মে পর্যন্ত বৈদেশিক সহায়তার অর্থছাড় ৮০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে
চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের জন্য বৈদেশিক সহায়তার অর্থছাড় ৪৭ শতাংশ বেড়ে ৮০০ কোটি ডলারের ঘর ছাড়িয়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী এসব তথ্য জানা গেছে।
২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত সময়ে উন্নয়ন সহযোগীরা ছাড় করেছে ৮৪২ কোটি ডলার। সে তুলনায় আগের অর্থবছরের একই সময়ে অর্থছাড় হয়েছিল ৫৭২ কোটি ডলার।
সরকার আশা করছে অর্থবছরের বাকি সময়ে অর্থাৎ জুন মাস শেষে অর্থছাড় ৯০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, বৈদেশিক ঋণের বেশ কিছু মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ফলে এসব প্রকল্পে বৈদেশিক ঋণের ব্যবহার বেড়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের দেওয়া বাজেট সহায়তা ও করোনার টিকা কেনার অর্থছাড়। সব মিলে অর্থছাড়ে নতুন রেকর্ড হয়েছে।
তারা আরও জানান, তবে এ রেকর্ড এখানেই থেমে থাকবে না। কারণ চলতি অর্থবছরের শেষ মাসে অর্থাৎ জুনে বৈদেশিক অর্থছাড় আরো বাড়বে। চলতি অর্থবছরে বৈদেশিক সহায়তা থেকে ১০.৮ বিলিয়ন ছাড় করা বা ব্যবহারের লক্ষ্য রয়েছে সরকারের।
ইআরডির তথ্যমতে, এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-জুন সময়ে বৈদেশিক সহায়তার অর্থছাড় হয়েছিল ৭৯৫ কোটি ডলার। তার আগের ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছাড় হয়েছিল ৭৩৮ কোটি ডলার। এর আগের সব অর্থবছরে বৈদেশি অর্থছাড় ৭০০ কোটি ডলারের কম ছিল।
কর্মকর্তারা জানান, গত সপ্তাহে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সঙ্গে ২৫০ মিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তার ঋণ চুক্তি হয়েছে। এ ধরনের সহায়তা চুক্তি হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যে ছাড় হয়ে যায়। এছাড়া বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্পে বড় অংকের বৈদেশিক ঋণ ব্যয় করা হবে। এর মাধ্যমে লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি চলে যাবে বৈদেশিক সহায়তার অর্থছাড়।
এদিকে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) মে মাসের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অগ্রগতি প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে শেষে দিকে এসে উন্নয়ন প্রকল্পে বৈদেশিক ঋণ ব্যবহার বাড়ছে। শুধু এক মাসেই (মে মাসে) ব্যয় হয়েছে ৯,২৩০ কোটি টাকা। জুন মাসেও একই পরিমাণ বা এর চেয়ে বেশি বৈদেশিক ঋণের অর্থ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে খরচ হতে পারে বলে আশা করছে আইএমইডি।
আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-মে সময়ে বৈদেশিক সহায়তার অর্থ ব্যবহার হয়েছে ৫০ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৩৯ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা।
ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, চলতি অর্থবছরের মে পর্যন্ত বাজেট সহায়তা বাবদ ১১৪ কোটি ডলার এবং টিকা কেনা বাবদ অর্থ ছাড় হয়েছে ৯৫৬ মিলিয়ন ডলার।
বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), এআইআইবি, জাইকা, কোরিয়া এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট- এর কাছ থেকে এ অর্থ পাওয়া গেছে।
এবিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, কোভিড-কেন্দ্রিক বেশকিছু বাজেট সহায়তা ও টিকা কেনার জন্য বৈদেশিক ঋণ নিচ্ছে সরকার। যা অর্থছাড়ের সার্বিক আকার বৃদ্ধিতে অবদান রাখছে। তবে এ ধরনের তহবিল বাদ দিলে উন্নয়ন প্রকল্পে বৈদেশিক সহায়তার অর্থছাড় খুব বেশি বাড়েনি। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো প্রত্যাশিত গতিতে ঋণের অর্থ ব্যয় করতে না পারায় বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অনকূলে বৈদেশিক সহায়তার বড় একটা অংশ পাইপলাইনে আটকে আছে।
চলতি অর্থবছরের মে পর্যন্ত পাইপলাইনে থাকা বৈদেশিক সহায়তার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৭.৮৪ বিলিয়ন ডলার।
এদিকে চলতি অর্থবছরে প্রথম ১১ মাসে সবচেয়ে বেশি অর্থ ছাড় করেছে এডিবি। এ উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাছ থেকে মে মাস পর্যন্ত পাওয়া গেছে ২.০৭ বিলিয়ন ডলার। সরকার এ সংস্থার কাছ থেকে জুন পর্যন্ত ২৪৫ কোটি ডলার অর্থছাড় আশা করছে।
চলতি অর্থবছরে জাপান থেকে পাওয়া ঋণের ২৩৭ কোটি ডলারের ব্যবহারের আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে মে মাস পর্যন্ত দেশটি ছাড় করেছে ১৭৭ কোটি ডলার।
বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে আদায়ের লক্ষ্য ১৬৩ কোটি ডলার, আর মে পর্যন্ত ছাড় হয়েছে ১৫৩ কোটি ডলার।
এছাড়া চলতি অর্থবছরের জুলাই- মে সময়ে রাশিয়ার ঋণের অর্থছাড় হয়েছে ১১৫ কোটি ডলার।
ইআরডি প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্থবছরের ১১ মাসে উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণ প্রতিশ্রুতিও কিছুটা বেড়েছে। চলতি অর্থবছরে এপ্রিল পর্যন্ত উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ৫৯০ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৫৩৬ কোটি ডলার।
বিশ্বব্যাংক, এডিবি এবং চীন প্রত্যেকে ১০০ কোটি ডলারের বেশি ঋণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
মে পর্যন্ত সরকারের ঋণ পরিশোধও বেড়েছে। অর্থবছরের ১১ মাসে সুদ ও আসলসহ পরিশোধ করা হয়েছে ১৮৮ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ১৭০ কোটি ডলার।