জ্বালানির সন্ধানে শেষপর্যন্ত আমেরিকার ওপর নির্ভরশীলতার সিদ্ধান্ত নিতে পারে চীন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানিকারকদের সাথে আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে চীনের প্রধান প্রধান জ্বালানি কোম্পানির। ফলে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি হতে পারে। বিশ্ব বাজারে প্রাকৃতিক গ্যাসের রকেটগতির মূল্য উলম্ফন আর স্থানীয়ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন স্বল্পতার কারণেই জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত চীন, আর সেজন্যই এমন চুক্তির প্রতি আগ্রহ বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলি বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানায়।
সূত্রমতে, যুক্তরাষ্ট্রের দুটি বড় রপ্তানিকারক সংস্থা- চেনিয়ার এনার্জি ও গ্লোবাল ভেঞ্চারের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে এমন অন্তত পাঁচটি চীনা কোম্পানির কথা জানা গেছে। এদের মধ্যে আছে, কেন্দ্রীয় সরকারের মালিকানাধীন সিনোপেক কর্প ও চায়না ন্যাশনাল অফশোর অয়েল কোম্পানি (সিএনওওসি) এবং স্থানীয় সরকারের আওতাধীন ঝেজিয়াং এনার্জির মতো বৃহৎ প্রতিষ্ঠান।
আলোচনার ভিত্তিতে হাজার হাজার কোটি ডলার অঙ্কের বিশাল সব চুক্তি হতে পারে, যা আমেরিকা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের এলএনজি আমদানি বিপুল পরিমাণে বাড়াবে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের সবচেয়ে উত্তেজক সময় ২০১৯ সালে দুই দেশের গ্যাস বাণিজ্য প্রায় মুখ থুবড়ে পড়ে, তাই নতুন করে চীনে রপ্তানির জন্য এলএনজি অবকাঠামো গড়ে তুলতে মার্কিন রপ্তানিকারকদের বেশ কয়েক বছর সময়ও লাগবে।
উত্তর আমেরিকার উপকূলীয় কিছু অঞ্চলে এমন কিছু প্রকল্প চলমান থাকলেও, সেগুলো চলতি দশকের মাঝামাঝি সময়ের আগে চালুর সম্ভাবনা নেই।
জ্বালানি চাহিদা বুঝে চলতি বছরের শুরুতেই মার্কিন সরবরাহকদের সাথে আলোচনা শুরু করে চীন। বিগত কয়েক মাসে জ্বালানি বাজারের অস্থিরতা আলোচনায় নতুন গতি যোগ করে। এশিয়া ও ইউরোপে এখন চলছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ও শীতকালে ঘর উষ্ণ রাখার জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যাপক ঘাটতি। ফলে চলতি বছর এশিয়ায় প্রাকৃতিক গ্যাসের দর চড়েছে পাঁচগুণ হারে। এতে শীতকালে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্নতার ভয়ও সৃষ্টি হয়েছে।
বেইজিং ভিত্তিক জ্যেষ্ঠ একজন শিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিত্ব জানান, "শীত মৌসুমে সরবরাহ সঙ্কট ও ঊর্ধ্বমুখী মূল্যের চাপে কোম্পানিগুলো সরবরাহ ঘাটতিতে রয়েছে। গেল আগস্টে স্পট মার্কেটে গ্যাসের দর প্রতি মিলিয়ন ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিটে ১৫ ডলারে উন্নীত হওয়ার পর থেকে আমেরিকানদের সাথে আলোচনা জোরালো হয়।"
বেইজিং-ভিত্তিক আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, "সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয় বাজারের ব্যাপক অস্থিরতা লক্ষ্য করে কিছু ক্রেতা প্রতিষ্ঠান তাদের হাতে পর্যাপ্ত সংখ্যক দীর্ঘমেয়াদী সরবরাহ চুক্তি না থাকার জন্য আফসোস করেছে।"
গত সোমবার চেনিয়ারের সঙ্গে ১৩ বছর মেয়াদি চুক্তির ঘোষণা করে চীনের বেসরকারি কোম্পানি ইএনএন ন্যাচারাল গ্যাস কো., চুক্তির আলোচনায় নেতৃত্ব দেন সিএনওওসির সাবেক এলএনজি শাখার প্রধান। তাই আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই বড় আঙ্গিকে গ্যাস ক্রয় চুক্তির ঘোষণা আসবে বলে সূত্রগুলি আশা প্রকাশ করেছে।
তাছাড়া, ২০১৮ সালের পর এটিই ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে স্বাক্ষরিত প্রথম এলএনজি চুক্তি।
চুক্তিগুলোর ফলে বিশ্বের শীর্ষ এলএনজি ক্রেতা হিসেবে চীনের অবস্থান আরো দৃঢ় হবে। চলতি বছরেই জাপানকে এদিক থেকে ছাড়িয়ে প্রথম স্থানে উঠে এসেছে চীন।
- সূত্র: রয়টার্স