গাজা ও পশ্চিম তীরে সংঘঠিত নিপীড়নের বিচার করার এখতিয়ার রয়েছে আইসিসির
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) শুক্রবার একটি রুল জারির মাধ্যমে জানিয়েছেন, ফিলিস্তিন সীমান্তে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ ও নিষ্ঠুরতার বিষয়টি তাদের বিচারের আওতায় পড়ে।
এই রায়ের মাধ্যমে অপরাধ তদন্তের একটি নতুন দ্বার উন্মোচিত হলো।
এর আগেও যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়েছে- তা বিশ্বাস করার 'যৌক্তিক কারণ' রয়েছে দাবি করে কোর্টের প্রসিকিউটর ফাতু বেনসুদা একটি তদন্ত করতে চেয়েছিলেন।
ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ এই রুলের প্রশংসা করলেও সমালোচনা করেছেন ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।
স্থানীয় সংবাদ সংস্থা 'ওয়াফা'য় ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিতায়েহ বলেন, 'আইসিসির এই সিদ্ধান্ত মানবতা ও ন্যায়বিচারের বিজয় প্রমাণ করে। এর মাধ্যমে সত্য, সুবিচার ও নির্যাতিত মানুষের রক্তের মূল্য প্রমাণিত হবে।'
তবে ইসরায়েল, যারা কি না আইসিসির সদস্য নয়, তারা এই রায়কে প্রত্যাখান করেছে। তারা আইসিসিকে একটি 'বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠী' আখ্যা দিয়ে এর হাত থেকে নিজেদের জনগণ ও সৈন্যদের বাঁচাবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
নেতানিয়াহুর ভাষ্যে, 'আদালত তার এই রায়ের মধ্য দিয়ে স্বাধীন দেশগুলোর নিজেদেরকে সুরক্ষা করার ক্ষমতা দুর্বল করে দিয়েছে।'
গাজার বিষয়ে তদন্ত শুরু করার মতো পর্যাপ্ত প্রাথমিক অনুসন্ধান করা হয়েছে- মোসাম্মত বেনসুদার এমন বক্তব্যের মাত্র এক বছর পরই এই রায় ঘোষণা করা হলো।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং হামাসের মতো ফিলিস্তিনি গোষ্ঠি- উভয়ের নাম করেই তিনি সীমান্ত নিয়ে বিবাদমান আইনি ও প্রকৃত ইস্যুগুলোতে ঠিক কোন কোন ক্ষেত্রে তদন্ত করা হবে, তা নির্ধারণ করতে আদালতে আবেদন করেন।
আইসিসি ২০০২ সাল থেকে গ্লোবাল জাস্টিস সিস্টেমের অংশ হিসেবে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠা চুক্তি অনুযায়ী 'রোম সংবিধানে'র অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোতে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা ও মানবতা বিরোধী অপরাধের শাস্তি দেওয়ার অধিকার এর রয়েছে।
ইসরায়েল কখনো 'রোম সংবিধান'কে অনুমোদন না দিলেও, জাতিসংঘ মহাসচিব ২০১৫ সালে এখানে ফিলিস্তিনকে সংযোজিত হবার অধিকার দেন।
শুক্রবার আইসিসি জানান, সংখ্যাগুরু মানুষের মতামতের ভিত্তিতেই কোর্টের বিচারের আওতা গাজা, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক এই আদালত জানান, আদালতটির প্রতিষ্ঠিত তথ্যাদির ভিত্তিতে করা রুল অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং এটি কোনোরকম রাজ্য কিংবা আইনি সীমারেখা নির্ধারণ করার উদ্দেশ্যে প্রকাশিত হয়নি।
ওই অঞ্চলের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, আইসিসির নিজ বিচাররেখা জাহির করার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের বড় ধরনের উদ্বেগ রয়েছে।
তবে এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছে মানবাধিকার দলগুলো। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের অ্যাসোসিয়েট ইন্টারন্যাশনাল জাস্টিসের ডিরেক্টর বালকিস জারা কোর্টের এই রুলকে 'কেন্দ্রগত সাফল্য' বলে আখ্যা দিয়েছেন।
এক বিবৃতিতে জারা আরও বলেন, 'সময় এসেছে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি যুদ্ধাপরাধীদের জঘন্য অপরাধগুলোর শাস্তি দেওয়ার, সেটা যুদ্ধকালীন অপরাধ কিংবা বেআইনি ফয়সালাগুলোর জন্যই হোক।'
- সূত্র: বিবিসি