তেল না পেয়ে আবারও পেছালো টিসিবির পণ্য বিক্রি

সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যে ২.৫ কোটি লিটার সয়াবিন তেল চেয়েও দেশের ভোজ্যতেলের মিলগুলো তাতে রাজি না হওয়ায় দেশের এক কোটি দরিদ্র পরিবারের কাছে কম দামে পণ্য বিক্রি পেছাতে হচ্ছে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি)।
গত ৯ জুন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর পর এখন মিলগুলো তেল দিতে রাজি হলেও পণ্য পেতে দেরি হওয়ায় পূর্বঘোষিত সময় অনুযায়ী আগামী ১৬ জুন থেকে পণ্য বিক্রি শুরু করতে পারছে না টিসিবি।
কবে থেকে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু হবে, তা এখনও চূড়ান্ত না হলেও আগামী ঈদ উল আযহার আগেই ফ্যামিলি কার্ডধারী এক কোটি দরিদ্র পরিবারের মাঝে পণ্য বিতরণ সম্পন্ন হবে বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান।
সরকারের ঘোষিত সময়সীমা অনুযায়ী, আগামী ১৬ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত টিসিবির পণ্য বিক্রি করার কথা ছিল।
এর আগে গত ১৬ মে থেকে রাজধানীতে পণ্য বিক্রির ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনায় শেষ মুহূর্তে তা স্থগিত করে সংস্থাটি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও টিসিবির কর্মকর্তারা জানান, ঈদ উল আযহার আগে ফ্যামিলি কার্ডধারী প্রতি পরিবারকে ২ কেজি মসুর ডাল, ২ লিটার সয়াবিন তেল ও ১ কেজি চিনি ভর্তুকি মূল্যে বিতরণ করবে সরকার।
এজন্য ২.৫০ কোটি লিটার সয়াবিন তেল কিনতে গত ১৯ মে নির্ধারিত যৌক্তিক দরে, প্রতি লিটার ১৯২ টাকায় তেল সরবরাহে দেশের মিলগুলোকে অনুরোধ করে টিসিবি। ওই সময় প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের খুচরা মূল্য ছিল ১৯৮ টাকা, যা মিলগেটে ১৯২ টাকায় বিক্রি করতো রিফাইনারিগুলো।
কিন্তু টিসিবির ওই প্রস্তাবে তখন রাজি হয়নি মিলাররা। মিলগুলোর যুক্তি ছিল, তারা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে তেলের দাম বাড়ানোর আবেদন করেছে। তাই নতুন দাম নির্ধারণের আগে তখনকার বাজারদরে তারা টিসিবিকে তেল সরবরাহ করবে না।
পরে তখনকার সর্বোচ্চ খুচরা বাজারমূল্যে (প্রতি লিটার ১৯৮ টাকা) তেল সরবরাহ করতে মিলগুলোকে অনুরোধ করে টিসিবি। গত বুধবার পর্যন্ত তাতেও সম্মতি দেয়নি মিলগুলো।
গত বৃহস্পতিবার প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম ৭ টাকা বাড়িয়ে ২০৫ টাকা নির্ধারণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তখন মিলগেট দামে (প্রতি লিটার ১৯৫ টাকা) তেল সরবরাহ করতে রাজি হয় মিলগুলো। কিন্তু এখনও তা টিসিবির হাতে এসে পৌঁছায়নি।
টিসিবির তেলের দরকার ২.৫০ কোটি লিটার। বর্তমানে টিসিবির কাছে ২১ লাখ লিটার সয়াবিন তেলের মজুদ আছে, যা দিয়ে মাত্র ১০% চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। এছাড়া, সয়াবিন তেল পাওয়ার অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে রাইস ব্রান অয়েল কেনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল টিসিবিকে। দেশের রাইস ব্রান অয়েল মিলগুলো থেকে ৫০০০ টন তেল সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে কেনার কার্যক্রম চালাচ্ছে সংস্থাটি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান বলেন, 'আমরা প্রথম যখন তেল কেনার জন্য কোম্পানিগুলোকে দাম ঠিক করে চিঠি দেই, তখন তারা তেল সরবরাহ করেনি। ব্যবসায়ীরা জানায়, তারা তেলের দাম বৃদ্ধির জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছে। তাই পুরনো দামে তেল সরবরাহ করতে পারবে না।'
তিনি বলেন, 'পরবর্তীতে সরকার নতুন দাম নির্ধারণ করে দেয়ার পর এখন তারা সরবরাহ করতে রাজি হয়েছে। মিলগেটে যে দাম রয়েছে, সেই দামে আমরা তেল নিচ্ছি এবং তারা তেলগুলো সরবরাহের জন্য রেডি করছে। তবে তেল পেতে দেরি হওয়ার কারণে ১৬ তারিখ থেকে বিক্রয় কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না।'
'কবে থেকে পণ্য বিক্রি শুরু হবে, তা এখনও নির্ধারণ হয়নি, তবে আমাদের লক্ষ্য যেহেতু ঈদের আগে ১ কোটি পরিবারকে ভর্তুকি মূল্যের এসব পণ্য দেওয়া, সেটা আমরা দিতে পারবো', আশাবাদ প্রকাশ করেন তিনি।
টিসিবির হাতে প্রয়োজনীয় পরিমাণে মসুর ডাল ও চিনির মজুদ রয়েছে জানিয়ে সংস্থাটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বলেছে, তাদের হাতে ২০,০০০ টন মসুর ডাল ও ১০,০০০ টন চিনি আছে। টিসিবি বলেছে, বর্তমান মজুদ ও অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় থাকা চিনি ও মসুর ডাল দ্বারা প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ সম্ভব।
গত ৮ জুন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে তেল ক্রয়ে জটিলতার কারণে কর্মসূচি বাস্তবায়ন সফলভাবে সম্পন্ন না হওয়ার আশংকা করেছে টিসিবি।
এর আগে গত ১৬ মে থেকে টিসিবির বিক্রি কার্যক্রম স্থগিত করার বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সাংবাদিকদের একটি ব্যাখ্যা দেন। সেখানে ঢাকা ও বরিশালে ফ্যামিলি কার্ড তৈরি করে তবেই পণ্য বিক্রি শুরু করা হবে বলে জানানো হয়।
আগে ঢাকায় ট্রাক সেলের মাধ্যমে যে কেউ তেল বিক্রি করতো এবং যে কেউই এসব পণ্য ক্রয় করতে পারতো। তবে এবারের এই বিশেষ আয়োজনে শুধুমাত্র কার্ডধারীরাই পণ্য কিনতে পারবে।
সে সময় টিসিবি ১১০ টাকায় সয়াবিন তেল, ৫৫ টাকায় চিনি ও ৬৫ টাকায় মসুর ডাল বিক্রির ঘোষণা দিয়েছিল।