নতুন বাজেটে উপেক্ষিত পরিবহন যোগাযোগ অবকাঠামো প্রকল্পের বাস্তবায়ন
গতকাল বৃহস্পতিবার (১ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
আগামী অর্থবছরে পরিবহন যোগাযোগ অবকাঠামো প্রকল্পের উদ্বোধনের বিষয়ে ঘোষণা দিলেও কয়েকটি প্রকল্প বিষয়ে কোনো আশার কথা শোনাতে পারেনি তিনি।
যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সেতু, দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণ, পদ্মা রেলসেতুর বাস্তবায়ন নিয়ে কোনো আশার কথা নেই অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে। রেলওয়ের এই তিনটি প্রকল্পই সরকারের অগ্রাধিকার পাওয়া ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত প্রকল্প।
এদিকে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের হযরত শহাজালাল বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও অংশ আগামী সেপ্টেম্বরে এবং অক্টোবরে শাহজালাল বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের সফট ওপেনিং হবে বলে বাজেট বক্তব্যে জানান অর্থমন্ত্রী। এছাড়া কর্ণফুলী টানেলও শীঘ্রই উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে জানান তিনি।
বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী সড়ক, সেতু, রেল, নৌ ও আকাশপথের বর্তমান কাযক্রম সময়মতো বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন।
তবে পর্যালোচনায় দেখা গেছে, প্রতি অর্থবছরে মেগা প্রকল্পগুলোতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, তারপরও সক্ষমতার অভাবে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। প্রায় সব প্রকল্পই এক বা একাধিকবার মেয়াদ বাড়িয়ে বাস্তবায়ন করতে হচ্ছে।
বাজেট বক্তব্যে ২০২৫ সালে মেট্রোরেল বা এমআরটি-৬ প্রকল্পের উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণ কাজ শেষ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
বাজেট বক্তব্যে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর, মোংলা বন্দরে টার্মিনাল, নতুন জেটি নির্মাণ এবং পায়রা বন্দরের আধুনিকায়নের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে বে-কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণের কোন ইঙ্গিত দেননি অর্থমন্ত্রী।
পরিবহন ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, "আমাদের দেশে অবকাঠামো খাতের প্রকল্প নেওয়া হয় কোনো ধরণের পরিকল্পনা ছাড়া এবং যেনতেনভাবে সমীক্ষার মাধ্যমে। এতে বাস্তবায়ন পর্যায়ে নতুন নতুন সমস্যা তৈরি হয়, নতুন নতুন অঙ্গ যোগ হয়, আর ব্যয় বেড়ে যায়। সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারার কারণে ব্যয় বাড়ে। দেখা যায়, অর্থবছরের ১০ মাসে বরাদ্দের অর্ধেকও ব্যয় হয় না। শেষ দুই মাসে গুণগত মান ছাড় দিয়ে যেনতেনভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়।"
আরো নতুন মেগা প্রকল্প আসছে
আগামী অর্থবছরে আরো বেশকিছু মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের ইঙ্গিত দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
এর একটি প্রকল্প হলো, ২৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ইস্টার্ন রিফাইনারী ইউনিট (ইআরএল)-২ প্রকল্পের ইন্সটলেশন।
একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারীর পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ মেট্রিক টন থেকে ৪৫ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন।
এছাড়া ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা হতে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরো ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। এছাড়া পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে বলে জানান তিনি।
স্বাস্থ্য খাতে সিলেট ও চট্টগ্রামে দুটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন এবং প্রাথমিক স্কুল ফিডিং প্রোগ্রাম (২০২৩-২৬) প্রণয়নের কাজ বলছে বলে বাজেট বক্তব্যে উল্লেখ রয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ঢাকা শহরকে পরিবেষ্টনকারী ৫টি নদী (বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু, তুরাগ ও ধলেশ্বরী) ও খালগুলোকে দূষণ ও অবৈধ দখলমুক্ত করতে একটি আমব্রেলা ইনভেস্টমেন্ট প্রগ্রামের নকশা প্রণয়ন করা হচ্ছে।
এছাড়া বাজেট বক্তব্য থেকে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকার পাশ্ববর্তী এলাকায় ৪টি স্যাটেলাইট সিটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।