কোভিড-১৯ নিয়ে ‘গুরুতর পরিণতির’ হুমকি কিম জং উনের
কঠোর কোভিড-১৯ প্রতিরোধ কর্মসূচি বাস্তবায়নে ব্যর্থ হওয়ায় উত্তর কোরিয়ার কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছেন কিম জং উন। তরুণ একনায়ক বলেছেন, কর্তব্যে এ রকম অবহেলা উত্তর কোরিয়ার মতো দরিদ্র ও বিচ্ছিন্ন জাতির জন্য 'গুরুতর পরিণতি' বয়ে আনবে। খবর দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের।
ঠিক কোন ঘটনাকে কিম 'মহাসংকট' বলেছেন, তা জানা যায়নি। কতজন কর্মকর্তা এ ঘটনার জন্য দায়ী, তা-ও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। শুধু রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত কোরিয়ান সেন্ট্রাল এজেন্সি-র (কেএসিএনএ) বরাতে জানা গেছে, দেশটির শাসক দল 'ওয়ার্কার্স পার্টি অফ কোরিয়া'র কয়েকজন উচ্চপর্যায়ের নেতাকে বদলি করা হয়েছে।
কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব ঘটলে উত্তর কোরিয়ায় মারাত্মক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। অস্বাভাবিক সংক্রামক এই ভাইরাসে আক্রান্ত বিপুল সংখ্যক রোগীর চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষমতা দেশটির ভঙ্গুর স্বাস্থ্য অবকাঠামোর নেই।
উত্তর কোরিয়া এখনও কোন করোনা সংক্রমণের কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করেনি। যদিও বিশ্বজুড়ে ১৮ কোটির বেশি মানুষ যে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, আড়াই কোটি জনসংখ্যার একটি দেশে সেই ভাইরাসের সংক্রমণ হয়নি—এ কথা খুব কম মানুষই বিশ্বাস করেন।
উত্তর কোরিয়ার দাবি, তারা এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯ এর ব্যাপক সংক্রমণ ঠেকিয়ে রাখতে পেরেছে। এর কারণ, একের পর এক কঠোর স্বাস্থ্যবিধি আরোপ। জনশ্রুতি আছে, কোভিড-১৯ সংক্রান্ত অপরাধের অন্য গত বছর দুইজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছেন কিম। দু'জনের মধ্যে একজন কাস্টমস কর্মকর্তা। চীন থেকে পণ্য আমদানির সময় যথাযথ নিয়ম মানেন নি তিনি।
বেইজিংয়ের সঙ্গে বাণিজ্যে বিরূপ প্রভাব পড়লেও, ভাইরাসটিকে ঠেকিয়ে রাখার জন্য ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে উত্তর কোরিয়া।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ও বাণিজ্য সমস্যা—উভয় কারণেই দেশটিতে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। বেইজিংয়ের সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছরের মে মাসের ঝড়ের কারণে কৃষিখাত যে ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছিল, তা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি উত্তর কোরিয়া।
জানা গেছে, পিয়ংইয়ংয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পণ্যের দাম আকাশছোঁয়া হয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চাল ও জ্বালানির দাম তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকলেও বেড়ে গেছে চিনি, সয়াবিন তেল ও আটার মতো প্রধান আমদানি পণ্যের দাম। দেশটিতে এক প্যাকেট ব্ল্যাক টির দাম এখন প্রায় ৭০ ডলার। এক প্যাকেট কফির জন্য খরচ করতে হয় ১০০ ডলারের বেশি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণের জন্য কড়াকড়ি আরোপ করে কিম স্বীকারই করে নিলেন যে, তারা এ ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে ভাইরাসটির সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারবে না। যেসব উত্তর কোরিয়ান স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেছেন, তারা বলেছেন, দেশটির বেশিরভাগ হাসপাতালেই পর্যাপ্ত ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী নেই। ১৯৯০-এর দশকের দুর্ভিক্ষের সময় উত্তর কোরিয়া থেকে পালিয়ে আসা নাগরিকরা জানিয়েছেন, অনেক সময় অ্যানেস্থেশিয়া না দিয়েই রোগীর অঙ্গচ্ছেদ করতে বাধ্য হতেন ডাক্তাররা। খাদ্যের জন্য ডাক্তাররা ওষুধ বিক্রি করতেন।
বৈশ্বিক ভ্যাকসিন জোট গ্যাভির সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও এখনও কোনো টিকা পায়নি উত্তর কোরিয়া। এমনকি কোভ্যাক্স কর্মসূচির আওতায় থাকা সত্ত্বেও দেশটির কাছে কোন টিকা আসে নি এখনও।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের কর্মকর্তারা গত মাসে বলেছেন, হোয়াইট হাউস পিয়ংইয়ংকে টিকা দিতে প্রস্তুত। তবে কিম সরকার এ মন্তব্যের কী প্রতিক্রিয়া দেখাবে, তা এখনও বোঝা যাচ্ছে না।
জানা গেছে, ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে উত্তর কোরিয়ার নাগরিকদের দেশের ভেতরে ইচ্ছামতো চলাফেরা করা নিষেধ। সরকারের অনুমতি ছাড়া সাধারণত উত্তর কোরিয়ানদের ঘর থেকে বেরিয়ে দূরে কোথাও যাওয়াও নিষিদ্ধ। এর ফলে ভাইরাসটির এক শহর থেকে আরেক শহরে ছড়ানোর সুযোগ একেবারেই কম।
- সূত্র: সিএনএন