জুন প্রান্তিকে কোটি টাকার ব্যাংক হিসাব বেড়েছে ২,৮৯৪টি
চলতি বছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে, ১ কোটি টাকা বা তার বেশি থাকা ব্যাংক ব্যাংক হিসাব বেড়েছে ২,৮৯৪টি। এটি গত শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে শেষ পূর্ণ প্রান্তিক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুনের শেষে ১ কোটি টাকার বেশি থাকা হিসাবের সংখ্যা ১.১৯ লাখ দাঁড়িয়েছে, যা মার্চ প্রান্তিকের শেষে ১.১৬ লাখ ছিল।
জুন মাসের হিসাবে, বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে মোট আমানতের পরিমাণ ১৮.৩৯ লাখ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৭.৭৩ লাখ কোটি টাকা (৪২ শতাংশ) ১ কোটি টাকার বেশি আমানত বিশিষ্ট হিসাবগুলোতে রাখা হয়েছে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, সরকারের মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোর মধ্যে প্রায় ৪ হাজার ২৮৯টি হিসাব রয়েছে, যেখানে ১ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা ব্যক্তিগত হিসাবধারকের সংখ্যা প্রায় ৩৪ হাজার ৪৮১টি। এছাড়াও, প্রায় ৪৪ হাজার হিসাব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন যে, স্থির আয়ের ব্যক্তিদের হিসাবগুলো কোটি টাকায় পৌঁছানোর সম্ভাবনা কম। এছাড়া, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ছোট ও বড় ব্যবসাগুলো খুব বেশি ভালো করতে পারছে না, যা তাদের নতুন করে বড় বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করেনি। এর ফলে, এই মূল্যস্ফীতির সময়ে কোটি টাকার অ্যাকাউন্ট বাড়ার সুযোগ কম ছিল।
এই অর্থনীতিবিদ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে থাকা অজ্ঞাত ব্যাংক আমানতগুলো তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ব্যাংক আমানতের বৃদ্ধি ইতিবাচক হলেও, মতিউরের দুর্নীতি মামলার মতো সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো উদ্বেগের সৃষ্টি করছে। এছাড়া, দুর্নীতির সঙ্গে সম্পর্কিত অজ্ঞাত আমানতের রিপোর্টও রয়েছে। কোটি টাকার বেশি থাকার হিসাবের সংখ্যা বাড়তে থাকায় যাচাই করা প্রয়োজন, এসব হিসাব ভুয়া কি না।
ফাহমিদা খাতুন উল্লেখ করেন , ১ কোটি টাকা বা তার বেশি থাকা হিসাবের সংখ্যা বৃদ্ধির একটি কারণ হলো সমাজে বেড়ে চলা বৈষম্য।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুন প্রান্তিকে ব্যাংকিং খাতে আমানত বেড়েছে ৭৬ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা, যার মধ্যে কোটি টাকার হিসাবগুলোতে আমানত প্রায় ৪৩ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।
একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানিয়েছেন, ১ কোটি টাকা বা তার বেশি আমানতের হিসাবের সংখ্যা গত ৪ থেকে ৫ বছরে স্থিরভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে; প্রধানত প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসাগুলোর মধ্যে। তিনি বলেন, যদিও অনেক উদ্যোক্তা মুদ্রাস্ফীতির কারণে কষ্টে আছেন, বড় ব্যবসায়ীরা লাভের দিকে নজর দিচ্ছেন যেটি এসব হিসাবের আমানতের বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে।
তবে, সামগ্রিক পরিস্থিতি উদ্বেগজনক রয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মোট ১৫.৮৫ কোটি ব্যাংক হিসাবের মধ্যে ৭২ শতাংশ, অর্থাৎ ১১.৪৩ কোটি হিসাবের আমানত ৫ হাজার টাকার কম। এই হিসাবগুলোতে গড়ে ৫৯০ টাকা আমানত রয়েছে। অন্য কথায়, দেশের একটি বড় অংশের মানুষের ব্যাংক আমানত এর সর্বনিম্ন স্তরে রয়েছে।
এই পরিসংখ্যান দেশের মধ্যে মারাত্মক অর্থনৈতিক বৈষম্যকে ফুটিয়ে তোলে এবং নির্দেশ করে, জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যাংকিং ব্যবস্থায় খুব কম সঞ্চয় জমা রাখছে।