তালেবানের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতারা

২০০১ সালে আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে উৎখাত করে পশ্চিমা বাহিনী। এরপর থেকে পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ট আফগান সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে তালেবান।
তালেবানের উত্থান ১৯৯৪ সালে। ১৯৯৬ সালের মধ্যে আফগানিস্তানের অধিকাংশ এলাকা দখল করে নেয় গোষ্ঠীটি। এরপর শরিয়া আইন চালু করে দেশটিতে।
বিরোধীপক্ষ ও পশ্চিমা দেশগুলোর অভিযোগ ছিল, শরিয়া আইনের নামে মানুষের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালাচ্ছে তালেবান সরকার।
তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রথম প্রধান নেতা মোল্লা মোহাম্মদ ওমর। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান।
মোল্লা ওমর মারা যান ২০১৩ সালে। কিন্তু এরও দুই বছর পরে ওমরের ছেলে তার বাবার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন।
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার দুই দশক পর আবারও আফগানিস্তানে প্রাধান্য বিস্তার করছে তালেবান। বিদেশি সেনা প্রত্যাহার শুরু হওয়ার পর থেকে তালেবানরা দেশটির অধিকাংশ অঞ্চল দখল করে নিয়েছে। এখন তারা ৯টির বেশি প্রাদেশিক রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে।
এই দলটির কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে নিয়ে এ লেখা:
হায়বাতুল্লাহ আখন্দজাদা
'বিশ্বাসীদের নেতা' নামে বিখ্যাত। ইসলামি আইনের পণ্ডিত তিনি। হায়বাতুল্লাহ তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা। গোষ্ঠীটির রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং সামরিক—যেকোনো কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে তার।

২০১৬ সালে আচমকা উধাও হয়ে যাওয়ার আগে পাকিস্তানের দক্ষিণপশ্চিমের শহর কুচলাকের একটি মসজিদে পড়াতেন আখন্দজাদা।
ধারণা করা হয়, তার বয়স ৬০। আখন্দজাদা এখন কোথায় আছেন, তা জানা যায়নি।
মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুব
তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের ছেলে। ইয়াকুব তালেবানের সামরিক অভিযান তদারকি করেন। স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিনি এখন আফগানিস্তানে আছেন।
তালেবানের মধ্যে ক্ষমতা নিয়ে অন্তর্কোন্দলের সময় বেশ কয়েকবার দলের প্রধান হিসেবে তার নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু নিজের বয়স অনেক কম বলে এবং যুদ্ধক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা না থাকায় তিনি আখন্দজাদাকে প্রধান করার প্রস্তাব দেন।
ধারণা করা হয়, ইয়াকুবের বয়স ত্রিশের কোঠায়।
সিরাজউদ্দিন হাক্কানি
বিখ্যাত মুজাহিদীন নেতা জালালউদ্দিন হাক্কানির ছেলে। হাক্কানি নেটওয়ার্কের নেতৃত্বে আছেন সিরাজউদ্দিন। হাক্কানি নেটওয়ার্ক পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে তালেবানের আর্থিক ও সামরিক সম্পদের দেখভাল করে।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আফগানিস্তানে আত্মঘাতী বোমা হামলা শুরু হয়েছে হাক্কানি নেটওয়ার্কের হাত ধরে। সাবেক আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইকে হত্যাচেষ্টার এবং ভারতের দূতাবাসে আত্মঘাতী হামলা চালানোর অভিযোগ রয়েছে দলটির বিরুদ্ধে।
ধারণা করা হয়, হাক্কানির বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি।
মোল্লা আব্দুল গনি বরাদার
তালেবানের সহপ্রতিষ্ঠাতাদের একজন। বরাদার এখন তালেবানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের প্রধান এবং দোহার আলোচনা টিমের সদস্য। আলোচনা দলটি আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও যুদ্ধবিরতির প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করে।

গত কয়েক মাসে এ আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে।
বরাদার ছিলেন মোল্লা ওমরের সবচেয়ে বিশ্বস্ত নেতাদের একজন। ২০১০ সালে পাকিস্তানের করাচিতে তিনি গ্রেপ্তার হন, পরে ২০১৮ সালে মুক্তি পান।
শের মোহাম্মদ আব্বাস স্তানিকজাই
সাবেক তালেবান সরকারের প্রতিমন্ত্রী। স্তানিকজাই প্রায় এক দশক দোহায় ছিলেন। ২০১৫ সাল পর্যন্ত তিনি সেখানে তালেবানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
আফগান সরকারের সঙ্গে দর কষাকষিতে অংশ নিয়েছেন স্তানিকজাই। বেশ কয়েকটি দেশে কূটনৈতিক সফরেও তালেবানের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি।
আব্দুল হাকিম হাক্কানি
তালেবানের আলোচনা টিমের প্রধান। ধর্মীয় বিশেষজ্ঞ পরিষদের নেতৃত্ব দেন।
ধারণা করা হয়, আব্দুল হাকিম হাক্কানিকে আখন্দজাদা সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করেন।