কর্মসংস্থান তৈরিতে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের ওপর যথেষ্ট মনোযোগ নেই

কর্মসংস্থান তৈরির জন্য বাজেটে যে উদ্যোগগুলো নেওয়া হয়েছে, তার কিছু কিছু অবশ্যই ইতিবাচক। বাস্তবে যদি এগুলোকে বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে ইতিবাচক ফল আসবে বলে আশা করি। কর্মসংস্থান তৈরির মূল সমস্যা হচ্ছে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বেশ কয়েক বছর ধরে যে একধরণের স্থবির অবস্থা চলছে. এটা এবারের বাজেটেও বলা হয়েছে।
ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ জিডিপি অনুপাতে ২২-২৩% এর মধ্যে আবদ্ধ। যদি বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ গতিশীল করা যায় এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোকে যত দ্রুত ম্যাটারিয়ালাইজ করা যায় তাতে দেশের কর্মসংস্থান তৈরি সফল হবে।
যে 'ডিরেকটরেট অব এমপ্লয়মেন্ট' তৈরির কথা বলা হচ্ছে , এগুলো হয়ত সুবিধা সৃষ্টি করতে পারে। একইসাথে বেসরকারি খাতে যারা কর্মসংস্থান তৈরি করবে তাদেরকে প্রণোদিত করার জন্য এবারের বাজেট আমার কাছে বড় ধরনের ব্যতিক্রম মনে হয়নি। কোভিড পরবর্তী এবং ইউক্রেনে যুদ্ধাবস্থার কারণে আমরা যে বৈশ্বিক সংকট দেখতে পাচ্ছি, সে সময়ে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কীভাবে বাড়তে পারে সেটা কিন্তু এবারের বাজেটে পরিষ্কার না।
কর্মসংস্থান তৈরির জন্য বেসরকারি খাতের ওপর অনেক বেশি মনোনিবেশ করতে হবে। একইসময়ে ক্ষুদ্র, ছোট মাঝারি শিল্পে মনোযোগ দিতে হবে। আমরা দেখেছি কোভিডের সময় এ খাতও সংকটে পড়েছে। কোভিড পরবর্তী সময়ে দাম বৃদ্ধি, কাঁচামাল এবং সরবরাহের বিচ্ছন্নতার কারণে তারা আবার ধাক্কা খেয়েছে।
এ খাতগুলোতে প্রচুর লোকের কর্মসংস্থান আছে। এদের সমস্যার কথা বলা হয়েছে কিন্তু পুনরুদ্ধারের জন্য তেমন কিছু বাজেটে দেখছি না। আমি চাইব না যে 'ডিরেক্টরেট অব এমপ্লয়মেন্ট' সরকারের অন্য অনেক প্রতিষ্ঠানে মতো অকার্যকর হোক। এ খাতে অনেক বেশি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। এর 'টার্মস অব রেফারেন্স' বাস্তবমুখী হওয়া উচিত। বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা নেওয়া যেতে পারে তাদের এরকম প্রতিষ্ঠান আছে কিনা।
প্রতি বাজেটেই দক্ষতা নিয়ে বলা হয়। এটা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে যদি ১০টিও ঠিক মতো কাজ করে, যে পরিমাণ দক্ষ মানবশক্তির প্রয়োজন হবে সে পরিমাণ সরবরাহের মতো অবস্থা এ মুহূর্তে আমাদের নেই। এমনকি পদ্মা সেতু হলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে যদি বিনিয়োগ বাড়তে থাকে, তাহলে সেখানেও দক্ষ মানবশক্তি লাগবে। দক্ষতা তৈরির বিষয়টিতে যে পরিমাণ গুরুত্ব দেওয়া উচিত সেভাবে দেখি না।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব এবং রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনতে যে দক্ষতা দরকার হবে তা নিয়ে কোনো কর্ম পরিকল্পনা দেখি না। এ বিষয়গুলো যতক্ষণ না হচ্ছে ততোক্ষণ এটা কিছুটা প্রোগ্রামভিত্তিক থাকবে, কিন্তু আমাদের অর্থনীতিতে প্রত্যাশিত ফল পাব না।
বিদেশে কর্মসংস্থান একেক বছর একেক রকম হয়। এখন বৈশ্বিক মন্দা চলছে। এ কারণে বর্তমান অর্থবছরে যে পরিমাণ মানুষ বিদেশে গেছে, এবার তা হবে কি-না সেটা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। তাই আমি বলবো বিদেশে চাকরির বর্তমান ধারা বজায় রাখা প্রথম লক্ষ্য হওয়া উচিত এবং পারলে আরও বাড়ানো যায় কিনা তা দেখতে হবে।
রেমিট্যান্সের উপরে ২.৫% প্রণোদনা অব্যাহত রাখায় আমি খারাপ কিছু দেখি না। প্রণোদনার চেয়েও বড় চ্যালেঞ্জ ছিল ডলারের বিনিময় মূল্যের পার্থক্য। যেহেতু বাজেটের আগে সিদ্ধান্ত নেওা হয়েছে যা এখন বাস্তবায়ন করতে হবে, ডলারের আনুষ্ঠানিক ও বাইরের বিনিময় মূল্যের পার্থক্য কমানো যায় কিনা দেখতে হবে। যত কমানো যাবে রেমিটাররা ততোই প্রণোদনা পাবে রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য। প্রবাসী কর্মীদের দেশের ভেতরে এবং বাইরে যে ধরনের সুবিধা দরকার তা তারা বহু বছর ধরেই পায় না। তাদের অবদান অনুযায়ী সম্মান, সুযোগ-সুবিধা দেয়ার কোনো কথা বাজেটে নেই। বিষয়টি এবারও উপেক্ষিত রয়ে গেছে।