কানাডায় জাতীয় বাজেট ও অর্থমন্ত্রীর জুতারহস্য
হাউজ অব কমন্সে জাতীয় বাজেট পেশ করার আগে কানাডার অর্থমন্ত্রী নতুন জুতা কেনেন। সেই জুতা পায়ে দিয়ে তিনি সংসদে যান এবং বাজেট পেশ করেন। এটিই হচ্ছে কানাডার ঐতিহ্য।
অর্থমন্ত্রী কোন ধরনের জুতা কিনছেন মিডিয়ার তীক্ষ্ণ নজর থাকে সেদিকে। বাজেটের আগে অর্থমন্ত্রীর কেনা জুতা দেখে বাজেটে কী গুরুত্ব পাচ্ছে সে ব্যাপারে সবাই একটা ধারণা নেয়।
এবার অবশ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন রকমের পরিবেশে ফেডারেল সরকার তাদের বাজেট পেশ করেছে। সংসদ স্থগিত করে দিয়ে নতুন যাত্রার পর লিবারেল সরকার কোনো বাজেট পেশ করেনি। গত দুই বছরে এটিই তাদের প্রথম বাজেট। ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড অর্থমন্ত্রী হওয়ার পর এটি হচ্ছে তাঁর প্রথম বাজেট। কানাডার ইতিহাসে কোনো নারী অর্থমন্ত্রীর দেয়া প্রথম বাজেটও এটি।
করোনার কারণেই হোক আর নারী অর্থমন্ত্রী বাজেট দিচ্ছেন বলেই হোক- মিডিয়া এবার অর্থমন্ত্রীর জুতার দিকে তেমন একটা নজর দেয়নি। কোভিডকালীন বিপুল ব্যয়, অকল্পনীয় ঘাটতির আলোচনায় অর্থমন্ত্রীর জুতার আলোচনাটি আড়ালই হয়ে গিয়েছিলো। তাতে কি। ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড অর্থমন্ত্রীদের চিরায়ত ঐতিহ্যকে উপেক্ষা করেননি। বাজেট পেশের আগের দিন রোববারই তিন বাজেট অধিবেশনে পায়ে দেয়ার জন্য জুতা কিনে ফেলেন।
টরন্টোর ডাউন টাউনে তার নিজের নির্বাচনী এলাকার একটি প্রতিষ্ঠান থেকে বাজেট অধিবেশনের জুতা কিনেন তিনি। 'ভাজেল' নামের এই জুতা কোম্পানিটি টরন্টোয় যাত্রা শুরু করেছিলো ২০১৫ সালে। অপেক্ষাকৃত নতুন এবং ক্ষুদ্র একটি কোম্পানি থেকে বাজেট অধিবেশনের জুতা কিনে নিয়ে আসেন কানাডার অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড।
জুতা কিনে এনেই তিনি ফোন করেন কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাতা এবং ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর এল আইয়ুবজাদেহকে। ইরানী বংশোদ্ভূত তরুণী 'এল'কে অর্থমন্ত্রী জানান, তার ডিজাইন করা, তার প্রতিষ্ঠানের জুতা পরে তিনি এবার বাজেট পেশ করতে যাচ্ছেন।
বাজেট অধিবেশনে পায়ে দেয়ার জন্য অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ডের বাছাই করা জুতার তাৎপর্য কী? বাজেটপূর্ব সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন পোস্টে তিনি উল্লেখ করেছেন, ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পকে তিনি পৃষ্ঠপোষকতা করতে চান। বাজেট অধিবেশনে পায়ে দেয়ার জন্য তিনি বেছে নিয়েছেন ক্ষুদ্র একটি কোম্পানি আর কানাডার 'ওয়ার্কিং উইম্যান'দের পায়ে দেয়ার জুতা। কোভিড থেকে অর্থনীতিকে উদ্ধারের কর্মসূচীকে তিনি 'ফেমিনিস্ট রিকভারি' হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন আগেই। বাজেটে নজর দিয়েছেন কানাডার 'ওয়ার্কিং উইম্যান'দের দিকে।
-
লেখাটি কানাডার বাংলা গণমাধ্যম 'নতুন দেশ'-এর প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগরের ফেসবুক পোস্ট থেকে নেওয়া