'আত্মহত্যায় সহায়তাকারী টুইটার খুনি'র দায় স্বীকার
টুইটারে যোগাযোগের মাধ্যমে নয়জনকে খুন করার অপরাধে এক জাপানি দায় স্বীকার করেছেন। এ ঘটনা দেশটিতে প্রবল চাঞ্চল্য তৈরি করেছে।
'টুইটার কিলার' নামে পরিচিতি পাওয়া তাকাহিরো শিরাইশি নামের ওই যুবককে ২০১৭ সালে তার ফ্ল্যাটে মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পাওয়ার পর গ্রেপ্তার করে জাপানি পুলিশ।
বুধবার টোকিওর এক আদালতে তিনি তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ 'সঠিক' বলে মেনে নেন।
তবে ওই খুনির আইনজীবীদের দাবি, যারা খুন হয়েছেন, তাদের সম্মতিতেই খুনগুলো করা হয়েছে বলে তাদের মক্কেলের সাজা কম হওয়া উচিত।
দোষ প্রমাণিত হলে শিরাইশির মৃত্যুদণ্ডের রায় হওয়ার কথা। জাপানে এ রায় ফাঁসির মাধ্যমে কার্যকর করা হয়।
এই মামলা নিয়ে দেশটিতে ব্যাপক চাঞ্চল্য চলছে। বুধবার ১৩টি গ্যালারিতে ৬ শতাধিক মানুষ আদালতে মামলাটির কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করেন।
যা ঘটেছিল
অভিযোগে বলা হয়, অভিযুক্ত ২০১৭ সালের মার্চে একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট খুলেন নারীদের আত্মহত্যায় সহযোগিতা করার জন্য! তার কাছে এ কাজে নারীদেরই সহজ টার্গেট বলে মনে হয়েছিল।
তার হাতে খুন হওয়াদের মধ্যে আটজনই নারী; এদের মধ্যে একজনের বয়স ১৫ বছরের নিচে। অন্যদিকে, একমাত্র পুরুষটির বয়স ২০ বছর।
ধারণা করা হয়, আত্মহত্যাপ্রবণ মানুষদের প্রলুব্ধ করতেন ২৯ বছর বয়সী শিরাইশি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের মরতে 'সাহায্য'ও করতেন তিনি।
'যারা খুবই কষ্টে রয়েছে, তাদের সাহায্য করতে চাই। যখন ইচ্ছে, আমার সঙ্গে যোগাযোগ করুন,' নিজের টুইটার প্রোফাইলে লিখে রেখেছেন তিনি।
নিখোঁজ এক অল্পবয়সী নারীর সন্ধান করতে গিয়ে এই সিরিয়াল কিলারের খোঁজ পায় পুলিশ। পরে জানা যায়, ওই নারীও তার শিকার।
টোকিওর কাছে, জামা শহরে শিরাইশির ফ্ল্যাটে হাজির হয়ে ওই নারীর খণ্ড-বিখণ্ড অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ উদ্ধার করে পুলিশ।
খুনির আইনজীবীরা যা বলছেন
শিরাইশির আইনজীবীদের দাবি, যারা খুন হয়েছেন বা আত্মহত্যা করেছেন, তাদের সম্মতিতেই ওই ঘটনাগুলো ঘটায় খুনের শাস্তি কমিয়ে, ছয় মাস থেকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া উচিত।
অবশ্য নিজের আইনজীবীদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন শিরাইশি।
স্থানীয় সংবাদপত্র 'মাইনিচি শিমবুন'-এ তিনি বলেছেন, সম্মতি না নিয়েই খুন করেছেন।
'যারা খুন হয়েছেন, তাদের মাথার পেছনে কালশিটে দাগ ছিল। তার মানে, তাদের সম্মতি নেওয়া হয়নি। যেন বাধা দিতে না পারেন, এ জন্যই পেছন থেকে তাদের আঘাত করেছি,' বুধবার প্রকাশিত বক্তব্যে তিনি বলেন।
এই ঘটনার প্রভাব
সিরিয়াল কিলিংয়ের এই ঘটনা জাপানিদের হতবাক করে দিয়েছে। ২০১৭ সালে যখন ঘটনাটি প্রথম প্রকাশ পায়, অনলাইনে আত্মহত্যা নিয়ে আলোচনা এক নতুন বিতর্কের জন্ম দেয়। সে সময় এ সংক্রান্ত একটি নতুন বিধিমালা প্রণয়নের ইঙ্গিত দেয় দেশটির সরকার।
ঘটনাটি টুইটার কর্তৃপক্ষেরও টনক নাড়ে। 'আত্মহত্যা কিংবা সেলফ-হার্মে উৎসাহ দেওয়া যাবে না,' ব্যবহারকারীদের জন্য এমন নিয়মের প্রবর্তন করা হয়।
টুইটারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জ্যাক ডর্সি সে সময় এটিকে চূড়ান্ত রকমের মন খারাপের ঘটনা হিসেবে অভিহিত করেছিলেন।
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার দেশগুলোর অন্যতম হিসেবে কুখ্যাতি আছে জাপানের।
- সূত্র: বিবিসি