গত সাড়ে ৭ বছরে ছাড় করা ইসলামী ব্যাংকের সব ঋণ নিরীক্ষার সিদ্ধান্ত
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি'র নতুন পরিচালনা পর্ষদের প্রথম বৈঠকে এস আলমের সময়কালে ছাড় করা সকল ধরনের ঋণ নতুন করে নিরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত থাকা একজন কর্মকর্তা বলেন, 'গত সাত বছরে ঋণ কারা কোন প্রক্রিয়ায় নিয়েছেন, এসব ঋণের যথাযথ জামানত আছে কি না তা খুঁজে বের করে সব ধরনের ঋণ নিরীক্ষা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।'
গত সপ্তাহে এস আলমের 'নিয়ন্ত্রণাধীন' থাকা ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন করে পাঁচজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বৈঠকে উপস্থিত থাকা একজন স্বতন্ত্র পরিচালক বলেন, ইসলামী ব্যাংকের ঋণ নিরীক্ষার পাশাপাশি ব্যাংকটির ট্রেজারি বিভাগ কোথায় টাকা ও ডলার বিনিয়োগ করেছে তাও খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
'এছাড়া গত সাড়ে সাত বছরে যে জনবল নিয়োগ হয়েছে, তা যথাযথ প্রক্রিয়ায় হয়েছে কি না সেটাও খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য পৃথক ৩টি বহিঃনীরিক্ষক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে।'
নতুন পর্ষদের চেয়ারম্যান, সোনালী ও রূপালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদের নেতৃত্বে মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের প্রথম সভা হয়।
২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি ইসলামী ব্যাংকের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আগেও এস আলম গ্রুপ ব্যাংকটির চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়।
ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর এটি থেকে গ্রুপটির ঋণ নেওয়ার হার আকাশচুম্বী হয়ে ওঠে।
ইসলামী ব্যাংকের অর্ধেক ঋণ গেছে এস আলমের কাছে
কেন্দ্রীয় ব্যাংকসূত্র ও ইসলামী ব্যাংকের নথি অনুযায়ী, ১৮ আগস্ট পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকের মোট ঋণ পোর্টফোলিও দেড় লাখ কোটি টাকা। আর মোট আমানতের পরিমাণ এক লাখ ৫৩ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা।
এসব ঋণের মধ্যে এস আলম গ্রুপ ৭৪ হাজার ৯৭২ কোটি টাকার সুবিধা পেয়েছে বলে নথিপত্র পরীক্ষা করে জানা গেছে। এ পরিমাণ অর্থ ব্যাংকটির মোট ঋণের অর্ধেক।
এস আলম গ্রুপের ৭টি কোম্পানির নামে সরাসরি ১৪ হাজার ৪২৭ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে ব্যাংকটি থেকে।
২০১৬ সালের দিকে শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি ব্যাংকগুলোর একটি ও সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স উপার্জনকারী ছিল ইসলামী ব্যাংক। এস আলম গ্রুপ সে বছর থেকে নতুন নিবন্ধিত বিভিন্ন কাগজসর্বস্ব কোম্পানির মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার অধিগ্রহণ শুরু করে। পরবর্তী বছরের মধ্যে অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এস আলম গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত ৭টি কোম্পানি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার কিনেছিল। এগুলোর সবগুলোই ২০১৬ সালে নিবন্ধিত হয়েছিল।
কোম্পানিগুলো হলো এক্সেল ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং লিমিটেড, আরমাডা স্পিনিং মিলস লিমিটেড, এবিসি ভেঞ্চারস লিমিটেড, গ্র্যান্ড বিজনেস লিমিটেড, প্লাটিনাম এন্ডেভার্স, প্যারাডাইস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড ও ব্লু ইন্টারন্যাশনাল।