এক্সপো ২০২০: বাণিজ্যমেলার প্রস্তুতিতে প্রথমবারের মতো ৫ শ্রমিকের মৃত্যুর কথা স্বীকার করল দুবাই
বাণিজ্যমেলার প্রস্তুতির সময় নির্মাণাধীন স্থানে পাঁচ শ্রমিকের মৃত্যুর খবর স্বীকার করেছে 'দুবাই এক্সপো ২০২০' কর্তৃপক্ষ। শনিবার (২ অক্টোবর) বিষয়টি স্বীকার করার মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো মেলায় শ্রমিকদের মৃত্যু সংক্রান্ত তথ্য উপস্থাপন করছে দুবাই।
মহামারির কারণে এক বছর বিলম্ব হলেও গতকাল (১ অক্টোবর) জমজমাট আয়োজনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিশ্বের বৃহত্তম আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা 'দুবাই এক্সপো ২০২০'।
এর আগে এক্সপো কর্তৃপক্ষ জানায়, দুই লাখ শ্রমিকের ২৪ কোটি শ্রমঘণ্টার পরিবর্তে দুবাই এক্সপোর বিশাল স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। তবে, শ্রমিকদের আহত হওয়ার ঘটনা, মৃত্যু কিংবা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা বারবার প্রশ্ন করলেও কর্তৃপক্ষ কোনো তথ্য দেয়নি।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিরুদ্ধে 'প্রবাসী শ্রমিকদের প্রতি অমানবিক আচরণে'র অভিযোগ আনার কথা উল্লেখ করে গত মাসে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ইউরোপের দেশগুলোকে এক্সপো মেলায় অংশ না নেওয়ার আহ্বান জানায়। পার্লামেন্টের এই উদ্যোগের পরেই সামনে এল মেলা কর্তৃপক্ষের বিবৃতি।
করোনার সময় শ্রমিকদের সার্বিক অবস্থার অবনতি ঘটার কথাও উল্লেখ করে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট। এক্সপোকে সামনে রেখে "শ্রমিকদের জোরপূর্বক অনুবাদ না করা নথিপত্রে স্বাক্ষর করানো, পাসপোর্ট জব্দ ও তাদের বাজে আবহাওয়ার মধ্যে থেকে টানা বেশ কয়েক ঘণ্টা কাজ করানো এবং অপরিচ্ছন্ন জায়গায় থাকতে বাধ্য করা হয়" বলে উল্লেখ করে তারা।
গতকাল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর এক সংবাদ সম্মেলনে এক্সপো মুখপাত্র স্কোনাইড ম্যাকগ্যাসিন দাবি করেন যে, সাংবাদিকদের সামনে এর আগেও শ্রমিকদের মৃত্যু সংক্রান্ত তথ্য উপস্থাপন করা হয়। এছাড়া, নির্মাণকাজে অংশ নেওয়া শ্রমিকদের সম্মানে স্মারক নির্মাণ সংক্রান্ত প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কথাও জানান তিনি। মৃতদের সম্পর্কে কর্তৃপক্ষ সামনে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ম্যাকগ্যাচিন আরও জানান, কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের পাসপোর্ট আটকে ঠিকাদারদের জোর করে কাজ করানোর বিষয়সহ নির্মাণাধীন স্থানে নিরাপত্তা বিধি না মানার বিষয় সম্পর্কে অবগত।
"এই বিষয়গুলো যাতে সামনে আসে, আমরা সেই পদক্ষেপ নিয়েছি। একইসঙ্গে এ ধরণের ঘটনা প্রতিরোধও করা হবে," বলেন তিনি।
জ্বালানি তেল সমৃদ্ধ সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থনীতি আফ্রিকা, এশিয়া ও অন্যান্য আরব দেশগুলো থেকে ন্যূনতম পারিশ্রমিকের প্রবাসী শ্রমিকদের ওপর নির্ভর করে। শ্রমিকদের সঙ্গে অমানবিক আচরণের জন্য বিভিন্ন সময় মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সমালোচনার মুখে পড়েছে দুবাই।
তবে, প্রথমবারের মতো মধ্যপ্রাচ্যে অনুষ্ঠিত এই বাণিজ্য মেলার পরিচ্ছন্ন একটি চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করছে এক্সপো।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে শ্রমিকদের ইউনিয়ন গঠনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এখানকার শ্রমিকদের নিরাপত্তা বিধি সীমিত। দীর্ঘ কর্মঘণ্টার পরিবর্তে শ্রমিকরা যথেষ্ট পারিশ্রমিকও পান না। একইসঙ্গে, তাদের মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়।
এর আগে, কাতার বিশ্বকাপের স্টেডিয়াম নির্মাণের সময় ১০ বছরে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার ছয় হাজার ৫০০ শ্রমিকের মৃত্যুর খবর সামনে আসে। এসময় বাংলাদেশি এক হাজার ১৮ জনের মৃত্যু হয়। অধিকাংশ মৃত্যুকেই স্বাভাবিক মৃত্যু বলে চালায় বিশ্বকাপ কর্তৃপক্ষ।
- সূত্র: এপি নিউজ