অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ভারসাম্যপূর্ণ সতর্ক মুদ্রানীতি প্রণয়নের পরামর্শ
ডলারের সংকট ও দাম বৃদ্ধি, ধারাবাহিক রিজার্ভের পতন এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ে বেশ চাপে রয়েছে দেশের অর্থনীতি। এই চাপ মোকাবেলায় ভারসাম্যমূলক সতর্ক মুদ্রনীতি প্রণয়নের পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (ইডি) পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
আগামী মুদ্রানীতির ওপর মতামত নিতে রোববার (২১ মে) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে নির্বাহী পরিচালকদের একটি সভার আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
জানা যায়, সভায় বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় রাজস্ব নীতির সঙ্গে সমন্বয় করে ভারসাম্যমূলক সতর্ক মুদ্রানীতি প্রণয়নের ওপর জোর দেন নির্বাহী পরিচালকরা।
সভায় একজন নির্বাহী পরিচালক তার মতামতে বলেন, দেশে বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদন পরিমাণ বাড়ায় আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি খুব একটা বাড়বে না। ফলে বাজেটে প্রক্ষেপিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করতে আগামীতে ভারসাম্যমূলক মুদ্রানীতিই অধিক ফলপ্রসু হবে।
আরেকজন নির্বাহী পরিচালক বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এখনো থামেনি। এর ফলে আগামীতেও বৈশ্বিক নানান চ্যালেঞ্জ থাকবে। এগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে মুদ্রানীতি প্রণয়ণ করা জরুরি।
সভায় মুদ্রানীতি বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, কোভিড থেকে শুরু করে ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণে যত ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে, তার সবগুলোই খুব ভালোভাবে মোকাবেলা করেছে বাংলাদেশ। কোনোটিই তীব্র প্রভাব ফেলতে পারেনি দেশের অর্থনীতিতে।
জানতে চাইলে বৈঠকে উপস্থিত একজন নির্বাহী পরিচালক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আগেও রাজস্ব নীতি এবং মুদ্রানীতি সমন্বয় করে আমরা জাতীয় অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। এবারও সেরকম পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থাৎ, মুদ্রানীতি এমনভাবে প্রণয়ন করা হবে, যাতে কাঙ্খিত জিডিপি প্রবৃদ্ধিও অর্জন হয়, আবার মূল্যস্ফীতিও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা যায়। এ কারণে মুদ্রানীতির ভঙ্গিমা ভারসাম্যমূলক ও সতর্ক করা হবে।"
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের শর্তগুলোর অন্যতম হলো, ব্যাংকের সুদহার নির্দিষ্ট করে না রেখে করিডর প্রথা চালু করে তা বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া।
একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি কাঠামোয় সুদহারের করিডোর প্রথা চালুর সুপারিশ করেছে দাতা সংস্থাটি। সে অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরের প্রথম ষান্মাসিক হতে মুদ্রানীতিতে সুদহারের করিডর প্রথা চালু করা হচ্ছে। এরমধ্যে একটা হবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর গ্রাহকদের বিতরণ করা ঋণের সুদহার, যেটাকে রেফারেন্স রেটসহ করিডর বলা হবে।
অপরটি হবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে অর্থ ধার দেওয়া-নেওয়ার সুদহার। এটাকে বলা হবে পলিসি রেটসহ করিডর, যা মুদ্রানীতি পরিচালনার টুলস হিসেবে ব্যবহার হবে।