টানা দ্বিতীয় বছরের মতো বিদেশী হজ্ব যাত্রীদের আগমনে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে সৌদি আরব
বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ এর নতুন নতুন ভ্যারিয়ান্টের কারণে সংক্রমণ বাড়তে থাকায় গত বছরের মতো এ বছরও বিদেশী হজ্ব যাত্রীদের আগমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করার কথা ভাবছে সৌদি আরব। সংশ্লিষ্ট দুটি সূত্র থেকে বুধবার এই খবর পাওয়া যায়।
সৌদি আরবের এই পদক্ষেপের ফলে মক্কায় হজ্বযাত্রা নিষিদ্ধ করা হবে। হজ্ব পালন করা প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য একটি ফরজ কাজ। সৌদি আরবের নাগরিক ও বাসিন্দাদের মধ্যে যারা ভ্যাকসিন নিয়েছেন কিংবা কোভিড থেকে অন্তত কয়েক মাস আগে সুস্থ হয়ে ফিরেছেন, তারা হজ্বে যোগ দিতে পারবেন।
তবে হজ্বে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হতে পারে বলে আলোচনা চললেও এখনো পর্যন্ত কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
মহামারীর কারণে সারা বিশ্বে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার নিয়ম শুরু হওয়ার আগে প্রতি বছর অন্তত ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন হজ্বযাত্রী সপ্তাহব্যাপী হজ্ব পালনের উদ্দেশ্যে পবিত্র নগরী মক্কা ও মদিনায় আসতেন। এর বাইরে উমরাহ পালনের উদ্দেশ্যেও সারা বছরই মানুষ আসতো। এই সব মিলিয়ে সৌদি আরবের প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার আয় হতো বলে অফিসিয়াল ডেটা থেকে জানা যায়।
সৌদি বাদশাহ মোহাম্মদ বিল সালমানের নেয়া অর্থনৈতিক সংশোধন পরিকল্পনার অংশ অনুযায়ী প্রত্যাশা করা হয়েছিল যে ২০২০ সালের মধ্যে রাজ্যে উমরাহ ও হজ্ব পালনে আগতদের সংখ্যা যথাক্রমে ১৫ মিলিয়ন ও ৫ মিলিয়নে উন্নীত হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে উমরাহ পালনের সংখ্যাটা দ্বিগুণ করে ৩০ মিলিয়নে নেওয়ার লক্ষ্যও ছিল তাদের। ২০৩০ সালের মধ্যে শুধুমাত্র হজ্ব পালন থেকেই নিজেদের আয় ৫০ বিলিয়ন রিয়াল (১৩ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার) রাজস্ব আয় গড়ে তোলার পরিকল্পনা ছিল সৌদি আরবের।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দুই সূত্র জানায়, বিদেশী হজ্বযাত্রীদের নিয়ে কর্তৃপক্ষ তাদের আগের সব পরিকল্পনা স্থগিত করেছে এবং এখন তারা শুধুমাত্র নিজেদের নাগরিকদের হজ্ব করতে দেয়ার কথা ভাবছে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই হজ্ব শুরুর অন্তত ছয় মাস আগে ভ্যাকসিন নেয়া থাকতে হবে বা কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হতে হবে।
হজ্বে অংশ নেয়া ব্যক্তিদের বয়সের উপর ভিত্তি করেও বিধিনিষেধ আরোপ হবে।
দ্বিতীয় আরেকটি সূত্র থেকে জানা যায়, কর্তৃপক্ষ এখন শুধুমাত্র ভ্যাকসিন নিয়েছে এমন অল্প সংখ্যক বিদেশী নাগরিকদের অনুমতি দিবে। কিন্তু ভ্যাকসিনের ধরন বুঝে কার্যকারিতার হিসাবে আবার এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে হচ্ছে তাদের।
তবে এ ব্যাপারে সরকারি গণমাধ্যম কোনোরূপ মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
ইসলামের ধারক ও বাহক এবং পবিত্র মক্কা ও মদিনা নগরীর তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে নিজেদের খ্যাতি বজায় রাখতে সবসময় সচেষ্ট সৌদি আরব। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে গতবছর, সৌদি আরবের ইতিহাসে প্রথমবারের মত বিদেশী নাগরিকদের হজ্ব পালনে বাধা দেয়া হয়। সেবারও শুধুমাত্র অল্পকিছু সৌদি আরববাসী হজ্ব পালনের অনুমতি পেয়েছিল।
বিশ্বের ৩৫ টি দেশে এখনো কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। এখনো পর্যন্ত সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৫৩,৫০৮,০০০ জন এবং মারা গিয়েছেন ৩,৩৫১,০০০ জন।
সর্বোচ্চ করোনা সংক্রমণ এবং নতুন মৃত্যুহারের দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে ভারত, যেখানে প্রতি চারজনে একজনের মৃত্যুর রিপোর্ট করা হয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত হজ্বযাত্রীদের ভিড়ে ব্যাপক হারে ভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ এর আগেও অনেক হজ্বযাত্রী নানা উপসর্গ ও সংক্রামক রোগ নিয়ে নিজ দেশে ফেরত গিয়েছেন।
ফেব্রুয়ারিতে সৌদি সরকার ২০ টি দেশের মানুষের সৌদিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তবে কূটনীতিবিদ, সৌদি নাগরিক ও চিকিৎসক ও তাদের পরিবাররা এর আওতার বাইরে।
বর্তমানে চলমান এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, দক্ষিণ আফ্রিকা, ফ্রান্স, মিশর, লেবানন, ভারত ও পাকিস্তান।
সূত্র- রয়টার্স