আমাজন রক্ষায় ৭ দেশের অঙ্গীকার
বিশ্বের সবচেয়ে বড় বনাঞ্চল আমাজান। মূলত এটি রেইনফরেস্ট বা ক্রান্তীয় বনাঞ্চল। কাব্যিকভাবে বললে, বৃষ্টিবন। সম্প্রতি এ বনে ভয়াবহ আগুন লেগেছে। এখনও জ্বলছে ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ নামে খ্যাত বনাঞ্চলটি। এ নিয়ে উৎকণ্ঠা দূর হচ্ছে না কারও। এমন অবস্থায় দক্ষিণ আমেরিকার সাতটি দেশ দুর্যোগকালীন কাজের সমন্বয় করে ও স্যাটেলাইটে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আমাজানের সুরক্ষা দিতে নিজেরা একটি চুক্তি করেছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, শুক্রবার কলম্বিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের আরণ্যক শহর লেটিশিয়াতে একদিনের একটি সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন বলিভিয়া, ইকুয়েডর, পেরু ও কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট, সুরিনামের ভাইস-প্রেসিডেন্ট এবং গায়ানার প্রাকৃতিক সম্পদ বিষয়ক মন্ত্রী।
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জায়ের বোলসোনারো ভিডিও প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্মেলনে অংশ নেন। মূলত আমাজনের সুরক্ষা নিযে বিশ্বনেতাদের চাপের মুখে সম্মেলনটি ডেকেছিলেন তিনিই। সার্জারির জন্য তিনি সেখানে যেতে না পারায় তার দেশের প্রতিনিধি হয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্নেস্টো আরাউজো ছিলেন সেখানে।
ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সম্মেলনে একই বিষয়ে দেশগুলো আবারও বৈঠকে বসবে বলে জানিয়েছেন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট ইভান দুকো মার্কেজ। তিনি বললেন, “আমাজনের মতো রত্ন আমরা যারা ধারণ করি, তাদের জন্য এই সম্মেলন একটি ‘সহযোজন কৌশল’ হিসেবে টিকে থাকবে।”
ওদিকে, পেরুর প্রেসিডেন্ট মার্টিন ভিজকারা বলেছেন, “আমাজন রক্ষায় এখন শুধু শুভচিন্তাই যথেষ্ট নয়।”
দক্ষিণ আমেরিকান এই দেশগুলোতে আমাজানের অংশ রয়েছে। তাই উদ্বেগ সবার মধ্যেই। স্বাক্ষরিত চুক্তিতে তাই বলা হয়, এই দেশগুলো একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলবে যাতে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের সময় একে অন্যকে সহযোগিতা করতে পারে।
চুক্তির মাধ্যমে আমাজানে বনায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে। স্যাটেলাইটের সাহায্যে বন উজাড়করণের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণের পরিকল্পনাও হয়েছে। সে সঙ্গে আমাজান নিয়ে যথাযথ শিক্ষার উদ্যোগ নেওয়া ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে সেখানকার আদিবাসীদের অংশগ্রহণের বিষয়টিতেও জোর দেওয়া হবে।
আমাজানের সুরক্ষায় ক্ষতিকর ও অবৈধ সব খনিজ আহরণ প্রক্রিয়া নিয়েও দেশগুলো পরস্পরকে তথ্য দিয়ে সাহায্য করবে, এমন কথা এসেছে চুক্তিতে।
চুক্তিতে আরও বলা হয়েছে, এই দেশগুলো একসঙ্গে কাজ করবে যাতে গৃহীত কর্মসূচি ও আর্থিক বিষয়গুলোকে আরও শক্তিশালী করা যায়। তারা যেসব প্রতিশ্রুতি রাখছে সেগুলো ঠিকঠাক পালনে আর সরকারি-বেসরকারি সব সম্পদ জড়ো করে দেশগুলো চুক্তি বাস্তবায়নে কাজ করবে।
সম্মেলনের উদ্যোক্তা ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বোলসোনারো বলেছেন, চুক্তিটি বৈঠকে অংশ নেওয়া দেশগুলোর সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি।
এর আগে ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট লেনিন মোরেনো ‘পাদ্রে’ শীর্ষক গান গেয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। গানটি স্পেনিশ গায়ক জোয়ান ম্যানুয়েলের গাওয়া। বিষয়বস্তু বন-ধ্বংস।
ব্রাজিল সরকারের তথ্য অনুযায়ী, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের মধ্যে পৃথিবীতে অক্সিজেন উৎপাদনের অন্যতম কেন্দ্র আমাজন বনাঞ্চলের ব্রাজিল অংশে আগুন লাগার ঘটনা আগের চেয়ে ৮৩ শতাংশ বেশি ঘটেছে এ বছর।
আমাজনের ৬০ শতাংশই ব্রাজিলে অবস্থিত। বিশাল এ বৃষ্টিবনে ৫০০টি আদিবাসী গোষ্ঠীর প্রায় ১০ লাখ লোক বসবাস করেন। যারা মূলত বনের সুরক্ষা করেন।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বলিভিয়ার অংশেও আগুন লেগেছে।
আমাজনে কৃষি ও খনিজ সম্পদ তোলার জন্য বোলসোনারোর নেওয়া পরিকল্পনার প্রভাবেই এবার বনে আগুন বেশি লেগেছে বলে অভিযোগ ছিল নানা পক্ষ থেকে। প্রেসিডেন্টের এসব নীতিতে বন উজাড়করণের মাত্রা অনেক বেড়ে যাবে বলে পরিবেশবাদীরা সতর্ক করছিলেন। তবে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট কোনো ধরনের প্রমাণ ছাড়াই বেসরকারি সংস্থাগুলোকে আমাজানের আগুনের জন্য দায়ী করেছিলেন।
এ নিয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমান্যুয়েল মাঁখোর সঙ্গে বাকযুদ্ধে জড়ান চরম দক্ষিণপন্থী ব্রাজিলিয়ান প্রেসিডেন্ট। আমাজনের দাবানল নিয়ন্ত্রণে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট ‘মিথ্যাচার’ করছেন বলে মন্তব্য করেছিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট।
এ প্রেক্ষিতে বনটির দাবানল নিয়ন্ত্রণে জি-৭এর বৈঠক থেকে প্রস্তাবিত আর্থিক সহায়তা নিতে অস্বীকৃতি জানান ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট।