তালেবানরা কি ইজরায়েলের বংশধর?

নাইন-ইলেভেন হামলার দুই দশকপূর্তির অল্প কদিন আগেই কাবুলের দখল তালেবানের হাতে চলে যাওয়ায় গোটা দুনিয়ার নজর আবার ঘুরে গেছে আফগানিস্তানের দিকে।
মধ্য-দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির পশ্চিমে ইরান, পূর্বে পাকিস্তান। স্থলবেষ্টিত এই দেশটিতে একসময় আল-কায়েদা ও ওসামা বিন লাদেনের ঘাঁটি ছিল।
তবে এসব ছাড়াও ইহুদি ইতিহাসের এক অমীমাংসিত রহস্য লুকিয়ে আছে আফগানিস্তানের পেটে। সেই রহস্যটি হলো, ইজরায়েলের দশ হারানো গোত্র।
গত দুই দশকে বহুবার পত্রপত্রিকাগুলোতে ছাপা অনেক নিবন্ধে প্রশ্ন তোলা হয়েছে আফগানিস্তানের পশতুন জাতি ইজরায়েলের হারিয়ে যাওয়া দশ গোত্রের বংশধর কি না। ২ হাজার ৭০০ বছরেরও আগে অ্যাসিরিয়ান সাম্রাজ্য থেকে নির্বাসিত হয়েছিল এই ইজরায়েলিরা। প্রসঙ্গত, তালেবানের সিংহভাগ সদস্যই পশতুন।
অনেকের কাছে পশ্তুন ও হারানো ইজরায়েলি গোত্রের এই যোগসূত্র অবিশ্বাস্য লাগতে পারে। তবে তথ্য-উপাত্তের দিকে তাকালে মনে হতেই পারে যে, পশতুন ও হারিয়ে যাওয়া ইজরায়েলিদের মধ্যে যোগসূত্র থাকাটা একেবারে অসম্ভব নয়।
পশতুন, ওরফে পাঠানরা সংখ্যায় এক কোটি। তাদের বাস পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ভারতে। পশতুনদের মধ্যেও কয়েকশো গোত্র ও উপজাতি আছে, যারা বিদেশি আক্রমণ ও দখলদারিত্বের মধ্যেও অতি যত্নে নিজেদের ঐতিহ্য সংরক্ষণ করেছে।
ওই অঞ্চলে ইসলামী মৌলবাদের উত্থানের আগে বহু পশতুন নিজেদের বনি ইজরায়েল (ইজরায়েলের সন্তান) দাবি করত। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই দাবি করে আসছিল পশতুনরা।
ইতিহাসবিদরা খেয়াল করেছেন, সেই তেরো শতকেও পশতুনরা এই দাবি করত। সে সময় কিন্তু মধ্য এশিয়ায় একটা প্রাচীন ইজরায়েলি গোত্রের বংশধর দাবি করলেও কোনো ফায়দা পাওয়া সম্ভব ছিল না।
উনিশ শতাব্দীতে ওই অঞ্চল সফরে যাওয়া বেশ কিছু পশ্চিমা বিশ্বাস করে ফেলেন যে, পশতুনরা আসলেই ইজরায়েলিদের বংশধর।
হিস্ট্রি অভ দি আফগানস (১৮৫৮) বইয়ে জোসেফ-পিয়েরে ফেরিয়ার লিখেছেন, অন্যতম পশতুন গোত্র ইউসেফজাইয়ের (জোসেফের পুত্র) গোত্রপ্রধান পারস্যের শাহ, নাদের শাহ আফসারকে হিব্রুতে লেখা একটি বাইবেল উপহার দিয়েছিলেন। সঙ্গে দিয়েছিলেন প্রাচীন উপাসনায় ব্যবহৃত আরও কিছু জিনিস। বংশপরম্পরায় এসব জিনিস সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন তারা।
ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান আর্মির মেজর হেনরি ডব্লিউ বেলিউ-ও দ্য লস্ট ট্রাইবস-এ (১৮৬১) লিখেছেন যে, পশতুনদের গোত্র ও জেলাগুলোর নামের সঙ্গে প্রাচীন ইজরায়েলি নামগুলোর মিল রয়েছে।
ইজরায়েলের সাবেক প্রেসিডেন্ট, প্রয়াত ইৎজাক বেন-জভি দি এগজাইল্ড অ্যান্ড দ্য রিডিমড (১৯৫৭) বইয়ের পুরো একটা অধ্যায়ই খরচ করেছেন আফগান গোত্র ও তাদের ঐতিহ্যের ওপর। বিস্তর গবেষণা ও ইসজারায়েলে অভিবাসী হওয়া আফগানি ইহুদির সঙ্গে কথা বলে বইটি লিখেছেন বেন-জভি।
এ বইয়ে তিনি লিখেছেন, যে আফগান গোত্রগুলোর সঙ্গে ইহুদিরা থাকত তাদের কাছে হারানো দশ গোত্রের কিছু স্মৃতিচিহ্ন আছে। যদিও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসার জন্য এসব তথ্য-প্রমাণ যথেষ্ট নয়।
তবে আধুনিক পণ্ডিতদের অনেকেও পশতুনদের সঙ্গে ইজরায়েলের হারানো গোত্রের যোগসূত্র নিয়ে অনেক লেখালেখি করেছেন। ইজরায়েলি পণ্ডিত এয়াল বি'ইরি পশতুনদের রীতিনীতির সঙ্গে ইহুদিদের রীতিনীতির মিল নিয়ে বেশ কয়েকটি লেখা লিখেছেন।
পশতুন ও ইহুদিদের যেসব প্রথায় মিল আছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে—জন্মের অষ্টম দিনে শিশুর খৎনা করানো, দুধ ও মাংস একসাথে না খাওয়া, স্যাবাথের (সপ্তাহের প্রথম দিন, রোববার) প্রাক্বালে মোমবাতি প্রজ্বলন, মৃত ভাইয়ের বিধবা স্ত্রীকে বিয়ে করার বাধ্যবাধকতা।
দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে যোগসূত্রের ব্যাপারটি নিশ্চিত করার জন্য ডিএনএ গবেষণায় সামান্য প্রমাণ মিলেছে। ২০১৭ সালে প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধ থেকে জানা যায়, পশতুন গোত্র খটকের সঙ্গে ইহুদিদের জেনেটিক যোগসূত্র পাওয়া গেছে।
পশতুনদের পূর্বপুরুষদের সঙ্গে ইহুদিদের যোগসূত্র থাকলেও, তালেবানরা কিন্তু প্রবল ইহুদি-বিদ্বেষী। অবশ্য পশতুনদের আদিপুরুষদের নিয়ে অন্যান্য তত্ত্বও আছে।
- সূত্র: জেরুজালেম পোস্ট