আন্তর্জাতিক বাজারে কমলেও দেশীয় বাজারে ঊর্ধ্বমুখী চিনির দাম
ভোগ্যপণ্যের বাজারে আরও এক দফা বেড়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য চিনির দাম।
ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে গত একমাসে চিনির দাম বেড়েছে মণ প্রতি প্রায় ১৩০ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং দর কমলেও দেশীয় বাজারে পণ্যটির দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন আমদানিকারকরা।
দেশের ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে বর্তমানে প্রতিমণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) চিনি বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬৩০ টাকা দরে, যা একমাস আগেও বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৫০০ টাকায়। সেই হিসেবে, একমাসের ব্যবধানে পাইকারিতে চিনির দাম বেড়েছে প্রতিমণে ১৩০ টাকা। বাজারে থাকা বিভিন্ন কোম্পানির চিনির মধ্যে বর্তমানে এস আলম ও মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ চিনি বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬৩০ টাকায় এবং সিটি গ্রুপের ইগলু ব্রান্ডের চিনি বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬২৫ টাকায়।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি চিনি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত ছয়মাস ধরে খাতুনগঞ্জসহ দেশীয় বাজারে চিনির বাজার ঊর্ধ্বমুখী। এই সময়ের মধ্যে চিনির দাম মণে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সর্বশেষ গত একমাসে চিনির দাম বেড়েছে ১৩০ টাকা। আর্ন্তজাতিক বাজারে চিনিসহ নিত্য ভোগ্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী বুকিংয়ের কারণে মূলত ছয়মাস আগে থেকেই দেশীয় বাজারে চিনির দাম বাড়ছে। কিন্তু আর্ন্তজাতিক বাজারে প্রায় একমাস ধরে চিনির দাম কমতে শুরু করলেও, কমেনি দেশীয় বাজারে।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি চিনি ব্যবসায়ী মেসার্স ইসমাইল ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, "দেশীয় বাজারে চিনির কোন ঘাটতি নেই। চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত চিনি মজুদ রয়েছে। এরপরও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো সিন্ডিকেট করে চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম আগের চেয়ে মণপ্রতি ২০০ টাকার বেশি কমেছে।"
পাইকারি চিনি ব্যবসায়ী মেসার্স হাসান ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মাহমুদুল হাসান বলেন, "গত দুই সপ্তাহে আর্ন্তজাতিক বাজারে প্রতিমণ চিনির দাম দুই ডলার পর্যন্ত কমেছে। দুই সপ্তাহ আগে আর্ন্তজাতিক বাজারে প্রতিমণ চিনি বিক্রি হয়েছে ২০ ডলারে। মণপ্রতি ৫৬০ টাকা আমদানি ও রিফাইন্ড খরচ যোগ করে প্রতিমণ চিনির দাম ছিল ২ হাজার ২৫৯ টাকা। বর্তমানে আর্ন্তজাতিক বাজারে প্রতিমণ চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৮ ডলারে। মণপ্রতি ৫৬০ টাকা খরচ যোগ করে বর্তমানে প্রতিমণ চিনির ক্রয়মূল্য পড়ছে ২ হাজার ৯০ টাকা। সেই হিসেবে, দুই সপ্তাহে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিমণ চিনির দাম ১৭০ টাকা পর্যন্ত কমেছে।"
পাইকারি চিনি ব্যবসায়ীরা জানান, স্বাভাবিকভাবে শীত মৌসুমে চিনির চাহিদা প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে। কিন্তু বেসরকারি কোম্পানির বিপরীতে রাষ্ট্রায়াত্ব চিনির সরবরাহ কমে যাওয়ায় নিজেদের ইচ্ছেমতো বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে বেসরকারি কোম্পানিগুলো। এমনকি আর্ন্তজাতিক বাজারে চিনির দাম তেমন না বাড়লেও স্থানীয় বাজারে কোম্পানিগুলো দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। বর্তমানে প্রতিমণ চিনি আমদানিতে খরচ পড়ছে ২ হাজার ৯০ টাকা। কিন্তু প্রতিমণ চিনিতে ৫৪০ টাকা মুনাফা করে আমদানিকারকরা বিক্রি করছে ২ হাজার ৬৩০ টাকায়। এটি খুবই অস্বাভাবিক বলে অভিযোগ করেন ব্যবসায়ীরা।
খাতুনগঞ্জের চিনি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স আর এম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আলমগীর পারভেজ বলেন, "আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে, বিষয়টা সত্যি। কিন্তু কম দামে বুকিং হওয়া চিনি এখনো বাজারে পৌঁছেনি। বর্তমানে বাজারে যেসব চিনি রয়েছে তা আগের বাড়তি দামে কেনা। ফলে আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।"
কম দামে বুকিং দেওয়া চিনি বাজারে আসলে ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে দেশীয় বাজারেও চিনির দাম কমতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন এই ব্যবসায়ী।
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) এবং টিসিবি'র তথ্যমতে, প্রতিবছর দেশে চিনির মোট চাহিদা ১৫ থেকে ১৭ লাখ টন। মোট চাহিদার এক থেকে দেড় লাখ টন চিনির যোগান আসে রাষ্ট্রায়াত্ব ১৫টি কারখানা থেকে। তাছাড়া বছরের বিভিন্ন সময় সরকার টিসিবি'র মাধ্যমেও কিছু চিনি আমদানি করে থাকে। অর্থাৎ, চাহিদার প্রায় ৭ থেকে ৮ শতাংশ চিনির যোগান আসে সরকারিভাবে। বাকি চিনির যোগান আসে বেসরকারি কারখানা থেকে।