নতুন তথ্যপ্রযুক্তি নীতির শর্ত পূরণ না করায় ভারতে আইনি রক্ষাকবচ হারাল টুইটার
ভারতের নতুন তথ্যপ্রযুক্তি নীতির শর্ত পূরণ করতে না পারায় দেশটিতে আইনি রক্ষাকবচ হারিয়েছে মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটার।
দেশটির একজন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৭৯ ধারায় টুইটার আর আইনি রক্ষাকবচ পাবে না, যা কোনও তৃতীয় পক্ষের (থার্ড পার্টি) কনটেন্টের দায় থেকে কোনও মধ্যস্থতাকারীদের রেহাই দেয়।
ঐ কর্মকর্তা বলেছেন, 'এখন যদি আদালতে কোনও মামলা হয়, তথ্যপ্রযুক্তি আইনের আওতায় সুরক্ষা পাবে না টুইটার'।
নেটমাধ্যমে প্রকাশিত যাবতীয় লেখালেখি এবং ভিডিও'র উৎস ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে জানাতে হবে বলে টুইটার, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ এবং ইউটিউবের মতো সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেয় ভারত। একই সঙ্গে ভারতে বিশেষ কর্মকর্তা নিয়োগ করতে বলা হয়েছে এই প্ল্যাটফর্মগুলোকে, যার হাতে আপত্তিকর পোস্টের উপর নজরদারি এবং তা সরানোর দায়িত্ব থাকবে। এই নিয়ে এসব যোগাযোগ প্ল্যাটফর্মগুলোর সাথে অনেকদিন ধরেই ভারতের টানাপোড়েন চলছিল। তার মধ্যেই টুইটারের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ নেয়া হলো।
সংবাদসংস্থা এএনআইকে ভারতের এক সরকারি সূত্র জানায়, জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর মধ্যে একমাত্র টুইটারই নতুন তথ্যপ্রযুক্তি নিয়মের শর্তপূরণ করেনি। যে নীতি অনুযায়ী, সোশ্যাল মিডিয়াগুলোকে চিফ কমপ্লায়েন্স অফিসার, রেসিডেন্ট গ্রিভান্স অফিসার-সহ ভারতের জন্য একাধিক কর্মকর্তা নিয়োগ করতে হবে। কিন্তু প্রথম থেকেই সেই নতুন নীতি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে টুইটার। গত ৫ জুন কেন্দ্রের 'চূড়ান্ত' নোটিশের পর অবশ্য সুর নরম করে মাইক্রো ব্লগিং সাইট। নতুন নীতি মেনে চলা হবে বলে জানানো হয়। দেওয়া হয় এক সপ্তাহের মধ্যে শর্ত পূরণেরও আশ্বাস।
মঙ্গলবার টুইটারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নতুন নীতি নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। নিয়োগ করা হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন চিফ কমপ্লায়েন্স অফিসারও। সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য শীঘ্রই ভারত সরকারকে জানানো হবে।
কিন্তু ঘটনার এখানেই শেষ নয়। মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে ভারতের উত্তরপ্রদেশে দায়ের হওয়া একটি মামলা নিয়ে টুইটারের বিরুদ্ধে নতুন বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়েছে।
সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশে একদল দুষ্কৃতের হাতে আক্রান্ত হন সুফি আবদুল সামাদ নামের একজন প্রৌঢ়। সেই ঘটনার ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ ওঠে, মাদুলি এবং কবচ বিক্রি করার দায়ে ওই প্রৌঢ়কে 'বন্দে মাতরম' এবং 'জয় শ্রী রাম' বলতে বাধ্য করা করে দুষ্কৃতকারীরা। এমনকি তার দাড়িও কেটে নেওয়া হয়।
এই ঘটনায় গত কয়েক দিন ধরেই সরগরম ভারতীর নেটমাধ্যম। বিষয়টির তীব্র নিন্দা করেছেন বিশিষ্টজনেরা। সংবাদমাধ্যমেও উত্তরপ্রদেশের শাসনব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে এই ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক রূপ দেওয়া হচ্ছে বলে পাল্টা অভিযোগ করেছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। তাদের দাবি, ভুল বুঝিয়ে কবচ বিক্রির জন্য ওই প্রৌঢ়ের উপর রেগেছিলেন অনেকে। এটা কোনও সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা নয়। বরং হিন্দু-মুসলিম, দু'পক্ষের ছয়জন মিলে হামলা চালান।
উত্তরপ্রদেশের পুলিশের অভিযোগ, এই ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক রূপ দেওয়ার জন্য দায়ী টুইটার কর্তৃপক্ষই। যদিও লিখিত বিবৃতিতে সেই অভিযোগ খারিজ করে দেয় টুইটার, যা ১৪ জুন উত্তরপ্রদেশ পুলিশ সকলের সামনে তুলেও ধরে। কিন্তু তাদের দাবি, সতর্ক করা সত্ত্বেও ওই ঘটনায় সাম্প্রদায়িক মন্তব্যগুলো মুছেনি টুইটার। নিগ্রহের ওই ভিডিওটিকে বিকৃত বলে সতর্কবার্তাও দেয়নি, তাই তাদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ব্যবস্থা নেওয়াই উচিত। সেই অনুযায়ী টুইটারের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক অশান্তিতে ইন্ধন জোগানোর মামলা দায়ের করে তারা।
- সূত্র- হিন্দুস্তান টাইমস ও আনন্দবাজার পত্রিকা