২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি ব্যয় কমেছে ৯%
দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বরে আমদানি প্রায় স্বাভাবিক রয়েছে। পরিমাণ হিসেবে চলতি বছরে তিন মাসে ০.১২ শতাংশ পণ্য কম আমদানি হলেও আমদানি ব্যয় কমে গেছে ৯ শতাংশ।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট-সেপ্টেম্বরে আমদানি হয়েছে ২,১৬,৩০,৩৯৩.৯৩ মেট্রিক টন পণ্য। ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে আমদানি হয়েছিল ২,১৬,৫৭,৪৪৪.১২ মেট্রিক টন। চলতি বছরে আমদানি কম হয়েছে ২৭,০৫০.১৯ মেট্রিক টন বা ০.১২ শতাংশ পণ্য ।
২০২৩ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে আমদানি পণ্যের মূল্য ১,০৯,৪২৯.৯৪ কোটি টাকা। ২০২২ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে আমদানি পণ্যের মূল্য ছিল ১,২০,০০৭.৭১ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে আমদানি মূল্য কমেছে ১০,৫৭৭.৭৭ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ৮.৮১ শতাংশ কম।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ বলেন, "মূলধনী যন্ত্রপাতি, বিলাসবহুল পণ্য, গাড়ি, ইলেকট্রনিক্স পণ্য আমদানি কমে গেলে আমদানি মূল্যের ওপর প্রভাব পড়ে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে এসব পণ্য আমদানি কমে যাওয়ায় আমাদনি মূল্য কমে গেছে। এছাড়া, আন্তর্জাতিক বাজারে গম, চিনি, তেলসহ বিভিন্ন ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম কমে আসার কারণেও আমদানি ব্যয় কমে আসছে।"
রাজস্ব আদায় বেড়েছে ৭.৮%
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ২০২২ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনমাসে কাস্টমসের রাজস্ব আয় হয়েছে ১৫,৩৮৪.৮৭ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের একই সময়ে আদায় হয়েছে ১৬,৪৭৪.৬৬ কোটি টাকা। গত বছরের তিন মাসের তুলনায় চলতি বছরে রাজস্ব আয় বেড়েছে ১,০৮৯.৭৯ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭.৮ শতাংশ।
কিছু কিছু পণ্যের আমদানি মূল্য বেড়ে যাওয়ায় পণ্য আমদানির পরিমাণ কম থাকা সত্ত্বেও রাজস্ব আহরণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া, শুল্ক ফাঁকির ঘটনায় জরিমানার অর্থ থেকেও রাজস্ব আয় হয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের মুখপাত্র এবং ডেপুটি কমিশনার মো. বদরুজ্জামান মুনশি টিবিএসকে বলেন, "আমদানি রপ্তানিতে আন্ডার, ওভার ইনভয়েসিং করা হচ্ছে কিনা সেটি আমরা নজরদারীতে রেখেছি। চোরাচালান বন্ধ, জালিয়াতি, শুল্ক ফাঁকি রোধে আমরা গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়েছি। এসব কারণে আমদানি ব্যয় কমলেও কাস্টমসের রাজস্ব আয় বেড়েছে।"
২০ ধরনের পণ্যের আমদানি কমেছে
২০২২ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় ২০২৩ সালের একই সময়ে ২০ ধরনের পণ্য আমদানি কমেছে ১২ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৯৭ শতাংশ পর্যন্ত।
কর্মকর্তারা জানান, ফার্নেস অয়েল, হাই-স্পিড ডিজেল অয়েল, হট-রোল্ড স্টিল, পলিভিনাইল ক্লোরাইড, বৈদ্যুতিক কন্ডাক্টর, মোটর গাড়ি ও অন্যান্য যানবাহন, সিরামিক ইলেকট্রিক ইনসুলেটর, ডবল কেবিন পিকআপ ও বিভিন্ন যন্ত্রাংশসহ ২০ ধরনের পণ্যের আমদানি কমায় ২০২৪ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের রাজস্ব কমেছে ১,০৭৭ কোটি টাকা।
এসব পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডাবল কেবিন পিকআপ ৯৭ শতাংশ, মোটর গাড়ি ও অন্যান্য যানবাহন ৯১ শতাংশ টিউব, পাইপ, হলো প্রোফাইলস আমদানি কমেছে ৮৪ শতাংশ।
২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালের তিনমাসে এই ২০ ধরনের পণ্য ৭,৯৩,৪৯৩ মেট্রিক টন কম আমদানি হয়েছে। এর ফলে গত বছরের তুলনায় এসব পণ্যে আমদানি ব্যয় কমেছে ৪,২৪৭ কোটি টাকা।
আমদানি বেড়েছে পাথর, দুধ পাউডার, পোট্রোলিয়াম অয়েলের
সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায় হয় এমন পণ্যের মধ্যে চূর্ণ পাথর, দুধ, পলিপ্রোপিলিন, তাজা বা শুকনো কমলা, পেট্রোলিয়াম তেল এবং পাম তেল– এই ৬ ধরনের পণ্যের আমদানি বেড়েছে ২ থেকে সর্বোচ্চ ২৬৪ শতাংশ পর্যন্ত। এই ৬টি পণ্য থেকে গত বছরের ৩ মাসের তুলনায় রাজস্ব আদায় বেশি হয়েছে ৮০২ কোটি টাকা।
কমেছে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ আসার সংখ্যা ও কন্টেইনার হ্যান্ডলিং
দেশের আমদানি রপ্তানি রপ্তানির ৯২ শতাংশ সম্পন্ন হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, বন্দরে ৪৫ শতাংশ কন্টেইনার, ৪৫ শতাংশ খোলা পণ্যবাহী এবং বাকি ১০ শতাংশ লিকুইড কার্গোবাহী বাণিজ্যিক জাহাজ আসে।
গত তিন মাস ধরে দেশের প্রধান এই সমুদ্র বন্দর দিয়ে কমছে বাণিজ্যিক জাহাজ আসার সংখ্যা। ২০২৩ সালের জুলাইতে ৩৬৯টি, আগস্টে ৩৫০টি এবং সেপ্টেম্বরে ৩৩৮টি জাহাজ আাসে।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুলাই মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি রপ্তানি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ২,৭৭,১৬১ টিইইউ। আগস্টে ২,৫৯,১৪৩ টিইইউ এবং সেপ্টেম্বরে ২,৫৩,৪৯০ টিইইউ আমদানি হয়। অর্থাৎ, জুলাই থেকে সেপেম্বর পর্যন্ত সময়ে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কমেছে ২৩,৬৭১ টি।