেই প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফোন করেও যোগাযোগ না করাটা খানের প্রতি ওয়াশিংটনের অসন্তুষ্টিরই একটি অস্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ।
ধারণা করা হচ্ছে, আফগানিস্তান ও তালেবানের প্রতি ইমরানের মনোভাব থেকেই এসেছে এই অসন্তুষ্টি। তালেবানের ক্ষমতা দখলকে 'দাসত্বের শিকল ভাঙা' হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী।
বাইডেন প্রশাসনের এরকম শীতল মনোভাব পাকিস্তানের জন্য একটি ধাক্কা হিসেবেই এসেছে। সম্প্রতি ফাঁস হওয়া এক মেমোতে দেখা গেছে, বাইডেন এবং খানের মধ্যে একটি ফোন কলের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়ে ওয়াশিংটনের পাকিস্তানি দূতাবাসকে চিঠি লিখেছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি।
ইমরান খানের সঙ্গে যোগাযোগ না করার ব্যাপারে হোয়াইট হাউজের প্রেস সচিবকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনিও এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পাকিস্তানকে দীর্ঘদিন ধরেই দ্বৈত খেলা খেলার অভিযোগ জানিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিনীদের 'সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই'-এ নিজেদের মিত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করলেও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তালেবানের মতো জঙ্গিগোষ্ঠীদের সাহায্য করার এবং নিজেদের মাটিতে সংগঠিত হওয়ার সুযোগ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে শীতল অবস্থায় রয়েছে। বাইডেন প্রশাসন পাকিস্তানে চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করার মতো বিষয়গুলো নিয়েও বিরক্ত। এ ব্যাপারে বাইডেন তার পাকিস্তানি সমকক্ষের উপর চাপ প্রয়োগ করতে পারেন বলেও জানা গেছে।
- সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান