গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে বাধ্য করা হচ্ছে জেলেদের
গভীর সমুদ্রে আন্তর্জাতিক জলসীমায় মাছ ধরা একটি 'রহস্যময় ব্যাপার' বলা যায়। যেহেতু সমুদ্রের এসব অঞ্চল রাষ্ট্রায়ত্ত্ব এখতিয়ারের বাইরে থাকে, তাই এখানের সকল কার্যক্রম দেখাশোনা করা সম্ভব হয়না। এই জায়গাগুলোতে মাছ ধরাকে একটি 'অধিক পরিশ্রম কিন্তু কম মুনাফা' জাতীয় কাজ বলে ধরে নেয়া হয়। কিন্তু তবুও কেন জেলেরা এই স্থানগুলোতে কাজ করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া সান্তা বারবারার একজন সিনিয়র প্রজেক্ট রিসার্চার গেভিন ম্যাকডোনাল্ড । গেভিন একজন পরিবেশ বিজ্ঞানী । ২০১৮'র দিকে তিনি তার সহকর্মীদের সঙ্গে মিলে একটি গবেষণা চালিয়ে দেখতে পান যে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার এই ব্যবসায়ে লাভ থাকেনা বললেই চলে। এমনকি সরকার ভর্তুকি দিলেও তাদের প্রয়োজনীয় মুনাফা অর্জন করা সম্ভব নয়। তবুও সেখানে প্রতিবছর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অসংখ্য জাহাজ ও সাথে হাজার হাজার জেলেরা কেন কাজ করতে যায় তা ছিল একটি আশ্চর্যজনক বিষয় ।
অবশেষে তাদের গবেষণায় বেরিয়ে আসে যে যে এসব জাহাজ আসলে প্রচুর পরিমাণ শ্রমিককে কাজ করতে বাধ্য করছে নামমাত্র মজুরিতে। এমনকি কখনো কখনো বিনা মজুরিতেও হতে পারে।
জানা গেছে, ২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এক লাখ মানুষকে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার কাজে যেতে বাধ্য করা হয়েছে । এই গোপন তথ্যটি জানার জন্যে তারা স্যাটেলাইট মনিটরিং ও মেশিন লার্নিং অ্যালগোরিদম প্রযুক্তি ব্যবহার করেন।
'জোরপূর্বক শ্রম' বলতে আমরা জানি এমন শ্রম যা একজন ব্যক্তি নিজ ইচ্ছায় দিতে চায় না, তার কাছ থেকে এটি আদায় করা হয়। সে কাজ করতে না চাইলে তাকে শাস্তিও দেয়ার ব্যবস্থা হয়ত থাকে। দুঃখজনকভাবে সমুদ্রে মাছ ধরার ব্যবসার ক্ষেত্রে এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি সবচেয়ে বেশি দেখা যায় এবং এগুলো সরকারের নজরের বাইরে থাকে।
গেভিন তার টিম নিয়ে বের করতে চাইছিলেন যে এমন কী কী বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে যা দেখে বোঝা যাবে যে এই জাহাজগুলো 'জোরপূর্বক শ্রম' ব্যবহার করছে। মানবাধিকার সংগঠন, গ্রিনপিস, লিবার্টি শেয়ারড ইত্যাদি সংস্থার সাথে মিলে স্যাটেলাইট মনিটরিং ও সমুদ্রে মাছ ধরার সময়ক্ষণ হিসাব রেখে গেভিন তার প্রশ্নের উত্তর বের করেন। দেখা যায় যে , যেসব জাহাজ সমুদ্রে বেশিক্ষণ ধরে থাকে, দূর বন্দরগুলোতে যায় ও দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয় সেসব জাহাজে এই জোরপূর্বক শ্রম নেয়া হয়ে থাকে ।
আরো গেছে, গভীর সমুদ্রগামী জাহাজে জোর করে শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানো হয়ে থাকে প্রধান সমুদ্র অববাহিকাগুলোতে। ২০১৮ সালে এসব ঝুঁকিপূর্ণ জাহাজ ৭৯ টি দেশ পরিভ্রমন করেছে যার মধ্যে সন্দেহজনকভাবে কানাডা, আমেরিকা, নিউজিল্যান্ড ও কিছু ইউরোপীয় দেশই রয়েছে বেশি।
বর্তমানে গেভিনের করা এই গবেষনা অনুযায়ী স্থানীয় কর্তৃপক্ষ মাছ ধরার ব্যাপারে নতুন নিয়মনীতি প্রয়োগ করেছে। গেভিনের টিম একটি প্রোটেক্টিভ মডেল তৈরি করেছে এই অবৈধ শ্রম বন্ধ করতে। প্রাপ্ত ডেটা অনুযায়ী এখন তারা গ্লোবাল ফিশিং ওয়াচ নামের সংস্থার সঙ্গে কাজ করবে অপরাধীদের ধরতে। গেভিন ও তার টিমের প্রত্যাশা, তারা খুব শীঘ্রই শ্রমিকদের এই নির্যাতন ও ঝুঁকির হাত থেকে বাঁচানোর প্রক্রিয়া আরো কার্যকর করতে পারবেন।
সূত্র: ইয়াহু নিউজ