কাশ্মীরে লকডাউনের ছবি তুলে পুলিৎজার জয়
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে প্রশাসন এবং সামরিক বাহিনীর দমন-পীড়নে অসহায় কাশ্মীরিদের অবস্থা- নিজেদের ছবির মাধ্যমে বিশ্বের কাছে তুলে ধরেছেন বার্তা সংস্থা এপির হয়ে কাজ করা তিন ফটো-সাংবাদিক; চান্নি আনন্দ, মুখতার খান এবং দার ইয়াসিন।
গত বছরের আগস্ট থেকে নতুন মাত্রায় শুরু হওয়া ওই অমানবিকতা বাইরের পৃথিবীর মানুষ খুব কমই জানতে পেরেছে। সাংবাদিকদের চলাচলের নিষেধাজ্ঞা, বিদেশি সংবাদ কর্মীদের কাশ্মীরে বাধা, ইন্টারনেট, টেলিফোনসহ সকল যোগাযোগ ব্যবস্থার বিচ্ছিনতা ইত্যাদি ছিল যার প্রধান কারণ।
তবে আলোচিত তিন সাংবাদিক এতসব নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই পেশাগত দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে তারা এসব চিত্র বাইরের পৃথিবীকে দেখানোর চেষ্টা করেও সফল হন। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের।
সত্যের প্রতি এমন নিষ্ঠার প্রতিদানস্বরূপ এই তিন সাহসী সাংবাদিককে ফিচার ফটোগ্রাফি বিভাগে ২০২০ সালের পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী ঘোষণা করে হয়েছে।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে নিউইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজ কক্ষ থেকে পুরস্কার জয়ীদের নাম ঘোষণা করেন পুলিৎজার বোর্ড প্রশাসক ডানা কানেডি। ইউটিউবের মাধ্যমে এই ঘোষণা লাইভ সম্প্রচার করা হয়।
ওই ঘোষণার পরে এক বিবৃতিতে ডানা জানান, হিমালয়ের কোলের ওই বিতর্কিত ভূখণ্ডে সহিংসতার মাঝে দৈনন্দিন জীবনের করুন বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন কাশ্মীরি চিত্রগ্রাহকেরা। এজন্যই তাদের পুরস্কার বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বের সাংবাদিকতা জগতের সর্বোচ্চ সম্মাননা হিসাবেই খ্যাত পুলিৎজার পুরস্কার। এটি গণমাধ্যম এবং সংবাদকর্মীদের জন্য নোবেলের চাইতে কোনো অংশে কম নয়।
সত্যের সন্ধানে প্রাণের ঝুঁকি:
সড়কের মোড়ে মোড়ে সশস্ত্র সান্ত্রীদের চেকপোস্ট, রোডব্লক। কখনোবা কারো বাড়ির ছাদ থেকে কখনোবা সবজির ব্যাগের ভেতরে ক্যামেরা লুকিয়ে ছবি তুলতে হয়েছে তাদের।
তিন ফটোগ্রাফার বিক্ষোভ, পুলিশ ও আধা-সামরিক বাহিনীর পাল্টা অ্যাকশন, নির্যাতন সবকিছুই তুলে ধরেন নিজেদের ছবির মাধ্যমে।
এরপর তারা ছুটে যেতেন স্থানীয় বিমানবন্দরে। সেখানে বিদেশি ভ্রমণকারীদের প্রতি ছবির ফাইলগুলো নিয়ে ভারতের রাজধানী নয়া-দিল্লিতে এপির কার্যালয়ে জমা দেওয়ার অনুরোধ করতেন।
গতকাল সোমবার এক ইমেইলে দার ইয়াসিন আল-জাজিরাকে বলেন, 'পুরো ব্যাপারটাই ছিল একটা ইঁদুর- বেড়াল টাইপের লুকোচুরির মতো। ধরা পড়লেই প্রাণনাশের ঝুঁকি। তারপরও এসব জিনিসই আমাদের সত্য প্রকাশে আরও বদ্ধপরিকর করে তোলে।'
চান্নি আনন্দ বলেন, 'পুরস্কার পেয়ে আমি হতবাক হয়ে যাই, আমার নিজের কাছেই এটা বিশ্বাস হচ্ছিল না।'
এপির প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান নির্বাহী গ্যারি প্রুইট তাদের কাজকে 'গুরুত্বপূর্ণ এবং অসাধারণ' বলে উল্লেখ করেন।
অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, 'কাশ্মীরে থাকা আমাদের টিমকে ধন্যবাদ। তাদের কল্যাণেই আজ বিশ্ববাসী ওই অঞ্চলের স্বাধীনতা সংগ্রামের দীর্ঘ যাত্রাপথে পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তন সম্পর্কে জানতে পারছেন।