কেএসআরএম’র বহরে নতুন দুটি আলট্রাম্যাক্স বাল্ক ক্যারিয়ার, যোগ হবে আরো তিনটি
বাংলাদেশি পতাকাবাহী সমুদ্রগামী জাহাজের বৃহৎ উদ্যোক্তা কেএসআরএম গ্রুপ তাদের বহরে দুটি আলট্রাম্যাক্স বাল্ক ক্যারিয়ার যুক্ত করেছে। এর মধ্যে এমভি ফাতেমা জাহান-১ অক্টোবরে এবং এমভি জাঈদ জাহান গত আগষ্টে কেএসআরএম এর বহরে যুক্ত হয়।
কেএসআরএম জানিয়েছে, ২০১৬ সালের তৈরী জাপানি আলট্রাম্যাক্স জাহাজ দুটির প্রতিটির ধারণক্ষমতা ৬৬৬০০ ডিডব্লিওটি (ডেডওয়েটটন)। বর্তমানে কেএসআরএম এর বহরে জাহাজের সংখ্যা ২৩ টি।
কেএসআরএম জাহাজ পরিচালনায় বাংলাদেশি নাবিকদের অগ্রাধিকার দেয়। তাদের সব জাহাজেই কর্মরত আছে দেশীয় নাবিক। নতুন জাহাজ দুটি যুক্ত হওয়ায় ৪৮ জন নাবিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এরা সবাই বাংলাদেশি।
কেএসএরএম গ্রুপের প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিং এর ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর করিম উদ্দিন টিবিএসকে বলেন, কেএসআরএম গ্রুপের বহরে যুক্ত হওয়া নতুন দুটি আল্ট্রাম্যাক্স বাল্ক ক্যারিয়ার ইতোমধ্যে সমুদ্রযাত্রা শুরু করেছে। সবশেষ চলতি অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে যুক্ত হয়েছে ফামেতা জাহান-১।
আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে আরো তিনটি সমুদ্রগামী জাহাজ কেএসএরএম এর বহরে যুক্ত হবে। নতুন জাহাজগুলোতে কি পরিমাণ বিনিয়োগ হয়েছে তা প্রকাশ করেনি প্রতিষ্ঠানটি।
কেএসআরএম গ্রুপ চলতি বছরে তাদের বহরে থাকা দুটি সমুদ্রগামী জাহাজের নিবন্ধন বাতিল করেছে। পুরোনো জাহাজ বাদ দিয়ে নতুন জাহাজ সংযোজনের অংশ হিসেবে আবদুল্লাহ এবং ফাতেমা জাহান নামের জাহাজ দুটির নিবন্ধন প্রত্যাহার করে নেয় কেএসআরএম।
জাহাজ দুটি ১৯৯৫ সালের তৈরি অর্থাৎ ২৮ বছরের পুরোনো। আরো একটি পুরোনো জাহাজের নিবন্ধন বাতিলের পরিকল্পনা আছে কেএসআরএম'র।
কেএসআরএম গ্রুপের তথ্যমতে, ২০০৩ সালে প্রথম এফজাহান (ফাতেমা জাহান) নামে একটি জাহাজ কেনে তারা। এরপর বহরে একে একে ২৩টি জাহাজ যুক্ত হয়। জাহাজ পরিচালিনার পাশাপাশি কেএসআরএম দেশের বৃহৎ রড উৎপাদনাকারী প্রতিষ্ঠান। শিপব্রেকিং ইয়ার্ডও রয়েছে এই শিল্প গ্রুপটির।
কেএসআরএম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম টিবিএসকে বলেন, রড তৈরির কাঁচামাল হিসেবে আবদুল্লাহ এবং ফাতেমা জাহান জাহাজ দুটি নিজেদের ইয়ার্ডে কেটে ফেলা হবে। ইতোমধ্যে পুরোনো জাহাজগুলো ইয়ার্ডে আনা হয়েছে।
বাংলাদেশি পাতাবাহী জাহাজের নিবন্ধন দেয় নৌ বাণিজ্য দপ্তর (এমএমও)। সেখানের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন সাব্বির মাহমুদ টিবিএসকে বলেন, সম্প্রতি দুটি নতুন জাহাজের নিবন্ধন নেয় কেএসআরএম গ্রুপ। একই সাথে এই শিল্প গ্রুপটির আবেদনের প্রেক্ষিতে দুটি জাহাজের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। বর্তমানে সমুদ্রগামী বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজের সংখ্যা ৯৬ টি।
এমএমও এর তথ্যমতে, বর্তমানে বাংলাদেশি পতাকাবাহী সমুদ্রগামী জাহাজের তালিকায় কেএসএরএম এর ২৩ টি, মেঘনা গ্রুপের ২২ টি, আকিজ গ্রুপের ১০ টি, কর্ণফুলী গ্রুপের ৮ টি, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের ৭টি, বসুন্ধরা গ্রুপের ৬ টি, ভ্যানগার্টের ৬ টি এবং এছাড়া অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের জাহাজ আছে।
শিপিং সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ফ্রেইট চার্জ কমে যাচ্ছে। যুদ্ধের বিরূপ প্রভাবে গত এক বছরেই বাল্ক ক্যারিয়ার এবং কনটেইনারশিপ- উভয় ধরনের জাহাজে ফ্রেইট চার্জ বৈশ্বিকভাবে কমে গেছে প্রায় ৫০ শতাংশের বেশি। এমন পরিস্থিতিতে শিপিং খাতে কেএসআরএম গ্রুপের নতুন বিনিয়োগ খুবই ইতিবাচক।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ টিবিএসকে বলেন, শিল্প গ্রুপটির সেলফ কার্গো রয়েছে। নিজস্ব জাহাজে পণ্য পরিবহন হওয়ায় ফ্রেইট চার্জ বাবদ অর্থ বিদেশি কোম্পানীর কাছে যাওয়ার সুযোগ নেই। কেএসআরএম গ্রুপের নতুন বিনিয়োগকে আমরা স্বাগত জানাই।