চার সপ্তাহেই করোনার টিকা, ফের দাবি ট্রাম্পের
চীনের দাবি, দু'তিন মাসের মধ্যে করোনার টিকা বাজারে আসবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আরও এক ধাপ এগিয়ে গত বুধবার দাবি করলেন, আর এক মাসের মধ্যে তৈরি হয়ে যাবে করোনার মার্কিন প্রতিষেধক।
যুক্তরাষ্ট্রে আজ বুধবার নাগাদ দুই লাখ ছাড়িয়েছে মৃতের সংখ্যা। সংক্রমিত ৬৭ লক্ষ। এদিকে, সামনের নভেম্বরেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তার আগে যে কোনও উপায়ে প্রতিষেধক আনতে মরিয়া ট্রাম্প।
বুধবার ফিলাডেলফিয়ায় টাউন হল শীর্ষক একটি মার্কিন টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠানে তার রাজনীতির চেনা সুরেই ট্রাম্প বলেন, ''আগের সরকার হলে ভ্যাকসিন আনতে বছরের পর বছর সময় লাগিয়ে দিত... ওই এফডিএ (ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) ও অন্যান্য সংস্থার লাল ফিতের বাঁধা পেরোতে। আর কয়েক সপ্তাহ লাগবে। হয়তো তিন কী চার সপ্তাহ।''
ওই অনুষ্ঠানে এক ব্যক্তি নিজেকে রক্ষনশীল রিপাবলিকান সমর্থক পরিচয় দিয়ে প্রেসিডেন্টকে বলেন, ১ মে পর্যন্ত তিনি ট্রাম্পের আশ্বাসে খুশি ছিলেন। কিন্তু এখন বাড়ি থেকে বের হতে ভয় পান। তিনি ডায়াবেটিস-রোগী। তিনি আরও জানান, রাস্তায় মাস্ক ছাড়া লোকজন দেখলে পাশ কাটিয়ে-কাটিয়ে হাঁটেন। মানুষের এই মাস্ক না-পরা, পারস্পরিক দূরত্ব বজায় না-রাখা; এ ধরনের বেপরোয়া মনোভাবের জন্য প্রেসিডেন্টকেই দায়ী করেছেন ওই সমর্থক।
সম্প্রতি এফডিএ-এর এক কর্মমর্তার সাক্ষাৎকারে ইঙ্গিত মেলে, পরীক্ষাধীন মার্কিন ভ্যাকসিনটিকে ছাড়পত্র দেওয়ার কথা ভাবছে ট্রাম্প-প্রশাসন। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকেও তেমন আভাস মিলছে।
নানা গণমাধ্যম সূত্রে প্রকাশ , ভোটের আগে বাজারে ভ্যাকসিন আনার জন্য লাগাতার চাপ দিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। অন্যদিকে, যেসব ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা ভ্যাকসিন তৈরি করছে, তারা জানিয়েছে, ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সম্পূর্ণ হয়ে হাতে চূড়ান্ত রিপোর্ট না-এলে, ভ্যাকসিন বাজারে ছাড়া হবে না।
বিজ্ঞানীরাও এনিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, রাজনীতির মাঝে পড়ে মানুষের স্বাস্থ্য-নিরাপত্তা না ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
'সায়েন্টিফিক আমেরিকান' নামে একটি জনপ্রিয় বিজ্ঞান বিষয়ক পত্রিকা ১৭৫ বছরের মধ্যে এই প্রথম নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনকে সমর্থন করছে। ওই পত্রিকার বক্তব্য, ''প্রমাণ ও বিজ্ঞানকে অগ্রাহ্য করেন ট্রাম্প। এই অতিমারিতে তার আচরণ অসৎ এবং যুক্তিহীন।''
টাউন হল- অনুষ্ঠানে ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কেন এতদিন পরিস্থিতিকে হাল্কা করে দেখানো হয়েছে? জবাবে তিনি বলেন, ''মোটেই হাল্কা করে দেখাইনি। বড় করেই দেখিয়েছি।'' তার পরই কাঁধ ঝাঁকিয়ে দাবি করেন, তিনি ইউরোপ ও চীনে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি না-করলে, মৃত্যু আরও বাড়ত। বলেন, ''অনেক প্রাণ বাঁচিয়ে দিয়েছি!''
গোটা বিশ্বে সংক্রমণের সংখ্যা ৩ কোটি ছুঁয়ে ফেলছে প্রায়। মৃত্যু, ৯ লাখ ৪৬ হাজারের বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের পর সংক্রমণ তালিকায় রয়েছে ভারত ও ব্রাজিল, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে।
এক কোটি ৭৯ হাজার সংক্রমিতকে নিয়ে রাশিয়া চতুর্থ স্থানে। কিন্তু মৃত্যু-তালিকায় রাশিয়া প্রথম দশে নেই। তাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী, এক কোটির উপরে সংক্রমণ হলেও মৃত্যু ১৮,৯১৭টি।
মৃত্যুতে চতুর্থ স্থানে রয়েছে মেক্সিকো। মৃত্যুহারেও এগিয়ে তারা। ৬ লক্ষ ৭৬ হাজার করোনা-আক্রান্তের মধ্যে মারা গিয়েছেন ৭১,৬৭৮ জন।
- সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা